বৈদেশিক সহায়তা: প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় কমেছে উভয়ই
সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় দুইটাই কিছুটা কমেছে। এ সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি কমেছে ২.১৪% আর অর্থছাড় কমছে ২.২৮%। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ইআরডির তথ্য অনুয়ায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থছাড় করেছে ৭১০৬.৪১ মিলিয়ন ডলার। ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, কোভিড পরিস্থিতি ও লকডাউনের কারণে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বাঁধাগ্রস্ত হয়েছে। অনেক বিদেশী বিশেষজ্ঞ প্রকল্প এলাকায় ছিল না। কাজ হয় থেমে থেমে। এ কারণে প্রকল্পে বৈদেশিক ঋণ তুলনামূলক কম ছাড় হয়েছে। তবে কোভিডে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, টিকা কেনা বাবদ অনেক উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে বাজেট সহায়তার অর্থ পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে অর্থছাড় ৭ শতাংশের বেশি হয়েছে। এর আগের অর্থবছরের তুলনায় অর্থছাড় সমান্য কমলেও এটাকে বড় অর্জন বলছে ইআরডি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও টিকা কেনা বাবাদ বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, এশীয় পরিকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাঙ্ক (এআইআইবি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজেটে বেড়েছে সহায়তার অর্থছাড়। মূলত প্রকল্পে সহায়তার অর্থছাড় নির্ভর করে প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর। অন্যদিকে বাজেট সহায়তা অর্থ চুক্তি সই হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে ছাড় করা হয়।
গত অর্থবছরের ছাড় হওয়া অর্থের মধ্যে ঋণের পরিমাণ ছিল ৬৭৭২.১৭ মিলিয়ন ডলার আর অনুদান ছাড় হয় ৩৩৪.২৩ মিলিয়ন ডলার।
এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীরা ছাড় করেছিল ৭২৭১.৯৭ মিলিয়ন ডলার।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) গবেষণা পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা টিবিএসকে বলেন, 'কোভিড পরিস্থিতিতে বৈদেশিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের অগ্রাধিকারে পরিবর্তন এসেছে। অন্যান্য বছরগুলোতে উন্নয়ন সহযোগীরা যেভাবে বিভিন্ন দেশে সহায়তা দিতেন, এবার সে ভাবে দেয়নি। এক্ষেত্রে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা খাত উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে। ফলে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড় বা প্রতিশ্রুতি কম বা বেশি হয়েছে সেটা বিবেচ্য নয়। আগামীতে উন্নয়ন সহযোগীদের অগ্রাধিকার বিবেচনায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরপত্তা খাতে যাতে বেশি সহায়তা পাওয়া যায় সে বিষয়ে সরকারকে কৌশল গ্রহণ করতে হবে'।
তিনি আরও বলেন, 'প্রকল্প সহায়তা ছাড়ের ক্ষেত্রে আরও কৌশলী হতে হবে। বাস্তবায়ন গতি বাড়াতে আমলতান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে হবে। একই সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতাও বাড়াতে হবে'।
কোভিড ও লকডাউন পরিস্থিতিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীর গতির চিত্র বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ মূল্যায়ন বিভাগের ( আইএমইডি) প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে।
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের ১১ মাসেও বেশিরভাগ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ৬০ শতাংশ কম বৈদেশিক ঋণ ব্যবহার করতে পেরেছে। অর্থাৎ মে মাস পর্যন্ত বেশিরভাগ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যবহার করতে পারেনি। এর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় ৩৩%, বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ৩৯%, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৪৫%, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৪৭%, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৫২% বৈদেশিক ঋণ ব্যবহার করেছে।
এদিকে ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, এর আগের বছরের তুলনায় সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি সমস্যা কমেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগের সঙ্গে মোট ৯৩৪৯.৯৪ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা চুক্তি হয়েছে। চুক্তি হওয়া অর্থই উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের বাজেট সহায়তা রয়েছে। ঋণ হিসেবে প্রতিশ্রুতি এসেছে ৮৬৭৬.৩৩ মিলিয়ন ডলার, এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এটির পরিমাণ ছিল ৯৫৫৪.৪২ মিলিয়ন ডলার।
এদিকে সরকার বিদায়ী অর্থবছরে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের সুদ ও আসল মিলিয়ে ১৯০৯.৩ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে।