নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কে কাজ শেষ হওয়ার আগেই ফাটল
নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের চলমান কাজ শেষ হওয়ার আগেই প্রায় তিনফুট দেবে গেছে।
জেলার আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা রেলওয়ে স্টেশনের উত্তর পাশে শনিবার (২৫ জুন) সকালে এ সড়কটির অর্ধেক অংশ নিয়ে প্রায় দেড়শ ফুট জায়গা জুড়ে দেবে গেছে।
নিম্নমানের কাজের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার সড়কটি আরো শক্ত ও মজবুত ভাবে তৈরির দাবি তাদের।
আঞ্চলিক মহাসড়কটির কাজ সম্পূর্ণ হলে একদিকে যেমন যোগাযোগ বাঁধা কাটবে, তেমনি অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
নওগাঁ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ-নাটোর সাড়ে ৪৮কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কটির কাজ দু'ধাপে সম্পূর্ণ হচ্ছে। ২০০৫ সালে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ৯৮ কোটি টাকার প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদন দেয়। কিন্তু পরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সীমিত আকারে ৫০ কোটি টাকার অনুমোদন দেয়।
ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া নাটোরের নলডাঙ্গায় নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। ওই টাকায় প্রথম ধাপে ২০০৭ সালে নওগাঁর ঢাকার মোড় থেকে নাটোরের নলডাঙ্গা পর্যন্ত মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়। যেখানে নওগাঁর অংশে ২৬ কিলোমিটারের মধ্যে সাড়ে ৭ কিলোমিটার এবং নাটোর অংশে সাড়ে ২২ কিলোমিটারের মধ্যে ১৬ কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণ করা হয়।
নতুন করে অর্থায়ন না হওয়ায় ২৩ কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণ হওয়ার পর হাইড্রোলজি সমীক্ষার নামে বন্ধ হয়ে যায় সড়কটির নির্মাণ কাজ। এতে বাকি সাড়ে ২৫ কিলোমিটার সড়ক গোচারণভূমিতে পরিণত হয়েছিল।
এরপর ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে নওগাঁ-রানীনগর-আত্রাই-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের নির্মাণ কাজ একনেকে অনুমোদনের পর ৮টি সেতু ও ১৫টি ছোট বড় কার্লভার্টসহ সাড়ে ২৫ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২০১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। পুরো প্রকল্পটিকে ৪টি ভাগে ভাগ করে ৪টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
মহাসড়কটির আত্রাই উপজেলার শাহাগোলা নামক স্থানে প্যালাসাইডসহ সড়কের উত্তর পাশে দেবে গেছে। গত দুইদিন আগে ফাটল দেখা দিলেও মুল সড়ক থেকে আড়াই থেকে তিনফুট দেবে গিয়ে প্রায় দেড়শ ফুট জায়গায় বড় ধরণের ফাটল দেখা দেওয়ায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। যানবাহনে চলাচলের জন্য পাশের অংশে ইট দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হঠাৎ করে সড়কটি দেবে যাওয়ায় স্থানীয়রা এক নজর দেখার জন্য ভিড় করছেন।
শাহাগোলা গ্রামের আব্দুল আলিম অভিযোগ করে বলেন, সে সময় কর্তৃপক্ষরা মাটি পরীক্ষা করে জেনে-বুঝে সড়কটি তৈরি করা হয়েছিল। সড়ক নির্মাণের সময় পাশ থেকে অপরিকল্পিক ভাবে মাটি কেটে গভীর করা হয়েছিল।
"সড়কের নিচে গোড়ায় মাটি ধরে রাখার মতো কোন ব্যবস্থা না থাকায় নিচের মাটি সরে গেলেই পুরো সড়কটিই ভেঙ্গে খালের মধ্যে চলে যাবে। কাজের অনিয়মের কারণে সড়কটি হঠাৎ করেই ধ্বসে গেছে। তা ছাড়াতো এমনটা হওয়ার কথা না।"
নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজেদুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে মনে হয়েছে এটা একটা বিশেষ ধরণের ফল্ট (দোষ/ত্রুটি)।
"কী কারণে এমন টা হয়েছে আমরা তা দেখবো। ইতোমধ্যেই দেবে যাওয়া সড়কের ওই অংশটুকু পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে।"
"স্থানীয়দের কাছ থেকে জেনেছি সড়কের নিচের অংশের মাটির নরম ছিল। আর নিচের অংশের মাটি সরে যাওয়ায় মূল সড়কটি দেবে গেছে।"
তবে কাজের কোন অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।