মহামারিতে লেনদেন বেড়েছে ডিজিটাল ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে
ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে গ্রাহকের উৎসাহ আগের তুলনায় অনেক বাড়ছে। এর পিছনে বড় ভূমিকা রেখেছে করোনার প্রকোপ।
গেল বছর মার্চে করোনার ফলে লকাডাউন ঘোষণা এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার বাধ্যবাধকতায় ব্যাংকমুখো হতে পারেননি গ্রাহক।
তাই ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করেছেন। এর প্রভাবে গেল বছর তার আগের বছরের (২০১৯) তুলনায় কার্ডে লেনদেন বেড়েছে।
তবে কার্ডের চেয়ে ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় লেনদেন সেরেছেন গ্রাহকরা। যার প্রভাবে গেল বছর ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যাংকিং এ লেনদেন ২০১৯ সালের তুলনায় ব্যাপক হারে বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত 'মান্থলি ইকোনমিক ট্রেন্ডস' শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, করোনার আগে থেকেই ডিজিটাল ব্যাংকিং এ অভ্যস্ত হয়ে উঠছিল গ্রাহকরা। তবে করোনা সেই অভ্যাসকে আরো ত্বরান্বিত করেছে।
গ্রাহকের এই অভ্যাস ধরে রাখতে ব্যাংকগুলো তাদের ডিজিটাল লেনদেন মাধ্যমগুলো আরো শক্তিশালী করতে এবং এই ধরনের সেবা নিরবচ্ছিন্ন রাখতে গুরুত্ব দিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রাইম ব্যাংকের প্রধান কারিগরী কর্মকর্তা (সিটিও) এ ওয়াই এম মোস্তফা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, যেহেতু গ্রাহকদের মাঝে ডিজিটাল ব্যাংকিং এর আগ্রহ বাড়ছে তাই আরো কিছু ডিজিটাল প্রোডাক্ট নিয়ে আসতে হবে। অনেক ব্যাংক কাজও শুরু করছে।
ব্যাংকগুলো এ খাতে গ্রাহক সন্তুষ্টি ধরে রাখতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের বোর্ডগুলোও ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন তিনি।
ইন্টারনেট ব্যাংকিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যাংকের মোট গ্রাহকের তুলনায় ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর গ্রাহক সংখ্যা নগন্য। তাদের সাবক্রিপশন বাড়াতে হবে।
গেল বছর করোনার প্রভাবে নতুন গ্রাহক বেড়েছে ঠিকই, তবে আগের গ্রাহকরাই লেনদেন বেশি করেছেন বলে তিনি মনে করেন।
ডিজিটাল ব্যাংকিং এর অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলো এখন ই-কেওয়াইসি (ব্যাংক একাউন্ট খুলতে ইলেট্রনিক ফর্ম) চালু করেছে। এর সাহায্যে গ্রাহকের ব্যাংকে না এসে একাউন্ট খোলা যাচ্ছে।
এটি গ্রাহকদের সুবিধা বাড়ালেও কার্ড বা চেকবইসহ অন্যান্য কাজে গ্রাহককে ব্যাংকে আসতেই হচ্ছে উল্লেখ করে মোস্তফা বলেন, এমন ব্যবস্থা করতে হবে যেন এসব কাজেও গ্রাহককে ব্যাংকে আসতে না হয়।
ব্যাংকের ডিজিটালাইজড হওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে ব্যাংকিং সংক্রান্ত গ্রাহকদের যে কোন ধরনের সমস্যা বা জিজ্ঞাসার কথা জানাতে ব্যাংকগুলো আরটিফিসিয়াল ইনিটিলিজেন্স এর ব্যবহার শুরু করেছে বলে তিনি জানান।
ব্যাংকিংখাতের অভিজ্ঞ এই প্রযুক্তিবিদ বলেন, ব্যাংকগুলো যেভাবে ডিজিটাল ট্রান্সফর্ম করছে তাতে আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে অর্ধেক গ্রাহক কোন না কোন ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে ব্যাংকিং সেবা নিবেন।
মোবাইল ব্যাংকিং
গেল বছর ডিজিটাল ব্যাংকিং এ সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে। ২০১৯ সালের তুলনায় গেল বছর এই মাধ্যম ব্যবহার করে লেনদেন বেড়েছে ২৯ শতাংশ।
বৃদ্ধির এই ধারা চলতি বছরেও অব্যাহত আছে। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত ডাটা থেকে দেখা যায়, ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে মোবাইল ব্যাংকিং এর সক্রিয় গ্রাহক, দৈনিক ও মাসিক লেনদেন বেড়েছে।
এছাড়া রেমিটেন্স পাঠানো যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মীদের স্যালারি দেয়ার ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকের ব্যবহার। তবে ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট ও কেনাকাটায় ডিসেম্বরের চেয়ে জানুয়ারি মাসে মোবাইল ব্যাংকিং এ লেনদেন কমেছে।