দেশীয় বাজারে অস্থির ভোজ্যতেলের দাম
ভোগ্যপণ্যের বাজারে আবারো অস্থির হয়ে উঠেছে পাম অয়েলের দাম। পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গত দুই সপ্তাহে পণ্যটির দাম বেড়েছে মণে ৭০০ টাকা। চাহিদা স্থির ও আর্ন্তজাতিক বাজারে পণ্যটির বুকিং দর কমে যাওয়ার পরও আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে খাতুনগঞ্জে পণ্যটির দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের পাইকারি দোকানগুলোতে শনিবার প্রতিমণ (৪০ দশমিক ৯০ কেজি) পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৫০০ টাকা দরে। যা দুই সপ্তাহ আগে মাত্র ৩ হাজার ৮০০ টাকা দামে বিক্রি করা হয়েছে। সেই হিসেবে, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মণে সাড়ে ৭০০ টাকা বেড়েছে প্রতিমণ পাম অয়েলের দাম।
বর্তমানে খাতুনগঞ্জে টিকে গ্রুপের বে ফিশিং পাম অয়েল মণপ্রতি ৪৫০০ টাকা, এস আলম ৪৪৯০ টাকা এবং সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও বসুন্ধরা গ্রুপের পাম অয়েল ৪৪৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
পাম অয়েলের পাশাপাশি মণে প্রায় ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে পাম সুপার অয়েলের দামও। দুই সপ্তাহ আগে বাজারে প্রতি মণ পাম সুপার অয়েল বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ২০০ টাকা দরে। মণে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বর্তমানে একই পাম সুপার অয়েল ৪ হাজার ৬০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
পাম সুপারের মধ্যে বর্তমানে টিকে গ্রুপের প্রতি মণ বে ফিশিং ৪৬০০ টাকা, এস আলম ৪৫৯০ টাকা এবং অন্যান্য গ্রুপের (মেঘনা, সিটি ও বসুন্ধরা) পাম সুপার ৪৫৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
শনিবার খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৮৫০ টাকা দামে। যা গত দুই সপ্তাহ আগে ৪ হাজার ৬০০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। সেই হিসেবে, গত দুই সপ্তাহে সয়াবিনের দামও মণে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, গত চার-পাঁচ দিনে আর্ন্তজাতিক বাজারে ভোজ্যতেল বিশেষ করে পাম অয়েলের দাম বেশ কমেছে। সেই হিসেবে দেশীয় বাজারেও ভোজ্যতেলের দাম কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে গত দুই সপ্তাহ ধরে পণ্যটির দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে লোকাল ট্রেডের কারণে পণ্যটির দাম বেড়েছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। লোকাল ট্রেডের অর্থ হলো, এক হাত থেকে বিভিন্ন হাত হয়ে পণ্যটি বিকিকিনি হওয়া।
খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী মেসার্স খাজা আজমির ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুল হান্নান বলেন, দেশীয় বাজারে গত মাসে পাম অয়েলের দাম ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত কমে গিয়েছিল। একই সময়ে সুপার পাম ও সয়াবিনের দামও মণে ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত কমেছিল। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে খাতুনগঞ্জে ভোজ্যতেলের দাম আবারো বাড়তে শুরু করে। মূলত আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে লোকাল ট্রেডের কারণে পণ্যটির বাজার আবারো অস্থির হয়েছে বলে মন্তব্য আব্দুল হান্নান সহ বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ীদের।
ইনডেক্স মুন্ডির তথ্যমতে, গতকাল (২১ আগস্ট) আর্ন্তজাতিক বাজারে প্রতি টন পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ১০১৫ ডলার ৫০ সেন্টে। বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারিতে প্রতি টন পাম অয়েল বিক্রি হয়েছিল মাত্র ৯৯০ ডলার। এরপর ক্রমান্বয়ে বেড়ে ফেব্রুয়ারিতে ১০১৯ ডলার, মার্চে ১০৩০ ডলার, এপ্রিলে ১০৭৮ ডলার, মে তে ১১৫৬ ডলার এবং জুনে ১০১৭ ডলারে বিক্রি হয়েছে।
সেই হিসেবে, খরচসহ বর্তমানে প্রতিমণ পাম অয়েলের বুকিং দর ৩৯৩৯ টাকা। যা বর্তমানে ৪৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিমণ পাম অয়েলে ৫৬০ টাকা মুনাফা করছে আমদানিকারকরা।
এমপিওসি ডট অর্গানাইজেশন ডট মাই এর তথ্যমতে, মালয়েশিয়াতে বৃহষ্পতিবার প্রতিটন পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৪২৩৮ রিঙ্গিতে। এর আগে ১৮ আগস্ট পাম অয়েলের দাম ছিল ৪৩০১ রিঙ্গিত। ১১ আগস্ট ৪৪০৮ রিঙ্গিত, ১৬ আগস্ট ৪৪৪৭ রিঙ্গিত এবং ১৩ আগস্ট ৪৫১১ রিঙ্গিতে পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে।
উপরের চিত্রমতে, গত ১৬ আগস্ট থেকে মাত্র ছয় দিনের ব্যবধানে মালয়েশিয়াতে প্রতিটন পাম অয়েলের দাম ২৭৩ রিঙ্গিত কমে যায়। কিন্তু দেশীয় বাজারে পণ্যটির দাম না কমে উল্টো বাড়তে শুরু করে।
দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ভোজ্যতেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আরএম ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম গত সপ্তাহে কিছুটা কমেছে। বিষয়টা সত্য। তবে বর্তমানে বাজারে যেসব ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে তা আগের আমদানি হওয়া পণ্য। বর্তমানে বুকিং হওয়া পণ্য বাজারে পৌঁছতে কমপক্ষে আরো একমাস সময় লাগবে। স্থানীয় বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমতেও কমপক্ষে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগবে বলে মনে করেন এই আমদানিকারক।
তবে খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী জিয়া উদ্দিন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের বুকিং দর বাড়লে স্থানীয় বাজারে সাথে সাথে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশীয় বাজারে পণ্যের দামে সহজে প্রভাব পড়েনা। ভোজ্যতেলের বাজার দেশের হাতেগোণা কয়েকজন আমদানিকারকের কাছে জিম্মি বলে অভিযোগ করেন এই ব্যবসায়ী।