নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের এলসি পেমেন্টে রিজার্ভ থেকে বাড়তি ডলার চায় ব্যাংকগুলো
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি ব্যয় মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ থেকে ডলার সাপোর্ট বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে ব্যাংকগুলো।
আগামীকাল সোমবার বিকেলে বাফেদার সঙ্গে সভায় বসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারক কর্মকর্তারা। এই সভায় ডলার সাপোর্ট নিয়ে ব্যাংকগুলোর দাবি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অনানুষ্ঠানিকভাবে দাবি তুলে ধরা হবে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তত দশজন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা।
অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি ব্যয় মেটাতে শুরু থেকেই রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ৪.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি মার্কেটে ইনজেক্ট করা হয়েছে। এসব ডলার কিনতে দেশের ব্যাংক খাত থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে চলে যাওয়াতে তারল্য চাপ অনুভব করছে ব্যাংকগুলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি একটি ব্যাংকের এমডি টিবিএসকে বলেন, 'ব্যাংকগুলো এখন আমদানি এলসি খোলার ক্ষেত্রে অনেক সতর্ক হয়ে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ছাড়া অন্য এলসি খোলার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে পেমেন্ট করার সক্ষমতার বিষয়টিও ভাবতে হয়। কারণ, আমদানি এলসির পেমেন্ট সময়মতো না করতে পারলে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের বাজে ভাবমূর্তি তৈরি হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের এলসি খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে যেন এই দ্বন্দ্বে পড়তে না হয়, তাই রিজার্ভ থেকে ডলার সাপোর্ট পাওয়া দরকার।'
বেসরকারি অন্য আরেকটি ব্যাংকের এমডি জানান, 'আমাদের এখন ডলার সংকট বাড়ছে। এর মূল কারণ কোভিডের সময়ে আমদানি করা পণ্যের এলসির পেমেন্ট আমাদের এখন করতে হচ্ছে। রিজার্ভ থেকে ডলার সাপোর্ট কিছুটা দেওয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। তাই আমরা খুব করে চাই অন্তত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের এলসি পেমেন্ট করতে আমাদের রিজার্ভ থেকে ডলার সাপোর্ট বাড়ানো হোক।'
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাফেদার চেয়ারম্যান ও রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম বলেন, 'সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে একটি সভা হবে বলে শুনেছি। তবে আমার জানামতে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি আসেনি। এটি আমাদের নিয়মিত একটি সভা। এর আগেও আমরা ডলার বাজারের পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি।'
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আমদানি ব্যয় মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ থেকে ডলার চাওয়া হবে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'অন্য ব্যাংকের কথা জানি না, তবে সোনালী ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে খাদ্য, সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি ব্যয় মেটাতে ডলার সাপোর্ট পেয়ে আসছে। এক্ষেত্রে আমরা খুব বেশি চাপ অনুভব করছি না।'
সভায় কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তবে আইএমএফ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সভায় ডলারের দাম নির্ধারণ বাজারের হাতে ছেড়ে দিয়ে 'ফ্রী-ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেট সিস্টেম' চালুর দাবি করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দ্রুতই বাজারের হাতে ডলারের দাম নির্ধারণের বিষয়টি ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
সেইসঙ্গে বাফেদা ও এবিবি'র নির্ধারণ করে দেওয়া ডলার রেট ব্যাংকগুলো অনুসরণ করছে কিনা, সেটিও সভায় আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের এমডি ও সিইও মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের বিলাসিতার কোনো সুযোগ নেই। এসব পণ্য আমদানি করতে আমাদের অনেক ডলার খরচ করতে হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই সব ধরণের বিলাসবহুল দ্রব্য আমদানি আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হোক।'
সময়মতো আমদানি এলসি পেমেন্ট করতে পারছে না ব্যাংকগুলো
ডলারের অভাবে আমদানি এলসির পেমেন্ট সময়মতো করতে পারছে না অনেক ব্যাংক। বাফেদার সঙ্গে সভায় এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে ফের সতর্ক করা হতে পারে বলে জানা গেছে। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সার্কুলারে পেমেন্ট সময়মতো করা না হলে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখার এডি লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছিল।
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের এমডি ও ট্রেজারি বিভাগের প্রধান টিবিএসকে বলেন, 'ডলারের অভাব তো আছেই। এছাড়া যারা আমদানি এলসি খুলেছিলেন, তারা ডলারের যে দামে এলসি খুলেছিলেন, এখন পেমেন্ট করতে গিয়ে তাদের অনেক বেশি খরচ করতে হচ্ছে। এসব কারণেও ব্যাংকগুলো সময়মতো আমদানি এলসির পেমেন্ট করতে পারছেন না।'
এই ব্যয়ের উদাহরণ দিয়ে এক ব্যাংক এমডি বলেন, 'একবছর আগে যেসব ব্যবসায়ী আমদানি এলসি খুলেছিলেন, তখন ডলারের দাম ৮৫ টাকা ছিল। এসব পণ্য তখনকার বাজারমূল্যেই তারা বিক্রি করেছে। এখন এসব এলসির পেমেন্ট করতে গিয়ে তাদের ১০৫-১০৭ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। মানে প্রতি ডলারে দিতে হচ্ছে ২০ টাকা বেশি। মিলিয়ন ডলার পরিশোধের ক্ষেত্রে এই ক্ষতির অঙ্কটা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের জন্য।'