ছয় বছর পর টায়ারের বন্দিদশা থেকে মুক্ত কুমির
ছয় বছর যাবত গলায় মরণফাঁদের মতো আটকে ছিল একটি মোটরসাইকেলের টায়ার। কুমিরের মতো একটি সরীসৃপ শ্রেণীর প্রাণীর জন্য এটি যন্ত্রণাদায়কই বটে! কিন্তু সম্প্রতি একজন পশুপ্রেমী মানুষের পদক্ষেপে এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছে ইন্দোনেশিয়ার কুমিরটি।
চার মিটার (১৩.১২ ফুট) লম্বা কুমিরটির এই দুর্দশা দেখে মায়া জাগে ইন্দোনেশিয়ার পালু শহরের কিছু বাসিন্দার মনে। তারা এই ভেবে ভীত ছিলেন যে, কুমিরটি দিন দিন বেড়ে ওঠায় টায়ারের কারণে গলায় ফাঁস লেগে যাবে এবং এটি দমবন্ধ হয়ে মারা যাবে।
কিন্তু এটিকে ধরা সহজ ছিল না। এক পর্যায়ে জনৈক অস্ট্রেলিয়ান ক্রোকোডাইল র্যাং লার চেষ্টা করেন কুমিরের গলার টায়ার খুলতে; কিন্তু তিনিও ব্যর্থ হন।
স্থানীয় বাসিন্দা টিলি (৩৫) বলেন, "আমি নিজেই কুমিরটিকে ধরি। আমি মানুষের কাছে সাহায্য চাইছিলাম কিন্তু সবাই খুব ভীত ছিল।"
তবে হাল ছেড়ে দেননি তিলি। কুমির ধরার জন্য কাঠের গুড়ির সাথে রশি বেধে একটি সাধারণ ফাঁদ তৈরি করেন তিনি। সাথে টোপ হিসেবে জীবিত হাস-মুরগি ব্যবহার করেন সেখানে।
কিন্তু তিন সপ্তাহ ধরে সরীসৃপটির গতিবিধি খেয়াল রাখার পরেও এটি ফাঁদ থেকে দুইবার পালিয়ে যায় এবং তৃতীয়বারের চেষ্টায় সুলাওয়েসি দ্বীপ থেকে এটিকে ধরা সম্ভব হয়।
কুমিরের গলা থেকে টায়ার খুলে নেওয়ার পর এটির সাথে দাঁড়িয়ে ছবিতে পোজ দিচ্ছিলেন তিলি। ইন্দোনেশিয়ার বহু অধিবাসীর মতোই একক নামের অধিকারী তিলি বলেন, "অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিল যে আমি কুমিরটি ধরতে পারবো না। তারা ভেবেছিল আমি বিষয়টি অত গুরুত্ব দিচ্ছি না।"
২০২০ সালে একবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কুমিরটি উদ্ধারের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে। কিন্তু তিলি জানিয়েছেন, পুরস্কার পাওয়া তার মুখ্য উদ্দেশ্য নয়।
তিলি বলেন, "আমি প্রাণীদের কষ্ট সহ্য করতে পারি না। এমনকি যদি সাপও হয়, তাও আমি সাহায্য করবো।" আরও জানালেন, প্রাণী উদ্ধারের কাজগুলো তিনি নিজে নিজেই শিখেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা কুমিরটির নাম দিয়েছে 'বুয়ায়া কালুং বান', যার অর্থ 'গলায় টায়ারওয়ালা কুমির'। গেল সোমবার সন্ধ্যায় কুমিরটিকে আবার নদীতে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সূত্র: সিএনএন