এবার অনলাইনে পশু বিক্রি গত বছরের চেয়ে বেশি হতে পারে
দেশজুড়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এ বছর গতকাল (১৫ জুন) পর্যন্ত কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকার। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আশা করছেন, এবার কোরবানির পশু বিক্রি গত বছরের ৪ হাজার ২৩১ কোটি টাকাকে ছাড়িয়ে যাবে।
গতকাল তারা বলেন, আরও প্রায় একদিনের বেশি সময় রয়েছে কোরবানির পশু কেনার। এ সময়ের মধ্যে গত বছরের বিক্রির পরিমাণ ছারিয়ে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে।
অনলাইন বিক্রির তথ্য সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আলী রেজা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এখনও সুযোগ আছে গতবারের চেয়ে বেশি বিক্রি হওয়ার।'
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৯ হাজার ১০৬টি কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে অনলাইনে।
২০২৩ সালে কোরবানির আগে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিক্রি হয়েছিল ৪ লাখ ৬২ হাজার ৭২৪টি পশু। এর মধ্যে ৩ লাখ ৮০ হাজার ছিল গরু ও মহিষ এবং ৮২ হাজার ৭২৪টি ছিল ছাগল।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সারা দেশে ২৬২টি ওয়েবসাইট, ১ হাজার ২৪৯টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম, এবং ৪১২টি সরকারি অনলাইন ব্যবস্থাপনার উদ্যোগের মাধ্যমে এবার কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে। বরাবরের মতোই ঢাকা ও চত্তগ্রামেই সবচেয়ে বেশি পশু বিক্রি হয়েছে।
অনলাইন পশুর বাজার জনপ্রিয় হচ্ছে কেন
বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, অনলাইনে এখন পশু কেনা, সেগুলোর প্রসেসিংসহ সব ধরনের সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। এজন্য অনলাইনে পশু কেনায় মানুষের আগ্রহও বাড়ছে।
অনলাইনে পশু কেনার আগ্রহের পেছনে লাইভ ওজন হিসাব করে দাম নির্ধারণের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। এতে করে ক্রেতারা একদিকে যেমন প্রকৃত দামে পশু কিনতে পারেন, অন্যদিকে হাটের ভিড় এড়ানোরও সুযোগ পান। একইসঙ্গে বাজারে নগদ টাকা সঙ্গে নিয়ে পশু কিনতে যাওয়ার যে ঝুঁকি, সেটিও থাকে না।
বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, এবার অনলাইনেও পশুর দাম বেড়েছে। গত বছর যেখানে ৪৮০-৫০০ টাকা কেজি হিসেবে পশু বিক্রি হয়েছে, এবার সেটি ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
খাদ্যের দামসহ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়াই মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ বলে জানান খামারিরা।
ঢাকার বসিলার সাদেক এগ্রো এবারে ৯০০-র বেশি কোরবানির পশু অনলাইনে বিক্রি করেছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'মানুষ এখন হাটে গিয়ে ঠকতে চান না। যারা লাইভ ওয়েটে পশু কিনতে চান, তাদের পছন্দ এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। এ কারণে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে এটি।'
তিনি বলেন, এ বছর অনলাইনে বিক্রি বেশি হবে, কারণ মানুষ এখন ঝামেলা নিতে চায় না। উদ্যোক্তারা এখন পশু জবাই থেকে অন্যান্য প্রক্রিয়া পর্যন্ত কোরবানির সমস্ত দায়িত্ব নিচ্ছেন।
ভিসা বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের কান্ট্রি ম্যানেজার সাব্বির আহমেদ টিবিএসকে বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি, ঈদের হাটে ক্যাশলেস লেনদেন এ ধরনের উৎসবে কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করার সময় মানুষকে নিরাপত্তা, আত্মবিশ্বাস এবং স্বাচ্ছন্দ্য দিয়ে থাকে। সরকারের উদ্যোগে এই ডিজিটাল রূপান্তরের অংশ হতে পেরে আমরা খুশি।'
তিনি আরও বলেন, 'ক্যাশলেস লেনদেন প্রক্রিয়া সমাজের বেশিরভাগ মানুষকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কেনাকাটা করতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরবর্তী স্তরে নিয়ে যেতে আমরা সরকারের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে চাই।'
ডিজিটাল লেনদেন বাড়ছে
কোরবানির পশুর হাটগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে জনপ্রিয় হচ্ছে ডিজিটাল লেনদেন। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি, নকল বা ছেঁড়া-ফাটা নোট-সংক্রান্ত সমস্যা, ছিনতাই, মলম পার্টির খপ্পরে পড়তে হচ্ছে না।
এ বছর ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের স্থায়ী ও অস্থায়ী হাট রয়েছে ২০টি। প্রায় সবগুলো হাটেই ডিজিটাল লেনদেনের বুথ আছে। এর মধ্যে কিছু হাটে পিওএস মেশিন এবং মোবাইল আর্থিক পরিষেবার (এমএফএদ) মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেনের জন্য বুথ রয়েছে। তবে সবগুলো হাতেই এমএফএস আছে।
বুধবার ঢাকা উত্তর সিটির ৬টি পশুর হাটে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা চালু করা হয়। এউ হাটগুলো হলো: উত্তরা দিয়াবাড়ী, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সংলগ্ন হাট, মিরপুর সেকশন-০৬, ওয়ার্ড নং-০৬ (ইস্টার্ণ হাউজিং), ভাটারা সুতিভোলা, গাবতলী গবাদি পশুর হাট এবং মোহাম্মদপুর বছিলা।
ঢাকা উত্তর সিটির কোরবানির পশুর হাটে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করছে ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সিটি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক। এসব স্থানে মাস্টারকার্ড, অ্যামেক্স, ভিসা কার্ডসহ বিকাশ ও নগদের মত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহারের সুযোগ থাকছে।
২০২২ সালে 'স্মার্ট ডিএনসিসির কোরবানির হাট'-এর পাইলট কার্যক্রমে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছিল। ২০২৩ সালে ৪৪ কোটি টাকার লেনদেন হয়।