স্ত্রীকে অপহরণ করান মিলিয়নিয়ার, পরিকল্পনা ভেস্তে ডুবে নিহত অপহরণকারীরা
১৪ বছর বয়সী মেয়ে এবং প্রতিবেশীর সাথে ঘরে ছিলেন স্ক্যান্ডা হ্যান্ডলি। সেই সময় নীল ইউনিফর্ম পরে বিক্রেতার ছদ্মবেশে দুই যুবক এসে উপস্থিত হয়।স্ক্যান্ডাকে তারা কারপেট পরিষ্কার করার যন্ত্র ব্যবহার করে দেখাতে চায়। কিন্তু তিনি মানা করলে দুই যুবক অস্ত্র বের করে জোর করে ঘরে প্রবেশ করে।
মেয়ে এবং প্রতিবেশীকে বেধে রেখে স্ক্যান্ডা হ্যান্ডলিকে ভ্যান গাড়িতে তুলে নেয় অপহরণকারীরা। অপহরণকারীদের নিয়োগ দিয়েছিলেন তার স্বামী লরেন্স মাইকেল হ্যান্ডলি। বেশ কিছু সময় ধরেই আলাদা থাকছিলেন তারা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, লস অ্যাঞ্জেলস থেকে স্ক্যান্ডাকে তুলে নিয়ে উডভিলে লরেন্স হ্যান্ডলির আস্তানায় নিয়ে আসা হবে। তবে, পরবর্তীতে স্ত্রীকে নিয়ে লরেন্সের পরিকল্পনা কী ছিল তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। লরেন্সের আইনজীবীর দাবী অনুসারে, স্ত্রীর মন জয় করতে নাটকীয়ভাবে তাকে অপহরণকারীদের হাত থেকে 'উদ্ধার' করে নায়ক হতে চেয়েছিলেন তিনি।
২০১৭ সালের ৬ আগস্ট ভ্যান গাড়ি নিয়ে অপহরণকারীরা যখন পালাচ্ছিলো তখনই গাড়ির ওপর নজর পড়ে পুলিশের। ভ্যানের ভেতর ঝাঁকুনি দেখে তাদের সন্দেহ হয়। পুলিশ গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করে।
দুই অপহরণকারী সিলভেস্টার ব্রেসি এবং আর্সেনিও হায়নেস পালাতে গিয়ে মূল রাস্তা ছেড়ে নুড়ি পাথরের রাস্তায় গিয়ে ওঠে। কিন্তু রাস্তাটির সামনে আর এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিলো না। সিলভেস্টার এবং আর্সেনিও গাড়ি থেকে নেমে পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে খালের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ডুবে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন তারা।
সোমবার প্রায় চার বছর পর আদালতের সামনে অপরাধ স্বীকার করেন ৫৩ বছর বয়সী স্বামী লরেন্স হ্যান্ডলি। তিন অভিযোগে ১৫ থেকে ৩৫ বছরের জন্য কারাদণ্ড হতে পারে সাবেক এই সফল ব্যবসায়ীর। মামলার রায় ঘোষণার তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
সফটওয়্যার এবং ভিটামিন সাপ্লিমেন্টের ব্যবসার মাধ্যমে সাফল্য অর্জন করেছিলেন লরেন্স। কয়েকটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রের শীর্ষ নির্বাহীর দায়িত্বও পালন করেন তিনি। ২০১৫ সালে ২১ মিলিয়ন ডলারে ব্যবসা বিক্রি করেন তিনি।
এরপরেই দাম্পত্য জীবনে শুরু হয় চূড়ান্ত অশান্তি। ২০০৬ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন এই দম্পতি। ২০১৭ সালে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করা হয়।
স্বামী-স্ত্রী উভয়েই পরস্পরের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনেন। লরেন্সের অভিযোগ অনুযায়ী, স্ত্রী তাকে হত্যার জন্য সুপারি কিলার নিয়োগের চেষ্টা করে। অন্যদিকে, স্ত্রীর অভিযোগ, স্বামী তার ফোন ট্র্যাক করাসহ কম্পিউটারে স্পাইওয়্যার ইন্সটলের চেষ্টা করেন।
তবে, মামলার নথিতে দেখা যায় যে, অপহরণের আগে লরেন্স তার স্ত্রীকে হুমকি দিয়ে একাধিক বার্তা পাঠায়।
লরেন্স হ্যান্ডলির আইনজীবীর মতে, তার মক্কেল দীর্ঘদিন ধরেই মাদকাসক্ত। তিনি, জানান স্ত্রীকে অপহরণের পরিকল্পনাকালে লরেন্স মেথ এবং কোকেইনে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। স্ত্রীর মন জয় করে তাকে ফিরে পেতেই নাকি নাটকীয়ভাবে তাকে অপহরণকারীদের হাত থেকে 'উদ্ধার' করার পরিকল্পনা করেন লরেন্স।
"অবশ্যই এটা যুক্তিসংগত নয়। কিন্তু মেথ এবং কোকেইনে আসক্ত অবস্থায় সেটাই তার কাছে যুক্তিসংগত মনে হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে," বলেন তার আইনজীবী।
৫০ বছর বয়সী স্ক্যান্ডা হ্যান্ডলি বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে বিলেন, "আমি আশা করি আদালত তাকে ৩৫ বছরের কারাদণ্ড দিবে। কেননা, সে বের হয়ে আসলে আমার জীবন, মুক্তভাবে চলাফেরা সব শেষ হয়ে যাবে।"
সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস