করোনাকালে বেনাপোল কাস্টমসের রাজস্ব ঘাটতি ৩,৪৫৮ কোটি টাকা
দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল কাস্টমস হাউজে গত অর্থবছর (২০১৯-২০২০) রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তিন হাজার ৪৫৮ কোটি ১২ লাখ টাকা ঘাটতি হয়েছে।
বছরের শুরু থেকেই বেনাপোল কাস্টম ছিল রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে। তার উপর করোনাভাইরাসের কারণে এ পথে ভারতের সঙ্গে টানা আড়াই মাস আমদানি বন্ধ থাকায় রাজস্ব আহরণ অর্ধেকে নেমে আসে।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের ওপর ছয় হাজার ২৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
পরবর্তী সময়ে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বেধে দেওয়া হয় পাঁচ হাজার ৯৯৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকায়। এ সময় লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আদায় করে মাত্র দুই হাজার ৫৩৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে তিন হাজার ৪৫৮ কোটি ১২ লাখ টাকা। এ সময় ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৮ লাখ টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য।
এর আগেও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে এক হাজার ১৪৫ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি ছিল। ওই অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল পাঁচ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। আদায় হয়েছিল চার হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার হাজার ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আদায় হয়েছিল চার হাজার ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। সেবারও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার ড. নিয়ামুল ইসলাম জানান, করোনার কারণে প্রথমত আড়াই মাস ধরে আমদানি বন্ধ ছিল। এ ছাড়া পণ্য খালাসে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বেড়ে যাওয়ায় কিছু ব্যবসায়ী এ বন্দর দিয়ে আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। আবার একই সঙ্গে উচ্চশুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি কম হওয়ার কারণে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, পণ্য ছাড়করণের ক্ষেত্রে বৈধ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না হওয়া আমদানি কমে যাওয়া একটি কারণ। এতে রাজস্ব আদায়ে দিন দিন ঘাটতি হচ্ছে। গেল বছরে শুরু থেকেই রাজস্ব ঘাটতি হয়ে ছিল। চাহিদা অনুপাতে বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়া এবং উচ্চ শুল্ক হারের পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সহ-সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান জানান, আড়াই মাস এ পথে আমদানি বন্ধ ছিল। এ কারণে রাজস্ব ঘাটতি বেশি হয়েছে। এ পথে রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন বাড়াতে হবে। এ ছাড়া বন্দরে বার বার রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে অনেক ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন। বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় তারা এ বন্দর ছেড়েছেন।
প্রসঙ্গত, যোগোযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে দেশে স্থলপথে যে পণ্য আমদানি হয় তার ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে। প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। যা থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসতো। এ পথে আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে শিল্পকারখানার কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, কেমিক্যাল, অক্সিজেন ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য জাতীয় পণ্য।