অক্টোবরে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে ৭৩ শতাংশ
সরকার ঘাটতি বাজেট পূরণে গত কয়েক বছরে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রার বেশি ঋণ গ্রহণ করলেও চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে।
চলতি অর্থবছরে সেপ্টেম্বরে সরকার ব্যাংক, সঞ্চয় ব্যুরো ও ডাকঘরের মাধ্যমে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি করেছে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। যা আগের মাস সেপ্টেম্বরের তুলনায় ২ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা বা প্রায় ২৩.১৪ শতাংশ কম।
সরকার অক্টোবরে সঞ্চয়পত্রে ঋণ নিয়েছে ৭৬৬ কোটি টাকা। যা আগের মাস সেপ্টেম্বরে ছিল ২ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে নিট বিক্রি কমেছে ৭২.৮৭ শতাংশ।
তবে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণগ্রহণ বেড়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে সরকার সকল ১৫ লাখ টাকার বেশি সকল সঞ্চয়পত্র স্কিমে সুদহার কমিয়েছে প্রায় ১ শতাংশ।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, এরই ফলে অনেকে সঞ্চয়পত্র কম কিনছে। একইসঙ্গে সরকার ঘাটতি বাজেট মেটাতে স্বল্প সুদে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে আগের অর্থবছরের তুলনায় এই অর্থবছরে বেশি ঋণ নিচ্ছে।
সরকার বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছরে এক লাখ কোটি টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। আগে নেওয়া মূল ও সুদসহ পরিশোধের পর নিট সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৩৫ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা, যা অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ২৮.৩৪ শতাংশ।
এ বিষয়ে গবেষণা সংস্থা- পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সীমা ও বিভিন্ন কড়াকড়ি রয়েছে। এছাড়া ঘোষণার বাইরে সঞ্চয়পত্র থাকলে জেল-জরিমানার বিধানও করা হয়েছে, বিধায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমছে।
তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্র ঋণ কমেছে এটা সরকারের জন্য ভালো। কারণ সঞ্চয়পত্রের সুদ হার ব্যাংক ঋণের চেয়ে অনেক বেশি। আগে অনেকে নামে বেনামি সঞ্চয়পত্র কিনতেন। এখন করাকরি আরোপ করায় সঞ্চয়পত্র ঋণ কমেছে।
এদিকে আগে ব্যাংক ঋণে সরকারের অনীহা থাকলেও চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে নিট ঋণ নিয়েছে ১৬ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা।
সরকারের ব্যাংক ঋণ বাড়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গত বছরেও সরকার লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ কম নিয়েছে, কারণ কোভিডের কারণে উন্নয়ন খাতে তেমন একটা ব্যয় করতে হয়নি। মহামারি পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় উন্নয়ন বাজেটের ব্যয় বাড়ছে। যার ফলে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ডিসেম্বরের প্রথম দুটি অ্যাকশন তারিখে সরকারের ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রার বেশি টাকা নিয়েছে। কারণ সম্প্রতি সরকারকে বড় বড় কয়েকটি বিল পরিশোধ করতে হয়েছে। এছাড়া, নতুন বছরে আরও বেশ কিছু বিল পরিশোধ করতে হবে। তাই আগামী মাসগুলোতে সরকারের ব্যাংক ঋণ আরও বাড়বে।