জিনোম সিকোয়েন্সে ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প
জিন গবেষণায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মেশিন আমদানির মাধ্যমে সেন্টার ফর নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং অ্যান্ড অ্যানালাইটিকস স্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য ৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
সেন্টারটি স্থাপন হবে সাভারের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজিতে (এনআইবি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, কোভিড ভাইরাসসহ সংক্রামক অনুজীব এবং সেগুলোর বিভিন্ন ভ্যারিয়েশনের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স করা সম্ভব হবে।
এছাড়াও নিখুঁতভাবে বিভিন্ন অসুখের কার্যকারণ চিহ্নিত করা, ওষুধ, রোগ নির্ণয়ের কীট উদ্ভাবন করা যাবে। অনুজীবের জিন সিকোয়েন্স থেকে ভ্যাকসিন আবিষ্কারেও উদ্যোগ নিতে পারবে বাংলাদেশ।
জিন গবেষণায় আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ফোকাল পয়েন্টে আছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি (এনআইবি)। তবে প্রতিষ্ঠানটিতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং মেশিন নেই। প্রতিষ্ঠানটিতে আছে ট্র্যাডিশনাল দুটি স্যাঙ্গার সিকোয়েন্সিং মেশিন, যা দিয়ে উদ্ভিদ, প্রাণী, মৎস্য ও মানুষের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিং করা সম্ভব নয়। এই মেশিনের সিকোয়েন্সিং থেকে সঠিক ফলও পাওয়া যায় না।
এনআইবির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জাহাঙ্গীর আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমাদের যে স্যাঙ্গার মেশিন আছে, তা দিয়ে সব ধরনের জিন সিকোয়েন্সিং সম্ভব নয়। এ কারণেই চিকুনগুনিয়া নিয়ে আমরা কোনো কাজ করতে পারিনি। ডেঙ্গু নিয়ে এখনো কাজ শেষ করা যায়নি।'
তিনি বলেন, 'দেশে নতুন কোনো জীবাণুর সংক্রমণ হলে তা চিহ্নিত করতে জিন সিকোয়েন্সিং অপরিহার্য। এনআইবিতে স্যাঙ্গার মেশিন দিয়ে আমরা কোভিড-১৯ ভাইরাসের অল্প কয়েকটি ভ্যারিয়েশনের সিকোয়েন্সিং করতে পেরেছি। নেক্সট জেনারেশন ল্যাব হলে আমরা সহজেই সব জীবাণুর সিকোয়েন্সিং করতে পারব।'
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দেশে বর্তমানে বেশ কয়েকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন আকার ও মানের নেক্সট জেনারেশন জিন সিকোয়েন্সিং ল্যাব আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সায়েন্স ল্যাবরেটরি) এবং বাংলাদেশ জুট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ল্যাব দুটিতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মেশিন রয়েছে।
সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে করোনাভাইরাসের প্রায় ৩৫০ ভ্যারিয়েশনের জিন সিকোয়েন্সিং করা সম্ভব হয়েছে।
এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনে এ রকম ল্যাব আছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও গ্লোব বায়োটেকে নেক্সট জেনারেশন জিনোম সিকোয়েন্সিং ল্যাবরেটরি আছে।
জিন গবেষণায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলেও বাংলাদেশে এক্ষেত্রে এখনো নিতান্তই প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। এরপরেও জিন গবেষণায় দেশের বেশ কিছু সাফল্যও আছে। ইতোমধ্যেই পাট, ইলিশ, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, মহিষ, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্সিং করা সম্ভব হয়েছে। দেশে উন্নত মানের ল্যাব না থাকায় এ কাজে দেশের বাইরের ল্যাবগুলোর সহায়তা নেওয়া হয়েছে।
নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং মেশিনে অল্প সময় ও কম খরচে প্রাণী, উদ্ভিদ, অনুজীবের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করা সম্ভব। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জীবের জীবনের একটি নকশা পাওয়া যায়। এই নকশা থেকে জিনের উপকারি ও ক্ষতিকর সব দিক সম্পর্কে জানা যায় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া যায়। জিন সিকোয়েন্সিং জটিল রোগ-ব্যাধি বুঝতে, চিহ্নিত করতে এবং প্রতিষেদক তৈরিতে সাহায্য করে।
জীবনে বংশগতির প্রভাবের পাশাপাশি পরিবেশের প্রভাবও এ থেকে বোঝা যায়।
নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং থেকে এসব সুবিধা পেতে হলে সিকোয়েন্স থেকে পাওয়া তথ্য যথাযথভাবে বিশ্লেষণ ও সরংক্ষণের সক্ষমতা থাকতে হবে। কিন্তু এই সক্ষমতা এনআইবির নেই। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেটা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০২০ থেকে জুন ২০২২। প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জিনোম সিকোয়েন্সিং টিমের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এবিএম খাদেমুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে, স্যাঙ্গার মেশিন দিয়ে একটি জিনের সিকোয়েন্সিং করতে দুই-তিন সপ্তাহ লেগে যায়। বিপরীতে নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং মেশিনে একদিনেই অনেকগুলো জিনের সিকোয়েন্স করা সম্ভব। এতে জটিল রোগের ডায়াগনস্টিক ও চিকিৎসা দেওয়ার কাজ অনেক সহজ হবে।