২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন; পরিবহন খাতে অগ্রাধিকার
সরকার আসন্ন ২০২৪–২৫ অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে। এবারও পরিবহন অবকাঠামো সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোতে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এডিপি অনুমোদন করা হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম নিশ্চিত করেছেন, ২০২৩–২৪ অর্থবছরের এডিপির তুলনায় অনুমোদিত এডিপি ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
প্রস্তাবিত এডিপিতে সরকারি তহবিল থেকে মোট বরাদ্দের ৬২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং বৈদেশিক অর্থায়ন থেকে ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দ প্রাক্কলন করা হয়েছে। এটি চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের এডিপির যথাক্রমে ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশের বিপরীত।
প্রস্তাবিত এডিপিতে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের এডিপির তুলনায় চার হাজার কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ কমেছে।
তবে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির সঙ্গে তুলনা করলে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ বেড়েছে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ।
এদিকে, প্রস্তাবিত এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ চলতি অর্থবছরের এডিপি এবং সংশোধিত এডিপির তুলনায় যথাক্রমে ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ ও ১৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনসূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের সরকারি তহবিল থেকে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর চাহিদা ছিল এক লাখ ৮৫ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের চাহিদা ছিল ৯১ হাজার ১১ কোটি টাকা।
তবে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বর্তমানে রাজস্ব আহরণ, মুদ্রাস্ফীতি এবং ডলার সংকটসহ বিভিন্ন কারণে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সরকারি তহবিলের তুলনায় বৈদেশিক অর্থায়নের ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া খাত
প্রস্তাবিত এডিপিতে পরিবহন ও যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে সর্বাধিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের প্রায় ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বা ৭০ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৫ এবং পদ্মা রেল সংযোগের মতো প্রকল্পের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প এবং মাতারবাড়ি ১,২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪০ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা খাত তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা বা ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ। আবাসন ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে প্রায় ২৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা মোট প্রস্তাবিত এডিপি বরাদ্দের ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২০ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ।
এর পরে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাত প্রস্তাবিত এডিপি বরাদ্দের ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ, কৃষি খাত ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং পরিবেশ ও জলবায়ু খাত ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ পেয়েছে। শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা পেয়েছে ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং তথ্য প্রযুক্তি খাত পেয়েছে ১ দশমিক ৮১ শতাংশ।
পরিকল্পনা মন্ত্রীর তথ্যমতে, সরকার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিবহন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, আবাসন এবং কমিউনিটি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ফলে এসব খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে প্রস্তাবিত এডিপিতে চলতি অর্থবছরের তুলনায় এসব খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার, বিজ্ঞান, এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বরাদ্দও হ্রাস পেয়েছে।
যেমন চলতি অর্থবছরে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ ছিল ৭৫ হাজার ৯৪৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা, যেখানে নতুন এডিপিতে তা কমে ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা হয়েছে। একইভাবে, প্রস্তাবিত এডিপিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ৪৪ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা থেকে কমে ৪০ হাজার ৭৫১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা হয়েছে।
এদিকে, চলতি অর্থবছরের এডিপির তুলনায় প্রস্তাবিত এডিপিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, পরিবেশ, জলবায়ু এবং শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে।
শিক্ষা খাতে নতুন এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি ছয় লাখ টাকা, যা চলতি অর্থবছরের এডিপিতে ছিল ২৯ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। একইভাবে স্বাস্থ্য খাতে আগামী বছরের এডিপিতে চলতি বছরের বরাদ্দের তুলনায় অতিরিক্ত চার হাজার ৪৭৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।