উৎপাদন মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের দাবি কৃষকদের
দেশে উৎপাদন মৌসুম শুরু হওয়ায় কৃষকরা পেঁয়াজ তুলতে শুরু করেছেন। ঠিক এ সময়ে ভারত তাদের রপ্তানি শুরু করায় পেঁয়াজ আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে পেঁয়াজ চাষীদের মনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। মৌসুমের এই সময়ে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ করার দাবি তুলেছেন তারা।
বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে কৃষকরা সরকারের কাছে এ দাবি করেন।
মানবন্ধনে দাবি করা হয়, পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা এ বছর বেশি আবাদ করেছেন। সেখান থেকে প্রায় ২২ লাখ টন পেঁয়াজ পাওয়া যাবে। দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ টন। কৃষকরা যখন পেঁয়াজ তুলতে শুরু করেছেন, ঠিক তখনই ভারত থেকে কম দামে এ কৃষি পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। এতে বাজারে পেঁয়াজের দাম নেমেছে ৪০-৫০ টাকায়। কৃষকরা প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০ টাকা ধরে বিক্রি করতে হিমশিম খাচ্ছেন। অথচ পাবনা, ফরিদপুর, রাজশাহীসহ সারা দেশে পেঁয়াজের ব্যাপক ফলন হয়েছে।
কৃষকদের পক্ষ থেকে মো. সিরাজুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, 'কৃষক ভালো দামের আশায় বেশি করে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। কিন্তু এখন ফল হচ্ছে উল্টো। কৃষকরা ২০ টাকাতেও পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছে না। কারণ কম দামে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'সরকারের রপ্তানি লক্ষমাত্রার বিপরীতে বেশি পেঁয়াজ চাষ করে কৃষক যখন দাম পাবেন না, তখন তারা নিরুৎসাহিত হবেন। সারা দেশের কৃষকদের পক্ষ থেকে অন্তত মৌসুমের এ সময়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার দাবি করছি।'
উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ায় ঢাকার বাজারে এর দাম ৪০-৫০ টাকায় নেমেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষকরা যদি ২০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারেন, তাহলে তাদের লাভ হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, কৃষকদের এবার পেঁয়াজ উৎপাদনে কেজিপ্রতি খরচ হয়েছে ১৬-১৭ টাকা। কৃষক যেন লোকসানে না পড়েন, সেজন্য পেঁয়াজ আমদানির ওপর ৩০-৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন। একই সঙ্গে ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সুরক্ষা মৌসুম হিসেবে প্রতিবছর এই শুল্ক আরোপ করা যেতে পারে বলেও সুপারিশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
মানববন্ধনে কৃষকরা দাবি করেন, সরকার স্থানীয় উৎপাদন দিয়ে যেভাবে দেশের পুরো চাহিদা মেটানো এবং রপ্তানির চিন্তা করছে, সেটি পূরণের জন্য কৃষকদের ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে।