দুই সপ্তাহে পাম অয়েলের দাম বেড়েছে মণে ৫৫০ টাকা
ভোগ্যপণ্যের বাজারে আবারো অস্থির হয়ে উঠেছে পাম অয়েলের দাম। পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গত দুই সপ্তাহে পণ্যটির দাম বেড়েছে মণে ৫৫০ টাকা। চাহিদা স্থির থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির বুকিং দর বৃদ্ধির কারণে দেশীয় বাজারে ট্রেড বৃদ্ধি পাওয়ায় পণ্যটির দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে বলে মন্তব্য ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের।
দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল বিশেষ করে পাম অয়েলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তাই দেশীয় বাজারেও পণ্যটির দামে প্রভাব পড়েছে। একই সাথে আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বমুখীতার কারণে দেশীয় বাজারে পাম অয়েল ট্রেড হচ্ছে অনেক বেশি। লোকাল ট্রেডের অর্থ হলো- এক হাত থেকে বিভিন্ন হাত হয়ে পণ্যটি বিকিকিনি হওয়া। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব ও লোকাল ট্রেডের কারণে পণ্যটির দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে।
ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের পাইকারি দোকানগুলোতে মঙ্গলবার প্রতিমণ (৪০ দশমিক ৯০ কেজি) পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৩০০ টাকা দরে। যা দুই সপ্তাহ আগে মাত্র ৩ হাজার ৮০০ টাকা দামে বিক্রি করা হয়েছে। সেই হিসেবে, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মণে সাড়ে পাঁচশ টাকা বেড়েছে প্রতি মণ পাম অয়েলের দাম।
বর্তমানে খাতুনগঞ্জে টিকে গ্রুপের বে ফিশিং পাম অয়েল মণপ্রতি ৪৩০০ টাকা, এস আলম ৪২৯০ টাকা এবং সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও বসুন্ধরা গ্রুপের পাম অয়েল ৪২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
পাম অয়েলের পাশাপাশি মণে প্রায় দেড়শ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে পাম সুপার অয়েল ও সয়াবিনের দামও। দুই সপ্তাহ আগে বাজারে প্রতি মণ পাম সুপার অয়েল বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ টাকা দরে। মণে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বর্তমানে একই পাম সুপার অয়েল ৪ হাজার ৫৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
পাম সুপারের মধ্যে বর্তমানে টিকে গ্রুপের প্রতি মণ বে ফিশিং ৪৫৫০ টাকা, এস আলম ৪৫৪০ টাকা এবং অন্যান্য গ্রুপের (মেঘনা, সিটি ও বসুন্ধরা) পাম সুপার ৪৫৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৭৫০ টাকা দামে। যা গত দুই সপ্তাহ আগে ৪ হাজার ৬০০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। সেই হিসেবে, গত দুই সপ্তাহে সয়াবিনের দামও মণে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মেসার্স ইসমাইল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'দেশীয় বাজারে গত মাসে পাম অয়েলের দাম ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত কমে গিয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় দেশীয় বাজারে আবারো পণ্যটির দাম বাড়তে শুরু করেছে। এতে আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা পণ্যটির লোকাল ট্রেড শুরু করেছে। এতে একহাত থেকে অন্যহাতে ঘুরে পণ্যটির দাম আরো অস্থির হয়ে উঠেছে'।
ইনডেক্স মুন্ডির তথ্যমতে, ৩০ জুন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ১০১৭ ডলারে। বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারিতে প্রতি টন পাম অয়েল বিক্রি হয়েছিল মাত্র ৯৯০ ডলার। এরপর ক্রমান্বয়ে বেড়ে ফেব্রুয়ারিতে ১০১৯ ডলার, মার্চে ১০৩০ ডলার, এপ্রিলে ১০৭৮ ডলার এবং মে তে সর্বোচ্চ ১১৫৬ ডলারে বিক্রি হয়েছে।
সেই হিসেবে, খরচসহ বর্তমানে প্রতিমণ পাম অয়েলের বুকিং দর ৩৯৪৪ টাকা। যা বর্তমানে ৪৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এমপিওসি ডট অর্গানাইজেশন ডট মাই এর তথ্যমতে, মালয়েশিয়াতে সোমবার প্রতি টন পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৪৩৮৩ রিঙ্গিতে। এর আগে ২৩ জুলাই পাম অয়েলের দাম ছিল ৪২৭১ রিঙ্গিত। ২২ জুলাই ৪১২১ রিঙ্গিত, ২১ জুলাই ৪১৪৯ রিঙ্গিত এবং ১৯ জুলাই ৪১৫১ রিঙ্গিতে পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে।
দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, 'খোলা পাম অয়েল এবং সয়াবিনের দাম উঠানামা আন্তর্জাতিক বাজার এবং লোকাল ট্রেডের উপর নির্ভর করে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির ফলে লোকাল মার্কেটও চাঙ্গা হয়েছে। তবে আমরা কোন ভোজ্যতেলের দাম বাড়াইনি।আমরা সরকার নির্ধারিত দামে বোতলজাত তেল বিক্রি করছি'।