মাছ, মাংস, ডিম খাওয়া এখন সহজ নয়!
গত সপ্তাহে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। এ বাড়তি দামের কারণে সংসার খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছে সীমিত আয়ের পরিবারগুলো।
অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার খরচ চালাতে তাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় মাছ, ডিম, মাংস ও সবজি কেনা কমিয়ে দিয়েছে।
৫ সদস্যর পরিবার নিয়ে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় থাকেন ফিরোজ আলি। একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি শিক্ষকতা করেন। হাতিরপুল এলাকায় কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, সংসার চালাতে যা প্রয়োজন সবকিছুর দাম বেড়েছে। প্রতি বস্তা চালে বেড়েছে ২০০ টাকা।
"এখন মাছ, মাংস, ডিম খাওয়া কমিয়ে দিয়েছি। আগে ৪ কেজি মুরগি কিনতাম মাসে, এখন কেনা হয় ২ কেজি। ডিম ১২টির জায়গায় ৪টি কিনি", বলেন তিনি।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মগবাজার, কল্যাণপুর নতুন বাজারসহ বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাল, আটা-ময়দা, চিনি, রসুন, মুরগি, মাছ, ডিম, সবজি সব কিছুর দাম গত এক সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে বেড়েছে ৩ থেকে ৩০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও সরবরাহ ঘাটতির কারণে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চলতি সপ্তাহে আরও কিছু পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
৩০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগির কেজি এখন ২০০ টাকা হয়েছে। ডিমের দাম ডজনে বেড়েছে ২০ টাকা। প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৫ টাকা; বাজারে এখন ৫২ টাকা কেজির নিচে চাল নেই। বেশিরভাগ সবজি এক সপ্তাহের তুলনায় ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ৫০ টাকা থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মতলব স্টোরের বিক্রেতা আবু রায়হান বলেন, প্রতি ট্রাকে ১০ টনের মতো চাল কুষ্টিয়া থেকে নিয়ে আসার ভাড়া ছিল ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা, এখন সেটি বেড়ে ২০ হাজার টাকা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চাল আনতে ট্রাক ভাড়া দিতে হতো ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা, সেটি এখন বেড়ে ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা হয়েছে।
কারওয়ান বাজারের ভান্ডারী ফার্মার আড়তদার মোহম্মদ আলী বলেন, কুষ্টিয়া থেকে বেগুন, কচু, কাঁচামরিচসহ সবজি আসে। আগে যে ট্রাক ভাড়া ছিল ১৩ হাজার টাকা, এখন সেটি হয়েছে ১৭ হাজার টাকা।
কারওয়ান বাজারের রিফাত স্টোরের বিক্রেতা মোহম্মদ রিফাত বলেন, "প্রতিটি পণ্যর দাম কেজিতে অন্তত ৫ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি খোলা আটা ৩৮ টাকায় কিনে ৪০ টাকা বিক্রি করেছি। এখন সেই আটা আমাদেরই পাইকারি কিনতে হচ্ছে ৪৬ টাকায়। মসুর ডালের দাম ৮ টাকা বাড়ায় বিক্রি করছি ১৪০ টাকায়।"
হাজী ইসমাইল এ্যান্ড সন্স-এর বিক্রেতা মোহম্মদ মইনুদ্দিন বলেন, মিনিকেট চাল এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬৫ থকে ৬৬ টাকা, এখন দাম বেড়ে হয়েছে ৭০ থেকে ৭২ টাকা। নাজির ৮০ থেকে ৮৫ টাকা ছিল, এখন হয়েছে ৮৫ থেক ৯০ টাকা। আর বিআর ২৮ চাল ৩ টাকা বেড়ে ৫৫ টাকা হয়েছে।
কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, "সরকারকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে বাজারে সাপ্লাই চেইন উন্নত করতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে সরকারি পর্যায়ে ট্যাক্স সমন্বয় বা আমদানির মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।"
তিনি আরও বলেন, "জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করা এই সময় ঠিক হয়নি। সরকারতো লাভ করতে পারে না। তারা জনগণকে সেবা দেবে। এখন নতুন করে পরিবহন খরচসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষেরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা এখন চাপে আছেন।"
দাম কমেছে কাঁচা মরিচের
দিনাজপুরের হিলিতে ভারত থেকে আমদানি করা কাঁচামরিচের সরবরাহ বাড়ায় তিনদিনের ব্যবধানে দাম কমেছে কাঁচা মরিচের।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকরি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা ও খুচরা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। তিনদিন আগেও পাইকরি প্রতিকেজি কাঁচা মরিচের দাম ছিল ২৫০ টাকা ও খুরচা বাজারে ছিল ২৮০ টাকা।
হিলি স্থলবন্দর আমদানিকারক-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর-রশিদ বলেন, "এক সপ্তাহ আগে আমারা আমদানি করার অনুমোতি পাই। এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার মেট্রিক টন কাঁচা মরিচের এলসি খোলা হয়েছে। এসেছে প্রায় ২০০ মেট্রিক টন।"
"এলসি খোলার কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে কাঁচা মরিচের দাম পরিবহন খরচসহ প্রতি কেজির ১৫৫ থেকে ১৫৭ টাকা", যোগ করেন তিনি।