ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে ১০০ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা দেবে সিটি ব্যাংক
তারল্য সংকটে ভুগতে থাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (এফএসআইবি)-কে ১০০ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা দেবে বেসরকারি খাতের দ্য সিটি ব্যাংক।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকে এ তারল্য সহায়তার গ্যারান্টি দেওয়ার জন্য আবেদন করেছে এফএসআইবি। সেখানে সিটি ব্যাংকের কাছে থেকে তারল্য সহায়তা পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
আবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র ও ব্যাংকিং রেগুলেশন অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্টের (বিআরপিডি)পরিচালক মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই আবেদন মঞ্জুর করবে কিনা জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সিটি ব্যাংক যেহেতু তারল্য সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে, সেহেতু কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে। আবেদন পর্যালোচনা করে উপযুক্ত মনে হলে দ্রুততার সঙ্গে গ্যারান্টি দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, "বাংলাদেশ ব্যাংক যদি কালকেই (আজ সোমবার) তারল্য সহায়তা দেওয়ার জন্য অনুমোদন দেয়, তাইলে কাল থেকেই তারল্য সহায়তা পাবে এফএসআইবি। এমনিতে সিটি ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি ভালো। তাদের যথেষ্ট তারল্য থাকায় তারা সহায়তা করতে রাজি হয়েছে।"
গত সপ্তাহে ১০ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তা প্রদানে সম্মত হন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে তারল্য সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে সিটি ব্যাংক।
পর্যাপ্ত তারল্য না থাকায় ফার্স্ট সিকিউরিটির ইসলামী ব্যাংক গ্রাহকদের চাহিদা মোতাবেক অর্থ দিতে পারছে না বলে অভিযোগ করছিলেন অনেক গ্রাহক।
রোববার এফএসআইবির চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান টিবিএসকে বইলেন, "কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন পাওয়া নিয়ে আশাবাদী। সেটি পেলে আগামীকালই (আজ সোমবার) আমরা টাকাটা সিটি ব্যাংকের কাছে থেকে পেয়ে যাবো।"
দীর্ঘদিন তারল্য সংকটে ভোগা ডজনখানেক বাণিজ্যিক ব্যাংক রক্ষায় টাকা না ছাপিয়ে কীভাবে তাদের সংকট কাটানো যায়, তার উপায় হিসেবে এই ব্যবস্থার কথা বলেছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিয়োগ দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
এই প্রক্রিয়ায় আসতে রাজি সবল ও দুর্বল ব্যাংকগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে এমন সুযোগ তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক— যারা তারল্য সহায়তা পেতে দুর্বল ব্যাংকের গ্যারান্টর বা জামিনদার হচ্ছে।
সর্বশেষ এই অগ্রগতির আগেই সংকটে থাকা ৭টি ব্যাংক তারল্য সহায়তা পেতে বাংলাদেশ ব্যাংককে গ্যারান্টর হওয়ার জন্য আবেদন করেছে। এই ৭ ব্যাংক মিলে ২৫,০০০ কোটি টাকার বেশি নগদ অর্থ সহায়তা চেয়েছে।
আবেদন করা ৭ ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭,৯০০ কোটি টাকা সহায়তা চেয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। এছাড়া, ইসলামী ও ন্যাশনাল ব্যাংক ৫,০০০ কোটি টাকা; এক্সিম ব্যাংক ৪,০০০; গ্লোবাল ইসলামী ৩,৫০০ কোটী টাকা; সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ২,০০০ কোটি টাকা এবং ইউনিয়ন ব্যাংক ১,৫০০ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা চেয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত ৫টি ব্যাংকের জামিনদার হওয়ার জন্য চুক্তি সই করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অবশ্য চূড়ান্তভাবে তারা কী পরিমাণ সহায়তা পাবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকই বিষয়টি নির্ধারণ করে দেবে— যা এখন প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
যেসব ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, তারা এখন আন্তঃব্যাংক বাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ করে বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে গ্যারান্টির জন্য পাঠাবে। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার দেওয়া গ্যারান্টির আওতায় কোন ব্যাংক কত টাকা নিতে পারবে— তা বিবেচনা করে অনুমতি দেবে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে সরকারের পতনের পর দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করা হয়। এসব ব্যাংকের বেশিরভাগই আলোচিত এস আলম গ্রুপের কব্জায় ছিল। সবমিলিয়ে মোট ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এসব ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে এস আলম গ্রুপসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে পাচার করেছে বলে যে অভিযোগ রয়েছে; এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা।
ঋণের নাম করে 'অবৈধভাবে' টাকা বের করে নেওয়ায় তীব্র তারল্য সংকট পড়ে যায় ব্যাংকগুলো, যা নিয়ে দীর্ঘদিন কথা বলে আসছেন ব্যাংকিং খাতের বিশেষজ্ঞরা।