তদন্ত না করেই খুবি শিক্ষিকাকে যৌন নির্যাতনে অভিযুক্ত শিক্ষককে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি
তদন্ত না করেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ছোটন দেবনাথের বিরুদ্ধে একই বিভাগের শিক্ষিকাকে যৌন নির্যাতন করার অভিযোগটির সত্যতা পায়নি বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটি।
কমিটি বলছে, ঘটনাটি ক্যাম্পাসের বাইরের হওয়ায় যৌন হয়রানির অভিযোগটি তারা বিবেচনাই করেনি।
ফলে অভিযুক্ত শিক্ষককে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তার সাময়িক বরখাস্তাদেশও প্রত্যাহার করে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক খান গোলাম কুদ্দুস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, "অভিযুক্ত শিক্ষক ছোটন দেবনাথের বিরুদ্ধে ৩.১ (গ) ও ৩.১ (ঘ) ধারায় আনীত অভিযোগ তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণে তাকে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।"
"তবে আইনের ৩.১ (ট) ধারায় আনীত অভিযোগ বিচারের আওতাবহির্ভূত বিধায় অভিযোগ বিবেচনা করা হয়নি।"
তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সাপেক্ষে সিন্ডিকেটের সভায় ওই শিক্ষককে অভিযোগ থেকে দায়মুক্ত করা হয়।
এ অবস্থায় ওই নারী শিক্ষক চাইলে আদালতে গিয়ে আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন বলে জানান তিনি।
রেজিস্টারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট ওই নারী শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন প্রতিরোধ কেন্দ্রে অভিযোগ দাখিল করেন। তাতে বলা হয় ২০২১ সালে ২৬ জানুয়ারি ওই নারী শিক্ষিকা ছোটন দেবনাথের বাসায় গিয়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হন। পরে ছোটন দেবনাথ বিভিন্ন সময়ে তাকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাতে থাকে।
'উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ নীতিমালা, ২০০৮' মোতাবেক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্র অভিযোগটি আমলে নিয়ে ঘটনাটির তদন্ত শুরু করে।
৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়ে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সাপেক্ষে শাস্তির সুপারিশ করার কথা থাকলেও দীর্ঘ ১০ মাস পর কেন্দ্র তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ২১৯তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ বিষয়ে ছোটন দেবনাথ বলেন, "আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি ষড়যন্ত্রমূলক এবং সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন। তদন্তেও অভিযোগটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। মূলত আমাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন ও হেনস্তা করার হীন উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে এই বানোয়াট অভিযোগটি দায়ের করা হয়েছিল। অভিযোগটি আমলে নেওয়ার কারণে এবং তদন্ত কমিটি বিচারকার্য দীর্ঘায়িত করার ফলে আমি মানসিক, সামাজিক, পেশাগত ও আর্থিকভাবে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।"
তিনি আরও বলেন, "অভিযোগকারী আমার বিরুদ্ধে লাগামহীন মিথ্যাচার করে গেলেও কমিটির কাছ থেকে আমি এর কোনো প্রতিকার পাইনি। যার ফলে আমি ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি।"
তবে ১০ মাস পর অভিযুক্তকে সব দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অভিযোগকারী নারী শিক্ষিকা।
তিনি বলেন, "এতদিন লড়ছিলাম আমার সাথে ঘটে যাওয়া জঘন্য এক অন্যায়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু বিচার চাইতে গিয়ে এবার নতুন করে আরেক প্রহসনের শিকার হলাম। আমার মূল যে অভিযোগ ছিল ৩.১(ট) ধারায়, অর্থাৎ যৌন হয়রানির। সেই বিষয়টি তারা আমলেই নিল না। আর আমাকে জানালো ১০ মাস পর। যে ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির তদন্তের এখতিয়ারভুক্ত নয় বলা হচ্ছে, ওই বিষয়ে সকল ধরনের তদন্ত কেন করা হলো? ঘটনাস্থলে যাওয়া, সাক্ষীদের এ বিষয়ে প্রশ্ন করা, অভিযুক্ত ও অভিযোগকারীদের মুখোমুখি করে কল রেকর্ডিং শোনা হলো কেন?"
তিনি দাবি করেন, "যেসব তথ্য, প্রমাণ, নথিপত্র অভিযোগকারীর পক্ষে যায় সেগুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। যেসব তথ্য অভিযুক্তের পক্ষে যায় সেগুলোই গোঁজামিল দিয়ে সামনে এনে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।"
তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন প্রতিরোধ কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক মোসা. তাসলিমা খাতুন বলেন, "কোনো ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে সংঘটিত হলে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী তা বিশ্ববিদ্যালয়ের এখতিয়ার বহির্ভূত। ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিবাদীর প্রমাণাদি এবং সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে অভিযোগ তদন্ত ও বিশ্লেষণের জন্য ১০ মাস সময় লেগে গেছে।"
তবে যৌন হয়রানির অভিযোগটি যে বিচারের আওতাবহির্ভূত এ বিষয়টি জানাতে কেন ১০ মাস সময় লাগল, এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি নিপীড়ন কেন্দ্রের সভাপতি।