মুদ্রাবাজারে তারল্য ধরে রাখতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক
কোভিড এর অভিঘাত মোকাবেলায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে যাতে নগদ টাকার কোন সংকট না হয়, সে লক্ষ্যে মুদ্রাবাজারে তারল্য ধরে রাখার নীতি অব্যাহত রাখতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
গেল বছরের দুই প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর-ডিসেম্বর) তাই রিভার্স রেপোর কোন নিলাম অনুষ্ঠিত হয়নি। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা উদ্বৃত্ত অর্থ ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে তুলে নেয়াই রিভার্স রেপো নামে পরিচিত।
অন্যদিকে ব্যাংক অর্থ সংকটে পড়লে নিজের কাছে থাকা ট্রেজারি বিল ও বন্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জমা রেখে যে ঋণ নেয় তাকে রেপো বলা হয়।
মুদ্রাবাজারে তারল্য পরিস্থিতি ধরে রাখা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হাবিবুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'কোভিডের আঘাত মোকাবেলায় জুলাই থেকেই তারল্য বজায় রাখার নীতি নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক'।
ব্যাংকগুলোর কাছে অতিরিক্ত তারল্য থাকলেও চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকেও (জানুয়ারি-মার্চ) সেই নীতি অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত না হওয়ায় পর্যন্ত নীতিতে পরিবর্তন আসবে না।
গেল বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি অব্যাহতভাবে কমছে। জানুয়ারিতে এটি ৮.৩২ শতাংশে নেমে এসেছে। যদিও চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ১১.৫ শতাংশ।
একদিকে বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া অন্য দিকে ব্যয়ের চাপ কম থাকায় সরকারের ব্যাংক ঋণ নেয়ার প্রবণতাও কম।
এছাড়া কোভিড মোকাবেলায় প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের পাশাপাশি বাজার থেকে ডলার কিনে মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সব মিলিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থায় তারল্যের পাহাড় জমছে। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
তবে অতিরিক্ত তারল্য মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিবে না বলে মনে করেন হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সহসাই মূল্যস্ফীতির আঘাত আসবে না, যদি না দেশে কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দেয়।
এদিকে ব্যাংকগুলোর কাছে অতিরিক্ত তারল্য থাকায় স্বল্প সময়ের জন্য অন্য ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা ধার নিতে হচ্ছে না। ফলে কলমানি (আন্ত:ব্যাংক লেনদেন) সুদ হার ডিসেম্বর শেষে ১.৭৯ শতাংশে নেমে এসেছে।