এলডিসি-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে: বিশেষজ্ঞবৃন্দ
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে এবং প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা বৃদ্ধি ছাড়া এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
রোববার (৯ জুন) 'বাংলাদেশ স্মুদ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি'র খসড়া নিয়ে আলোচনার জন্য আয়োজিত এক কর্মশালায় তারা বলেন, এ প্রতিযোগিতা সক্ষমতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশের 'হাইরোড ট্রান্সফরমেশন' কৌশলের ভিত্তিতে উন্নয়ন উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কিছু দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বর্তমানে বাংলাদেশ যে প্রণোদনা ও ভর্তুকি দেয়, এলডিসি থেকে উত্তরণের পরে তা আর থাকবে না। ফলে কঠিন বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে।
এ প্রতিযোগিতা মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়াতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভাগ যৌথভাবে এই কর্মশালার আয়োজন করে।
স্মুদ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজির জাতীয় পরামর্শক ড. এম এ রাজ্জাক বলেন, সামগ্রিক পরিবেশ ইস্যুগুলো বড় হবে। ফলে পরিবেশ সুরক্ষায় উদ্যোগ দরকার। সরকারের ব্যয়-ক্ষমতা বিশেষ করে 'ফিসক্যাল স্পেস' বাড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'আন্তর্জাতিক ঋণের সুদহার বাড়বে। পরিশোধ সক্ষমতা সৃষ্টিতে রপ্তানি বহুমুখীকরণসহ সামষ্টিক অর্থনীতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ দরকার।'
ড. রাজ্জাক বলেন, জি-২০-র সদস্য দেশগুলো বাড়তি সুরক্ষা ব্যবস্থা নিচ্ছে। এমন অবস্থায় নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া বাংলাদেশের জন্য বড় কাজ হবে।
তিনি বলেন, কম মজুরির শ্রম বাংলাদেশের সুবিধা ছিল। এটি কমে আসছে। 'এখন হাইরোড ট্রান্সফরমেশন দরকার। হাইরোড মানে গুণমান, উদ্ভাবন, ভালো পরিবেশ, দক্ষ কর্মশক্তি, শ্রমের মান এবং কমপ্লায়েন্স।'
এলডিসি উত্তরণের পর প্রবৃদ্ধি মন্থর হতে পারে উল্লেখ করে ড. রাজ্জাক বলেন, 'ট্রান্সফরমেশন ঠিকমতো না হলে প্রবৃদ্ধি বাড়ানো বড় চ্যালেঞ্জ হবে এবং বাংলাদেশ মধ্যম-আয়ের দেশের ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা থাকবে।'
'স্মুদ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি'র খসড়ায় বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য পাঁচটি পিলারের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে।
প্রথম পিলার হচ্ছে সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা সৃষ্টি করা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, স্থানীয় সম্পদ কাজে লাগানো এই পিলারের লক্ষ্য।
দ্বিতীয় পিলার হচ্ছে গ্রাজুয়েশনের পরে যে সুযোগ সৃষ্টি হবে সেটি কীভাবে কাজে লাগানো যায়। যেমন, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণ।
তৃতীয় পিলারের লক্ষ্য হচ্ছে বাণিজ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানো। আর চতুর্থ পিলারে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চম পিলারে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের কাছ থেকে কীভাবে কতটা সহযোগিতা পাওয়া যাবে, তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) পরপর ২০১৮ ও ২০২১ সালের ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার সমস্ত মানদণ্ড পূরণ করেছে। পাঁচ বছরের প্রস্তুতির পর ২০২৬ সালের নভেম্বরে এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ হবে।
এলডিসি থেকে উত্তরণকালে একটি দেশকে তার উন্নয়ন ও ব্যবসায়িক অংশীদারদের সহযোগিতায় এবং জাতিসংঘের সিস্টেম থেকে প্রস্তুতিমূলক সময়কালে জাতীয় 'স্মুদ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি' প্রস্তুত করার পরামর্শ দেয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, সঠিক নীতি ও কৌশল প্রয়োগ করা হলে দেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সব চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে পারবে, অতীতে যেভাবে কোভিড-১৯ ও অন্যান্য সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিল।
স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণে সঠিক কৌশল প্রস্তুতের ওপর জোর দেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের শক্তি হচ্ছে আমাদের পরিশ্রমী মানুষ, প্রাণবন্ত উদ্যোক্তা এবং তরুণ প্রজন্ম।'
অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসেকা আয়েশা খান বলেন, মধ্যম-আয়ের ফাঁদ এড়াতে স্ট্র্যাটেজিতে কাঠামোগত রূপান্তরকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।