গেল অর্থবছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি কমেছে ৪ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন
বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি কমে গেছে। গেল অর্থবছরে পণ্য আমদানি কম হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছিল ২১ লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন। এর আগের ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি করা হয়েছিল ২৬ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন পণ্য। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে গেছে।
অর্থবছরটিতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা, সেখানে আদায় করা হয়েছে ৪ হাজার ৫৯৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, সেখানে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৪৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ওই বছর ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৯৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্য আমদানি করা হয়েছিল ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৬৪ মেট্রিক টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয় ২০ লাখ ১১ হাজার ৬ মেট্রিক টন।
জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের এ পথে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় ব্যবসায়ীরা চাহিদামতো পণ্য আমদানি করতে পারেন না।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, বেনাপোল বন্দরে তীব্র জায়গা সংকট। পণ্য উঠানামার ক্রেন ফর্কলিফট নষ্টের কারণে সঠিক সময়ে আমদানিকারকরা পণ্য নিতে পারেনা। আবার ভারতের কালিতলায় অবৈধভাবে পার্কিংয়ের নামে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। যেকারণে অনেক ব্যবসায়ী এই বন্দর ছেড়ে চলে গেছে। এতে বেনাপোল দিয়ে আমদানি কমে গেছে। তবে বেনাপোল বন্দর উন্নয়ন, ভারতে হয়রানি বন্ধ হলে এ বন্দর থেকে লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ রাজস্ব আয় কাস্টমসের পক্ষে সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
যশোরের আমদানিকারক এজাজ উদ্দিন টিপু বলেন, 'ভারতের কালিতলায় অবৈধভাবে পার্কিংয়ের নামে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে। একটি ট্রাক দেশে প্রবেশ করতে এক মাস সময় লেগে যাচ্ছে। একে তো পণ্য আসতে দেরি হচ্ছে, আবার ওপারে প্রতিদিন ট্রাকপ্রতি ২ হাজার রুপি দিতে হয়। এতে বেনাপোল দিয়ে আমদানি কমিয়ে অন্য বন্দরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বেনাপোল বন্দরে রয়েছে জায়গার সংকট। এতে চাহিদা অনুযায়ী পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে পারছেনা। যে কারণে আমদানি কমে গেছে।'
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, 'বড় অংকের রাজস্ব আদায় অনিশ্চিত। কারণ নানা অব্যবস্থাপনায় আমদানি কমেছে এ বন্দর দিয়ে। বেনাপোল কাস্টমসে আমদানি পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষণে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেই। এতে খুলনা ও ঢাকা থেকে পরীক্ষা করাতে মাসের অধিক সময় লেগে যায়। ফলে দীর্ঘ সময় পণ্য চালান আটকা পড়ে ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। বেনাপোল কাস্টমস হাউসে বিএসটিআই ও বিএসআইআরের শাখা স্থাপনের দাবি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। এতে অনেক ব্যবসায়ী এ বন্দর ছেড়েছেন।'
ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট এক্সপোর্ট কমিটির পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, 'ব্যবসায়ীরা যেখানে সুবিধা পাবেন সে পথে আমদানি, রপ্তানি বাণিজ্যে আগ্রহী হবেন এটাই স্বাভাবিক। চট্টগ্রাম বন্দরে অনেক সুবিধা বিদ্যমান তাই ব্যবসায়ীরা দিন দিন সে পথে আমদানিতে ঝুঁকছেন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কাস্টমস ও বন্দরে বৈধ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে ব্যবসায়ীরা এ পথে আবার ফিরবেন।'
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, 'বেনাপোল বৃহৎ বন্দর হলেও এর কোন সুফল আমরা পাচ্ছিনা। সপ্তাহে ৭ দিন বাণিজ্যসেবা চালু থাকলেও কাগজে-কলমে। বাণিজ্য প্রসার করতে হলে বৈধ সুবিধা ও অবকাঠামো উন্নয়নের বিকল্প নেই। বাণিজ্য প্রসার করতে হলে বেনাপোলকে সব ধরণের হয়রানিমুক্ত করা প্রয়োজন। ব্যবসায়ীরা বারবার ভারতের কালিতলায় হয়রানির অভিযোগ করলেও সরকার সমাধানের দিকে এগোচ্ছে না। যে কারণে বেনাপোল দিয়ে আমদানি কমেছে।'
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কমিশনার মো: আজিজুর রহমান জানান, গেল অর্থবছরে আমদানি কম হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। বেনাপোল বন্দরে জায়গার সংকট, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবের কারণে ব্যবসায়ীরা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করতে পারছেনা।
আবার ভারতের কালিতলায় অবৈধভাবে আমদানিবাহী গাড়ি আটকিয়ে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এতে আমদানিকারকরা অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছে। এসব সমস্যার কারণে গতবছর আমদানি কমে গেছে। এতে রাজস্ব আদায়েও প্রভাব পড়েছে।
এদিকে বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর জানান, বেনাপোল বন্দরের উন্নয়ন কাজ চলমান। ইতিমধ্যে বন্দরে ৩৬৫টি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এতে নিরাপত্তা বাড়বে। জমি অধিগ্রহণ, নতুন পণ্যগার নির্মাণ ও বন্দর এলাকায় রাস্তাঘাটের অনেকটা উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হলে এ বন্দরে বাণিজ্য গতি আরো বাড়বে বলেও জানান তিনি।