গত বছরের ৫.৭৮ শতাংশ থেকে বেড়ে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.৮২ শতাংশ: বিবিএস
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া চলতি অর্থবছরে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) এ প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ থেকে সামান্য বেশি। এছাড়া এটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের দেওয়া ৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবং বিশ্বব্যাংকের ৫ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের বেশ কাছাকাছি।
এদিকে চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম সাতমাসের তথ্যের ভিত্তিতে করা হিসাব অনুসারে, এ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় আগের বছরের দুই হাজার ৭৪৯ থেকে কিছুটা বেড়ে দুই হাজার ৭৮৪ ডলার হয়েছে।
বর্তমান বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার প্রাথমিকভাবে সাড়ে সাত শতাংশ ধরা হয়েছিল, যা পরে সংশোধন করে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। বর্তমান মূল্যে বাংলাদেশের জিডিপি আগের অর্থবছরের ৪৫২ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫৯ বিলিয়ন ডলারে। ২০২১–২২ অর্থবছরে দেশের জিডিপি ৪৬০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের গবেষণা পরিচালক মনজুর হোসেন বলেন, প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের নিচে থাকবে বলে আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল।
তবে বিবিএসের বর্তমান হিসেব সাময়িক এবং ভবিষ্যতে পরিবর্তিত হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমদানি সংকোচন শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে। কাঁচামাল ও মেশিনারি আমাদানি কমার কারণে এ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি শিল্প উৎপাদনকে আরও ব্যাহত করতে পারে।
কৃষি খাত স্থিতিশীল থাকতে পারে, সেবাখাতে সামান্য প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, তবে শিল্পের প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন মনজুর হোসেন। 'সামগ্রিক ও বেসরকারি উভয় বিনিয়োগই কমেছে। যার ফলে লেনদেনের ভারসাম্য এবং মুদ্রা বিনিময় হারের মতো বিভিন্ন কারণে সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা আরও প্রভাবিত হয়েছে।'
এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, এ মুহূর্তে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, সরকারের কিছু আমদানি সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।
মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার পরামর্শও দেন তিনি। বিনিময় হার এবং সুদের হারও বাজার ভিত্তিক হওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন মনজুর হোসেন।
ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা কে মুজেরি বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বিনিয়োগ আশানুরূপ না বাড়ায় বাংলাদেশ ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বর্ণিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি।
'শিল্প ও কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। কোভিড মহামারির পরেও আমাদের প্রবৃদ্ধি কম ছিল, এবং কোভিড-পরবর্তী সময়ে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি। এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি আমাদের অর্থনীতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলেছে,' বলেন তিনি।
কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের করতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই সব খাতে মনোনিবেশ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী সরকারি নীতিগুলোকে সাজাতে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
খাতভিত্তিক পরিবর্তন
খাতভিত্তিক প্রবৃদ্ধির হিসাবে কৃষি ও শিল্পে প্রবৃদ্ধি কমতে এবং সেবা খাতে সামান্য বাড়তে দেখা গেছে। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, বিনিয়োগ-জিডিপি অনুপাত ৩০ দশমিক ৯৮ শতাংশে স্থিতিশীল রয়েছে।
কৃষি খাতে এ অর্থবছরে আনুমানিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ২১ শতাংশ যা আগের অর্থবছরের ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ থেকে কম।
শিল্প খাত এ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ থেকে কমেছে।
সেবা খাত এ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৮০ শতাংশে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থাৎ আগের ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ৪৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে, বিনিয়োগ-জিডিপি অনুপাত, দেশজ সঞ্চয় এবং জাতীয় সঞ্চয় যথাক্রমে ৩০ দশমিক ৯৮ শতাংশ, ২৭ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং ৩১ দশমিক ৮৬ শতাংশে রয়েছে।
আগের অর্থবছরের তুলনায় বিনিয়োগ শূন্য দশমিক ০৩ শতাংশ, দেশজ সঞ্চয় ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং জাতীয় সঞ্চয় ১ দশমিক ৯১ শতাংশ বেড়েছে।
বেসরকারি খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে সাড়ে ২৩ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ২৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।
এছাড়া বিবিএস চলতি অর্থবছরে ভোগের হার ৭৪ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রাক্কলন করেছে যা বিগত অর্থবছরে ছিল ৭২ দশমিক ৩৯ শতাংশ।