দেড় মাসে পাম অয়েলের দাম বেড়েছে মণে ৮৫০ টাকা
ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্বাভাবিক বেড়েছে অন্যতম ভোজ্যতেল পাম অয়েলের দাম। গত দেড় মাসে পাইকারি পর্যায়ে পণ্যটির দাম বেড়েছে মণে ৮৫০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং দর বৃদ্ধি ও চলমান পরিস্থিততে আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলা কঠিন হয়ে যাওয়ায় অস্বাভাবিক বেড়েছে পাম অয়েলের দাম।
দেশে ভোগ্যপণ্যের প্রধান পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ। বাজারটিতে রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) পাইকারি পর্যায়ে প্রতি মণ (৩৭.৩২ কেজি) পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৭০০ টাকায়।
অথচ এক মাস আগে, অর্থাৎ আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এখানে প্রতি মণ পাম অয়েল ৪ হাজার ৮৫০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে পাম অয়েলের দাম মণে ৮৫০ টাকা বেড়েছে।
পাইকারি বাজারের প্রভাবে খুচরা পর্যায়েও পণ্যটির দাম লিটারপ্রতি ২২-২৪ টাকা পর্য়ন্ত বেড়ে গেছে। আগস্টের শেষ সপ্তাহ পর্য়ন্ত খুচরা পর্য়ায়ে প্রতি লিটার পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ১৩৫ টাকার নিচে।
কিন্তু গত তিন সপ্তাহে দফায় দফায় বেড়ে বর্তমানে মুদির দোকানগুলোতে প্রতি লিটার পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৪৮-১৫০ টাকা দামে।
খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক টিবিএসকে বলেন, গত মাসের শেষ সময় থেকে বাজারে পাম অয়েলের দাম বাড়তে শুরু করে।
তিনি বলেন, 'আমদানিকারক, বিশেষ করে মিল মালিকরা পাম অয়েলের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে অস্থির হয়ে উঠেছে পণ্যটির দাম। বাজারে পাম অয়েলের সরবরাহ সংকট নেই। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং দর বৃদ্ধি এবং পণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলতে ব্যাংকগুলো থেকে নেওয়া এস আলম গ্রুপের একচেটিয়া সুবিধা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাম অয়েলের বাজারে প্রভাব পড়ছে।'
তবে দেশের অন্যতম আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (সেলস) প্রদীপ করণ টিবিএসকে বলেন, ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতে ব্যাংকগুলো থেকে এখনেও নির্বিঘ্নে এলসি খোলা যাচ্ছে না।
একই সময়ে পণ্য আমদানিতে শিপিং চার্জও কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় এই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে দীর্ঘদিন ধরে ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয় করেনি সরকার কিংবা আমদানিকারক কোম্পানিগুলো। এ কারণে পাম অয়েলের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। মিল মালিকরা আগের মতো পর্যাপ্ত সরবরাহ আদেশ বা এসও (ডিও হিসেবে প্রচলিত) বিক্রি না করায় বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে।
এর ফলে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা সয়াবিনের বিপরীতে বাড়তি দাম দিয়ে পাম অয়েল ও সুপার পাম অয়েল ক্রয়ে ঝুঁকছেন। কিন্তু মিলগুলো থেকে চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত সরবরাহ না পাওয়ায় ঊর্ধ্বমুখী চাহিদায় পাম অয়েলের বাজার বাড়ছে বলে জানান তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ভোজ্যতেল আমদানি ও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে সংকটের কারণে আমদানির পরিমাণ কমে গেছে।
'বাজারে বিদ্যমান সরবরাহ আদেশগুলো মিলগেটে এলেও পর্যাপ্ত সরবরাহ দেওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে আগামী সপ্তাহের মধ্যে মজুত ফুরিয়ে গেলে মিলের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে। ব্যাংকিং সুবিধা না পাওয়ায় ইতিমধ্যে এস আলম গ্রুপের ভোজ্যতেল আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে,' বলেন তিনি।
অন্যদিকে কয়েক মাস ধরে দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
সয়াবিনের সঙ্গে পাম অয়েলের দামের পার্থক্য প্রতি মণে সাধারণত এক থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে থাকে। সম্প্রতি পাম অয়েলের দাম বেড়ে সয়াবিনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
বর্তমানে মণপ্রতি সয়াবিন বেচাকেনা হচ্ছে ৫ হাজার ৯০০ থেকে ৫ হাজার ৯২০ টাকায়, যা দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৬ হাজার টাকা।