ইয়ার্ন আমদানি নিরুৎসাহিত করতে সরকারের দ্বারস্থ টেক্সটাইল মিলাররা
চাহিদা কমে যাওয়ার পর স্থানীয় স্পিনিং মিল মালিকদের হাতে বিপুল পরিমাণ ইয়ার্ন স্টকপাইল হয়ে থাকায় তা বিক্রির উপায় খুঁজতে আমদানি নিরুৎসাহিত করতে সরকারের দ্বারস্থ হয়েছেন টেক্সটাইল মিলাররা।
টেক্সটাইল মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ইয়ার্ন আমদানি নিরুৎসাহিত করার অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে মঙ্গলবার চিঠি পাঠিয়েছে।
চিঠিতে ডলার সংকট বিবেচনায় ডলার সাশ্রয়ের জন্য ব্যাক টু ব্যাক লেটার অব ক্রেডিট এর বিপরীতে বিদেশ থেকে আমদানির নিরুৎসাহিত করতে উদ্যোগ নিতে গভর্নরের কাছে অনুরোধ জানানো হয়।
টেক্সটাইল খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, এর ফলে একদিকে ডলার সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে স্থানীয় টেক্সটাইল মিলগুলোর বিপুল পরিমাণ লোকসানের হাত থেকে বাঁচবে।
বিটিএমএ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. ফজলুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের কাছে পর্যাপ্ত সুতা আছে। বাইরে থেকে আনলে ডলার ব্যয় হবে। এজন্য আমদানি নিরুৎসাহিত করার জন্য আমরা অনুরোধ জানিয়েছি।"
অবশ্য বিদেশ থেকে কম দামে আমদানির সুযোগ থাকলে তা বন্ধ করা উচিত হবে না বলে মনে করছেন ইয়ার্নের মূল ক্রেতা পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এর এক্সিকিউটিভ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম মনে করেন, আমদানি নিরুৎসাহিত করা কিংবা বন্ধ করা উচিত হবে না।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, "আমদানি বন্ধ হলে তারা মনোপলি ব্যবসা করবে। আমরা যেই ইয়ার্ন হয়তো ৩.২০ ডলারে আমদানি করতে পারবো, তাদেরকে দিতে হবে ৪ ডলার। অতীতে আমাদের সংকটের সময় তাই দেখেছি।"
অবশ্য ফজলুল হক বলেন, এক্ষেত্রে সরকার প্রয়োজনে দাম ঠিক করে দিতে পারে।
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, "সরকার দাম ঠিক করে দিলে সেক্ষেত্রে হয়তো স্থানীয় উৎস থেকে নেওয়া যায়। তবে তা আমদানিকৃত ইয়ার্নের চেয়ে ১০ সেন্টস এর বেশি হওয়া উচিত হবে না।"
স্থানীয় মুদ্রায় ব্যাক টু ব্যাক এলসির বিরোধিতা
ডলার সংকট ইজি করার লক্ষ্যে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো বিকেএমইএ'র স্থানীয় ব্যাক টু ব্যাক এলসির পেমেন্ট ডলারের বিপরীতে টাকায় করার দাবির বিরোধিতা করেছে বিটিএমএ।
গতকাল পাঠানো একই চিঠিতে সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, "এটি ডলার সংকট মোকাবেলায় কার্যত কোন ভুমিকা রাখবে না বরং যেসব প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট রয়েছে, তাদের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে আরো সংকট তৈরি করবে।"
কেননা ডলার একটি শ্রেণির কাছে পুন্জিভূত হওয়ার কারণে বিদ্যমান ডলার সংকট আরো বাড়বে।
ফজলুল হক বলেন, "আমরা যেহেতু ডলারে কাঁচামাল (কটন) আমদানি করি, এজন্য আমাদের অনুকূলে ব্যাক টু ব্যাক এলসিও ডলারে হওয়া উচিত।"
অবশ্য ব্যাক টু ব্যাক এলসি টাকায় করার যুক্তি তুলে ধরে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, "বার বার ডলারে এলসি বা ব্যাক টু ব্যাক এলসি করতে হওয়ায় ব্যাংক যে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা করছে, তা কিছুটা কমে আসার সুযোগ তৈরি হবে।"
এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, "ধরা যাক আমার প্রতিষ্ঠান ১ লাখ ডলারের অর্ডার পেল, যার জন্য ব্যাংক থেকে আমি পাবো ৯৯ টাকা প্রতি ডলার। কিন্তু যখন ডলারে ব্যাক টু ব্যাক এলসি করতে যাবো তখন দিতে হবে ১০৬ টাকা। ৫০ হাজার ডলারের ইয়ার্ন কিনতে হলে এতে আমরা সাড়ে তিন লাখ টাকা বাড়তি দিতে হয়। কিন্তু এই ৫০ হাজার ডলারের বিপরীতে স্থানীয় সাপ্লায়ার (স্পিনিং মিল মালিক) প্রতি ডলারে ৯৯ টাকা করেই পাবেন ব্যাংক থেকে। কিন্তু ওই স্পিনার যদি কটন আমদানি করতে চান, তার কাছ থেকে ব্যাংক ১০৬ টাকা করেই নেবে। কিন্তু টাকায় এলসি করার সুযোগ থাকলে ব্যাংক এ বাড়তি মুনাফা করার সুযোগ পেত না।"
টেক্সটাইল মিল মালিকদের কেউ কেউ অবশ্য একটি অংশ টাকায় এলসি করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখছেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন স্পিনিং মিল মালিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "কটন আমদানিতে যে ডলার প্রয়োজন ওই অংশের বাইরে ইয়ার্ন বিক্রির বকি টাকার জন্য টাকায় দেওয়া যায়। এলসি খোলার জন্য যে টাকা শোধ করতে হয়েছে, ওই টাকায় যদি ব্যাক টু ব্যাক এলসি হলে ডলারের উপর চাপ কমবে।"