শীর্ষ ৩ ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলে মূলধন ঘাটতির ঝুঁকিতে পড়বে ১৬টি ব্যাংক
গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতিটি ব্যাংকের শীর্ষ ৩ ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলে ১৬টি ব্যাংক ন্যূনতম প্রয়োজনীয় ক্যাপিটাল টু রিস্ক-ওয়েটেড অ্যাসেট রেশিও (সিআরএআর) বজায় রাখতে ব্যর্থ হবে।
ক্যাপিটাল টু রিস্ক (ওয়েটেড) অ্যাসেট রেশিও (সিআরএআর) হচ্ছে একটি ব্যাংকের মূলধনের সাথে ব্যাংকটির রিস্ক ওয়েটেড অ্যাসেট এবং বর্তমান ঋণের অনুপাত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে প্রি-শক পরিস্থিতিতে, ৬১টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে ১১টি ব্যাংক ন্যূনতম ১০ শতাংশ সিআরএআর বজায় রাখতে পারেনি।
এই হিসাবে, ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে মোট ২৭টি ব্যাংক সিআরএআর বজায় রাখতে সক্ষম হবে না যদি প্রতিটি ব্যাংকের শীর্ষ তিন ঋণগ্রহীতা খেলাপি হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংক এশিয়ার সাবেক এমডি আরফান আলী টিবিএসকে বলেন, "অনেক ব্যাংক গুটিকয়েক মানুষ বা প্রতিষ্ঠানকে বড় অঙ্কের লোন দিয়েছে। কিছুক্ষেত্রে ব্যাংকের দেওয়া লোনের একটা বড় অংশ অল্প কয়েকজন গ্রাহকের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। তাই এইসব মানুষ বা প্রতিষ্ঠান ডিফল্ট করলে ব্যাংকগুলো সমস্যায় পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।"
"এজন্য ব্যাংকগুলোকে তাদের লোন ছোট ছোট এমাউন্টে ছড়িয়ে দিতে হয়। তাতে, ব্যাংকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং তাদের ঝুঁকি কমে," যোগ করেন তিনি।
বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তফসিলি ব্যাংকগুলর স্থিতিস্থাপকতা সনাক্ত করতে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোর স্ট্রেস পরীক্ষা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিভাগ (এফএসডি)। এ পরীক্ষায় ব্যাংকগুলোর ক্রেডিট, মার্কেট ও কম্বাইন্ড শক দেখা গেছে।
আফটারশক ক্যাপিটাল টু রিস্ক-ওয়েটেড অ্যাসেট রেশিও (সিআরএআর) কে বাসেল III ক্যাপিটাল ফ্রেমওয়ার্কের সাথে সামঞ্জস্য রেখে হিসাব করা হয়।
ক্রেডিট শকের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে, যদি প্রতিটি ব্যাংকের নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) ৩% বৃদ্ধি পায়, তাহলে ছয়টি ব্যাংক ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সিআরএআর বজায় রাখতে ব্যর্থ হবে। তবে যদি বন্ধককৃত কোলাটেরালের ফোর্সড সেল ভ্যালু ১০% কমে যায়, তাহলে সব ব্যাংক এই অনুপাত বজায় রাখতে পারবে।
মার্কেট শকের ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি আমানতের সুদের হার ১% বৃদ্ধি পায়, তবে দুটি ব্যাংক ন্যূনতম সিআরএআর বজায় রাখতে ব্যর্থ হবে।
কম্বাইন্ড শকের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্রেডিট শক, এক্সচেঞ্জ রেট শক, ইক্যুইটি প্রাইস শক এবং ইন্টারেস্ট রেট শকের ফলাফলগুলোকে একত্রিত করে একটি ব্যাংকের কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয়।
কম্বাইন্ড শকে (শীর্ষ বড় ঋণগ্রহীতাদের ডিফল্ট এবং সর্বোচ্চ বকেয়া সেক্টরের এনপিএল বৃদ্ধি ব্যতীত) ১৩টি ব্যাংক ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সিআরএআর বজায় রাখতে ব্যর্থ হবে।
প্রতিবেদন অনুসারে, পূর্ববর্তী প্রান্তিকের তুলনায় সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে প্রি-শক সিআরএআর ১৪ বেসিস পয়েন্ট কমেছে। জুনে অনুপাত ছিল ১১.১৫%, যা সেপ্টেম্বরে ১১.০১% এ দাঁড়িয়েছে।
একটি ব্যাংক-ভিত্তিক পর্যালোচনা দেখায়, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো অন্যান্য প্রান্তিকের মতো এই প্রান্তিকে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সিআরএআর বজায় রাখতে পারেনি। সেপ্টেম্বরে তাদের অনুপাত জুনের তুলনায় ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমে ৬.১৮% হয়েছে।
প্রাইভেট ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় সিআরএআর রাখতে পেরেছে, কিন্তু জুনের তুলনায় অনুপাত কমেছে।
তাছাড়া বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এবং প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক - এই তিনটি বিশেষায়িত ব্যাংক সিআরএআর বজায় রাখতে পারেনি; উল্টো তাদের ঘাটতি বেড়েছে। তাদের সিআরএআর এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে -৩৫.৭৭% থেকে জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে -৩৭.২৭% এ হ্রাস পেয়েছে।
অন্যদিকে বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রয়োজনীয় সিআরএআর জুনে ২৬.৪৪% থেকে বেড়ে ৩০.৩৬% হয়েছে।