এক বছরে হতদরিদ্রদের আমানত কমেছে ১০০ কোটি টাকার বেশি
করোনার প্রভাবে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিঘ্নিত হওয়ায় ব্যাংকে থাকা সঞ্চয় তুলে ফেলছেন হতদরিদ্ররা। বিনা মাসুলে ১০ টাকায় একাউন্ট খোলার সুবিধা থাকলেও এসব একাউন্টে এক বছরে আমানত কমেছে ১০৪ কোটি টাকা।
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত নো-ফ্রিল অ্যাকাউন্টের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন (জানুয়ারি-মার্চ ২০২১) থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এতে দেখা যায়, মার্চে এসে হতদরিদ্রদের একাউন্ট সংখ্যা গেল বছরের মার্চের চেয়ে প্রায় ৫ লাখ বেড়ে ৩২ লাখ ছাড়িয়েছে। তবে এসব একাউন্টে একই সময়ে আমানত ১০৪ কোটি টাকা (৩৪%) কমে দাঁড়িয়েছে ২১৮ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিআইডিএস এর গবেষণা পরিচালক ড. নাজনীন আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, যেহেতু একাউন্ট বেড়েছে কিন্তু আমানত কমেছে তাতে বুঝা যাচ্ছে নিজস্ব প্রয়োজন মেটাতে একটি অংশ তাদের সঞ্চয় ভেঙ্গেছেন।
করোনায় আয় কমে যাওয়াই এর প্রধান কারণ বলে তিনি মনে করেন। তবে সরকারের কাছ থেকে সহায়তা নেয়ার জন্য অনেকে নতুন একাউন্ট খুলে থাকতে পারেন। সে কারণেই একাউন্ট সংখ্যা বেড়েছে বলে এই গবেষকের অভিমত।
হতদরিদ্র ছাড়াও কৃষক, মুক্তিযোদ্ধা, স্কুল শিক্ষার্থী, গার্মেন্টস শ্রমিক, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীরা ১০/৫০/১০০ টাকার একাউন্ট ব্যবহার করে থাকেন। এসব একাউন্ট নন-ফ্রিল একাউন্ট নামেও পরিচিত। এসব একাউন্টের এক-তৃতীয়াংশ এবং প্রায় অর্ধেক আমানত রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের।
মার্চ শেষে নন-ফ্রিল একাউন্টে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২,৩৮১ কোটি টাকা, যা গেল বছরের মার্চের চেয়ে ৪ কোটি টাকা কম। এসব একাউন্টে কৃষকদের ৪২২ কোটি, মুক্তিযোদ্ধাদের ৫৬০ কোটি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের ৬৮৭ কোটি, গার্মেন্টস শ্রমিকদের ১৭৫ কোটি টাকা ছাড়াও অন্যান্যদের বাকি টাকা আমানত আছে।
পল্লী অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে ২০০ কোটি টাকার রিফাইন্যান্স স্কিমের অর্থ প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের দেয়া হয়। মার্চে গেল বছরের মার্চের তুলনায় ৩৭.৮৪ শতাংশ কম ঋণ বিতরণ হয়েছে।
মহামারিতে সুবিধাবঞ্চিত জনগণের জীবিকা নির্বাহে বিশেষ করে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের কাছে সরকারী ভর্তুকি/মাইনে বিতরণে নো-ফ্রিল অ্যাকাউন্টগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তীব্র সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও, নো-ফ্রিল অ্যাকাউন্টের সংখ্যার ৯.৯৮ শতাংশ বার্ষিক বৃদ্ধি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দেশের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিতে একটি দৃশ্যমান অগ্রগতিই নির্দেশ করে।