তিন মাসে খেলাপি ঋণ বাড়ল ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি
করোনার অভিঘাত মোকাবেলায় ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণের কিস্তি পরিশোধে চাপ না থাকলেও চলতি বছরের মার্চ শেষে ডিসেম্বরের তুলনায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।
মার্চ শেষে ব্যাংকখাতে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট বিতরণ করা ঋণের স্থিতির (আউট স্ট্যান্ডিং) ৮.০২ শতাংশ বা ৯৪ হাজার কোটি টাকা। গেল ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৮,৭৩৪ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের স্থিতির (আউট স্ট্যান্ডিং) ৭.৬৬ শতাংশ ছিল।
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
খেলাপি ঋণ বাড়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, যদিও ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করার ক্ষেত্রে মার্চ পর্যন্ত কিছুটা ছাড় ছিলো, কিন্তু কোভিডের কারণে অনেক ভালো গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি, যার প্রভাবে খেলাপির পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।
কোভিডের কারণে গেল বছর জুড়েই সব ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে কিস্তি পরিশোধ না করার সুবিধা ছিল। চলতি বছর শেষে গণহারে এই সুবিধা না দিয়ে খাত ভিত্তিক সুবিধা দেয়া হয়েছে। সেই সুবিধাও ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অর্থাৎ ব্যাংক যদি মনে করে কোন গ্রাহক সত্যিকার অর্থেই ক্ষতিগ্রস্ত এবং তার পূর্বে ঋণ পরিশোধ করার রেকর্ড ভালো তবেই তিনি কিস্তি পরিশোধ না করার সুবিধা পাবেন।
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাথে এক ওয়েবিনারে এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ, এবিবি এর চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ঋণের কিস্তি পরিশোধ যখন নিয়মিত হয়ে যাবে তখনকার পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাংকার দু:শ্চিন্তায় আছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কোভিডের ফলে ব্যবসায় মন্দা চলছে। তাতে গ্রাহকরা কতটা ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন কিংবা ব্যাংক তাদের কাছ থেকে আদায় করতে পারবে, সেটাই তাদের জন্য আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজনেস ইনিশিয়াটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) এর চেয়ারম্যান ও ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান দ্য বিজনে স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কোভিডের কারণে বিক্রি কমে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে, ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে পরিস্থিতির তেমন কোন পরিবর্তন করা যাবে না। কারণ পণ্য কেনা বা সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে ক্রেতা চাহিদা অনেক কম।
এর ফলে কোন উৎপাদকের উৎপাদিত পণ্য গুদামেই পড়ে থাকছে। কিংবা বাকিতে বিক্রি করলেও সেই টাকা তিনি ঠিকমত ফেরত পাচ্ছেন না। এতে ঋণের কিস্তিও ঠিকমতো পরিশোধ করা যাচ্ছে না।
তার মতে ক্রেতা চাহিদা বাড়াতে নতুন বাজেটে গুরুত্ব দিতে হবে। চাহিদা না বাড়া পর্যন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধে খারাপ গ্রাহকদের কোন সুযোগ না দিয়ে বরং ভালো গ্রাহকদের আরো কিভাবে ছাড় দেয়া যায় সেটিা দেখতে হবে। না হলে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়তেই থাকবে, এটা কমানো যাবে না।