৩৭.১৪ শতাংশ মানুষ ঋণ করে খাচ্ছে
কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন বাস্তবায়নকালে দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, হকারসহ নিম্নআয়ের ৬৫.৭১ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে ৩৭.১৪ শতাংশ মানুষকে ঋণ করে খাবার সহ দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে হচ্ছে।
বৃহষ্পতিবার 'খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ' আয়োজিত এক ওয়েবিনারে প্রকাশিত 'দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ও খাদ্যগ্রহণে প্রভাব' শীর্ষক জরিপের ফলাফলে এসব তথ্য উঠে আসে। জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ।
ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬৫.৭১ শতাংশ মানুষ জানিয়েছে তাদের আয় কমেছে এবং একইসঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। যে কারণে বেশিরভাগ ব্যক্তির পরিবারকে তিনবেলা খাবার যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। খাদ্যসহ দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে এসব মানুষের মধ্যে ৩৭.১৪ শতাংশকে কোন না কোন উৎস থেকে ঋণ করতে হচ্ছে।
জরিপে উঠে এসেছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দিনমজুর, রিক্সাওয়ালা, হকার সহ অনেক নিম্নআয়ের মানুষের আয়ের পথ কমেছে এবং তারা ক্ষতির মুখে পড়েছে। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের চড়া দাম তাদের জন্য অসহনীয় চাপ তৈরি করেছে। কারণ চাল, আটা, তেল, শাক সবজি সহ বিভিন্ন পণ্যের দাম চড়া।
ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, 'স্বল্প আয়ের এসব মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারি সহায়তা দরকার। চালের বাজারে অস্থিরতা চলছে। বর্তমানে চালের বাজারে সিন্ডিকেটের দেখা পাওয়া যায় না। কিন্তু সরকার অনুমোদিত বৃহৎ রাইস মিলাররা যে পরিমাণ চাল মজুত করার এখতিয়ার রাখে তা চালের বাজার অস্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে, যা ভবিষ্যতে আরো ভয়াবহ হতে পারে'।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা ও এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, 'এখন একটি অস্বাভাবিক সময় আমরা অতিক্রম করছি।এ মুহূর্তে মানুষের কাজ না থাকাটা আসলেই চ্যালেঞ্জিং। মানুষের আয় কমে গেছে,পাশাপাশি খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি দরিদ্র মানুষকে বিপদগ্রস্ত করেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে খাদ্য সামগ্রী বিক্রির কার্যক্রম চলছে।'
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারেও তেল, চিনির, চালের দাম বেশি। তার একটা প্রভাব দেশেরবাজারেও পড়ছে। দাম কমানোর জন্য খাদ্য, কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যার যার জায়গা থেকে কাজ করছে। আমরা মনিটরিং করছি, কিন্তু পর্যাপ্ত লোকবল আমাদের নেই'।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, 'দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রম দেখা যায় না। সেজন্য দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কমিশন গঠন করা দরকার। এ কমিশন গবেষণার আলোকে সুপারিশ তুলে ধরবে এবং বাজার মনিটরিংয়ে ভূমিকা রাখবে'।
এদিকে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় জরিপে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তাকে সকল নাগরিকের অধিকার হিসেবে নিশ্চিত করা, খোলাবাজারে চাল বিক্রি বাড়ানো, আগামী এক বছরের জন্য এলাকাভিত্তিক কয়েকটি স্থায়ী খোলা বাজারে বিক্রির জন্য দোকান/স্টোর তৈরি করা, টিসিবির বিক্রির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, সমাজের ধনীব্যক্তিদের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভীত হয়ে দ্রব্যসামগ্রী কিনে মজুত করার প্রবণতা পরিহার করা এবং স্থানীয় পর্যায়ে মুদি দোকানগুলোর মজুতব্যবস্থা নিয়মিত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করার সুপারিশ তুলে ধরা হয়।