আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে সকল আরএমজি পণ্যে থাকবে ‘বাংলাদেশে তৈরি’ ট্যাগ
বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত সকল আরএমজি পণ্যে বাংলায় লেখা 'বাংলাদেশে তৈরি' (মেইড ইন বাংলাদেশ) ট্যাগযুক্ত লেবেল থাকবে, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকেই এটি চালু হবে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
তিনি জানান, বর্তমানে ইংরেজিতে লেখা 'মেইড ইন বাংলাদেশ' এর পাশাপাশি 'বাংলাদেশে তৈরি' ট্যাগ যুক্ত করার বিষয়ে কাজ করছেন তারা।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সমিতি (বিজিএমইএ) – শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নসহ অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করতে দেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল শ্রম আইনেও পরিবর্তন চায়। দেশের প্রধান রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও যা অন্যতম দাবি।
দেশের পোশাক শিল্পের শীর্ষ এই সংগঠন মনে করে, সব খাতের সমান অধিকার থাকা দরকার। বিজিএমইএ শ্রমিকদের জন্য যথাযথ ন্যায্যতা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে চায়।
শনিবার (১৮ মার্চ) রাজধানীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এসব কথা জানান।
এসময় তিনি বলেন, 'আমরা মনে করি, শ্রমিকদের যেকোনো জায়গায় ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলার অধিকার আছে। কিন্তু, সমস্যা হলো বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যারা ইপিজেডে বিনিয়োগ করছেন, তারা এটা চান না'।
তিনি বলেন, সরকার বিদেশিদের প্রেসক্রিপশন অনুসারে ইপিজেডগুলো গড়ে তুলেছে। পাশাপাশি সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকৃষ্ট করতেও অতিরিক্ত কিছু সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
এই বাস্তবতায়, 'বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা)-র কাছে আমরা আইন সংশোধনের মাধ্যমে শ্রমিক ইউনিয়ন গড়ার অধিকার দেওয়ার অনুরোধ করেছি, কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাতে বাধা দিচ্ছেন'।
ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুসারে আমরা তিনটি নাম জমা দিয়েছে। মন্ত্রণালয় একবার তা গঠন করলে, পোশাক প্রস্তুতকারকরা স্বেচ্ছায় নতুন বেতন কাঠামোকে গ্রহণ করবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে ফারুক হাসান জানান, এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পরও ২০২৯ সাল পর্যন্ত ইইউ, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের থেকে জিএসপি সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। তবে বিজিএমইএ এই সুবিধার মেয়াদ বাড়িয়ে অন্তত ২০৩২ সাল পর্যন্ত করতে চায়, এই উদ্যোগকে সরকারও সমর্থন দিচ্ছে। এবিষয়ে তারা ইতোমধ্যেই বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক, ইইউ এর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাসহ যুক্তরাজ্যের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করেছেন।
"আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট। এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর আমরা উন্নয়নের ফাঁদে পড়ে শাস্তি পেতে চাই না। ২০৩২ সাল পর্যন্ত জিএসপি সুবিধা থাকলে আমরা সহজে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার সুযোগ পাব'- যোগ করেন তিনি।
"আমাদের কাছে জিএসপি সুবিধার মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে দুটি যুক্তি আছে। প্রথমত, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আমরা অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছি, যেটা আসলে তাদের (যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের) সমস্যা। দ্বিতীয় যুক্তি হলো, বাংলাদেশ ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শরণার্থী গ্রহণের ঘটনা" বলছিলেন তিনি।
এসব বিষয় বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বাংলাদেশের জন্য জিএসপির মেয়াদ বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।
এসময় আরেক প্রশ্নের জবাবে ফারুক হাসান বলেন, ব্যবসাবাণিজ্যের অবস্থা এখন ভালো নয়। "যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমাদের রপ্তানিতে পতন হয়েছে, অবশ্য ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতোন নতুন বাজারগুলোয় আমরা জোরালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি"। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়া এবং উচ্চ উৎপাদন খরচের কারণেই রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে জানান তিনি।
তাছাড়া, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিও পোশাক শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। একইসঙ্গে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির চাপে ভোক্তাদের ক্ষয় সক্ষমতা কমছে, বায়াররাও পণ্য সংগ্রহের ধরন বদলাচ্ছে।
"এখন তারা ছোট ছোট লটে অর্ডায় দেয়, এতে উৎপাদনের পরিকল্পনা ব্যাহত হয়"- তিনি যোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ সহ-সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন, স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম, জেএফকে ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কফিল উদ্দিন প্রমুখ।