নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ত্রুটি থাকায় ইউনিয়ন ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ৪৫৬ কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত
এস আলম গ্রুপকে নামে-বেনামে ঋণ দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত ও নিয়োগে যথাযথ নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় ইউনিয়ন ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৪৫৬ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করেছে বর্তমান কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি ইউনিয়ন ব্যাংকের ২৬২ কর্মকর্তা ও এস আলম গ্রুপকে নামে-বেনামে ঋণ দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত ১৯৪ কর্মকর্তাকে কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করেছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। দুটি ব্যাংক থেকে এস আলমের সংশ্লিষ্ট অভিযোগে মোট ৪৫৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বর্তমান কর্তৃপক্ষ।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে শাস্তি পাওয়া কর্মকর্তাদের ২৪ জনই চট্টগ্রামের বিভিন্ন শাখার ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) ছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রামের খুলশী শাখার ব্যবস্থাপক খুরশিদ আলম।
তিনি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের (এস আলম) ব্যক্তিগত সচিব আকিজ উদ্দিনের ভাই। ব্যাংক দুটি গতকাল সোমবারই এ সিদ্ধান্তের কথা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানিয়ে দিয়েছে।
ইউনিয়ন ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক দীর্ঘদিন এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। গত আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকার পতনের পর ব্যাংক দুটিকে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগেই ব্যাংক দুটির বেশির ভাগ অর্থ নামে-বেনামে সরিয়ে নিয়েছে গ্রুপটি। এর ফলে ব্যাংক দুটি এখন তারল্যসংকটে ভুগছে। ব্যাংক দুটির নথিপত্র ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ইউনিয়ন ব্যাংকের গত ১৭ নভেম্বর ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় খরচ কমাতে ২৬২ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত হয়। চাকরিচ্যুত ব্যক্তিদের সবাই গত ফেব্রুয়ারিতে নিয়োগ পেয়েছেন। এই নিয়োগ দিতে ব্যাংকটি কারও কোনো পরীক্ষা নেয়নি।
চাকরিচ্যুত ব্যক্তির সবাই ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার ও ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্যাশ অফিসার পদের কর্মকর্তা। তাদের অধিকাংশই চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার।
স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২৭ আগস্ট ইউনিয়ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর নতুন স্বতন্ত্র পর্ষদ দায়িত্ব নিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিদর্শন করে জানায়, ব্যাংকটির ঋণের ১৮ হাজার কোটি টাকা বা ৬৪ শতাংশই নিয়েছে এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও এস আলমের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংক। ব্যাংকটি থেকে এস আলমে নামে-বেনামে ৩৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছেন এস আলম।
ব্যাংকটির নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় ব্যাংকটি এস আলমের ঘনিষ্ঠ ২৪ শাখা ব্যবস্থাপকসহ ১৯৪ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও নামে–বেনামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করে এস আলমকে ঋণ দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
ব্যাংকের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সব শাখায় বিশেষ পরিদর্শন শেষে নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। শাখা ব্যবস্থাপকদের আগামী ২১ দিনের মধ্যে তাঁদের সময়ে দেওয়া ঋণ আদায়ের নির্দেশনা দিয়ে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।