ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনে ব্যাংকপ্রতি ২৫ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছে বিএবি
'শেখ হাসিনা আন্তব্যাংক ফুটবল প্রতিযোগিতা' আয়োজনে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর কাছে ২৫ লাখ টাকা করে চাঁদা চেয়েছে ব্যাংক চেয়ারম্যানদের সংগঠন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। সংগঠনটি তাদের সদস্য ৪১ ব্যাংকের কাছে এ টাকা চেয়ে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে।
বিএবি'র সদস্যভুক্ত ৪১ বেসরকারি ব্যাংক চাঁদা দিলে এর মোট পরিমাণ দাঁড়াবে ১০.২৫ কোটি। ব্যাংকগুলোর কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি ফান্ড থেকে এ টাকা দেওয়ার কথা। ইতোমধ্যেই বেশকিছু ব্যাংক টাকা জমা করেছে, বাকি ব্যাংকগুলোও দ্রুত এই টাকা জমা করবে বলে জানা গেছে। ব্যাংকগুলো বিএবি'র এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছে।
ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজন নিয়ে সপ্তাহখানেক আগে একটি চিঠি সব বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিএবি'র উদ্যোগে 'শেখ হাসিনা আন্তব্যাংক ফুটবল প্রতিযোগিতা' আয়োজন করা হবে। এই উদ্দেশ্যে গঠিত কমিটির প্রথম সভা গত ৬ মার্চ 'বাংলাদেশ অলিম্পিক একাডেমির ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কে এম নুরুল ফজল বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিস্তারিত আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়, সব ব্যাংক ২৫ লাখ টাকা পে অর্ডারের মাধ্যমে বিএবি'র কার্যালয়ে পাঠাবে।
শিডিউল পাওয়া গেলে আগামী ২০ মার্চ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ টুর্নামেন্টের লোগো উন্মোচন করবেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ব্যাংকগুলোতে পাঠানো চিঠিতে বিএবি লিখেছে, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য সব ব্যাংক তাদের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য দিয়ে ফুটবল দল গঠন করবে। পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট ছাড়াও বিজয়ী দলকে ৫০ লাখ টাকা, রানার্সআপ দলকে ৪০ লাখ টাকা এবং তৃতীয় স্থান নির্ধারণী দলকে ৩০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এছাড়া শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়, সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়ের পুরস্কার দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এক্সিম ব্যাংকের এমডি ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া টিবিএসকে বলেন, এর আগে কোনো ব্যাংক এককভাবে বা দু-একটি ব্যাংক মিলে টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে। তবে বাংলাদেশে এই প্রথম এতোগুলো ব্যাংক মিলে এই ধরনের টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য আনন্দের। টুর্নামেন্ট আয়োজন নিয়ে ব্যাংকাররা খুবই উৎফুল্ল। এখনো দল গঠন করা হয়নি। প্রত্যেক ব্যাংকই কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে দল বাছাই করবে।
বিএবি একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে উল্লেখ করে অভিজ্ঞ এই ব্যাংকার বলেন, "ব্যাংকের চেয়ারম্যানরাই এই কমিটিতে আছেন। এখনো টুর্নামেন্টের তারিখ ও সময়সূচি ফাইনাল হয়নি। এ কমিটি থেকেই আমাদের এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জানানো হবে।"
তবে এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা (এমডি)। তারা বলছেন, ব্যাংক খাতে এখন লিকুইডিটি স্ট্রেস চলছে। ফলে অনেক ব্যাংক ৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিয়ে আমানত সংগ্রহের চেষ্টা করছে। এমন সময়ে ব্যাংকগুলোর কাছে টাকা চাওয়া উচিত হয়নি বলে তারা মনে করেন। তারা আরও জানান, সাধারণভাবে ব্যাংকগুলো ক্রীড়ার উন্নয়নে নিয়মিতই অনুদান দিয়ে আসছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো তাদের সিএসআর তহবিলের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ ব্যয়ের পরিবর্তে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পেছনে ৭৩ শতাংশ বা ৪৬২ কোটি টাকা ব্যয় করে ফেলেছে যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মের লঙ্ঘন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ নির্দেশিকা অনুসারে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ক্রীড়া এবং সংস্কৃতিসহ অন্যান্য খাতে সিএসআর ব্যয়ের ২০ শতাংশ ব্যয় করা যেতে পারে। রাষ্ট্রায়ত্ব ও বেসরকারি ৬১ ব্যাংক মিলে ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের পেছনে ১৩.৬৬ কোটি টাকা ব্যয় করেছিল।