নদ-নদীর পানি ধীরগতিতে কমছে, তবে উন্নতি নেই নেত্রকোনার বন্যা পরিস্থিতির
নেত্রকোনার প্রধান প্রধান নদীগুলোর পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও দুর্গাপুর উপজেলা ছাড়া আর কোথায়ও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। উপরন্তু দিনদিনই বাড়ছে বানভাসি মানুষের সংখ্যা। জেলা বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্যমতে, ১০ উপজেলার ৭৫টি ইউনিয়নই এখন বন্যাকবলিত। প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষ এখনও পানিবন্দী। ১ লাখ ১৫ হাজার মানুষ বাস করছেন ৩৪২টি আশ্রয়কেন্দ্রে।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত মঙ্গলবারের সর্বশেষ রেকর্ডের বরাতে জানিয়েছেন, সোমেশ্বরী, কংস ও ধনু নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে কমার গতি খুবই ধীর।
তিনি জানান, কলমাকান্দা পয়েন্টে সোমেশ্বরী নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার, জারিয়া পয়েন্টে কংসের পানি বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার এবং খালিয়াজুরী পয়েন্টে ধনু নদীর পানি বিপদসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে দুর্গাপুর সদর এবং বিজয়পুর পয়েন্টে সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার অনেক নিচে চলে এসেছে।
জেলা প্রশাসনের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, জেলার ১০ উপজেলার ৮৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭৫টি ইউনিয়নই বন্যা কবলিত হয়েছে। এরমধ্যে খালিয়াজুরীতে ৬টি, কলমাকান্দায় ৮টি, দুর্গাপুরে ৭টি, মোহনগঞ্জে ৭টি, নেত্রকোনা সদরে ৮টি, বারহাট্টার ৭টি, কেন্দুয়ার ১৩টি, মদনের ৮টি, পূর্বধলার ৪টি ও আটপাড়ার ৭টি ইউনিয়ন রয়েছে। কোনো কোনো উপজেলার ৯৫ ভাগ এলাকাই পানিতে ডুবে গেছে। ১ লাখ ১৫ হাজার মানুষ মোট ৩৪২টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এর বাইরে পানিবন্দী অবস্থায় বাড়িতে আছেন ১ লাখ ৯ হাজার ৫৯০টি পরিবারের আরও সোয়া চার লক্ষাধিক লোক। যারা বাড়িতে অবস্থান করছেন, তারা গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি এবং কিছুদিন আগে তোলা বোরো ধান নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন। অনেকের ঘরের ধানের মাচাও তলিয়ে গেছে।
এদিকে বন্যা এবং পাহাড়ী ঢলের কারণে বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে গেছে ১২টি বৈদ্যুতিক খুঁটি। ঝুঁকির কারণে ৩০০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। এজন্যে দুর্গত এলাকার অন্তত ১৭ হাজার পরিবার বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। রাতে ওই এলাকাগুলো ভূতুড়ে নগরীতে পরিণত হচ্ছে। ফোনে চার্জ দিতে না পারায় বন্ধ হয়ে গেছে অনেকের যোগাযোগ। এদিকে নেত্রকোনা-কলমাকান্দা, নেত্রকোনা-মোহনগঞ্জ এবং নেত্রকোনা-মদনসহ জেলার গ্রামীণ জনপদের বেশিরভাগ সড়ক এবং রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ।
হাওরাঞ্চলে ঝড়ো বাতাসের কারণে খালিয়াজুরী, মোহনগঞ্জ ও মদনের হাওর তীরবর্তী গ্রামগুলোতে ঢেউয়ের ভাঙন দেখা দিয়েছে। অনেকে বাঁশ, খড় প্রভৃতির সাহায্যে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছেন। নৌকার অভাবে অনেকে হাটেবাজারে যেতে পারছেন না। নৌকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দিনমজুর ও খেটেখাওয়া লোকজন বেকার হয়ে পড়ায় অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানিয়েছেন, জেলার ১০ উপজেলার জন্য এ পর্যন্ত ৩৩৩ মেট্রিক টন চাল ও ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার পর্যন্ত ২১২ মেট্রিক টন চাল, ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ২ হাজার ৬৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।