‘সয়াবিন মিলের রপ্তানি রমজানে মাংস, ডিমের দামে ভোগাবে’
সয়াবিন মিল রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার কারণে দেশের বাজারে প্রাণিখাদ্যের দাম বাড়ছে, যার প্রভাব পড়ছে ডেইরি, পোল্ট্রি ও মৎস্য খাতে। এই অবস্থা চলমান থাকলে আগামী রমজানে দুধ, ডিম, মাছ ও মাংসের দাম ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে বলে শঙ্কার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)।
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিডিএফএ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইমরান হোসেন দ্রুত সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধের দাবি জানায়।
বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইন সংকটের মধ্যে পোল্ট্রি, ডেইরি ও মৎস্য খাতের ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে সয়াবিন মিলের রপ্তানি বন্ধ রেখেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু হঠাৎ করেই এ মাসের ৩ তারিখ কেইস টু কেইস ভিত্তিতে রপ্তানি উন্মুক্তের প্রজ্ঞাপন দেয়া হয়। এতে করে দেশের বাজারে প্রাণিখাদ্যের এই উপাদানটির দাম ৪৪-৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ৫৫-৫৬ টাকায় উঠে যায়। প্রাণিখাদ্য তৈরিতে ৫০-৫৫ শতাংশ ভুট্টা এবং ২৫-৩০ শতাংশ সয়াবিন মিল ব্যবহার করা হয়।
সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, গত তিন বছরে গরুর মাংসের দাম ৫৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৬৫০ টাকায় উঠেছে। অন্যদিকে প্রাণিখাদ্যের দাম বেড়েছে ৩০-৪০ শতাংশ, যা মাংসের উৎপাদন খরচ বাড়িয়েছে প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ।
জানা গেছে, গত তিন বছরে গমের ভুষির দাম বস্তাপ্রতি ৮৫০ থেকে বেড়ে ১৫০০ টাকা, কুড়া ৩৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা, বুটের ভুষি ১১০০-১৪০০ টাকা হয়েছে। কোন একটা উপাদানের দাম বাড়লেই সিন্ডিকেট করে বাকিগুলোর দামও বাড়িয়ে দেয়া হয় বলে জানান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট।
মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, খাদ্যের দাম বৃদ্ধি মানেই হলো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া। উৎপাদন খরচ বাড়লে সেটার চাপ যেমন খামারিদের উপর পড়ে, তেমনি তা ভোক্তাকেও ভোগায়।
তিনি বলেন, "আমাদের দেশে 'সয়াবিন মিল' এর মোট চাহিদা বছরে প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ দেশীয় সয়াবিন তৈল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এবং অবশিষ্ট ২০ থেকে ২৫ ভাগ আমদানি করা হয়। যেখানে আমরাই আমদানির উপর নির্ভরশীল সেখানে কেন আমদানির অনুমতি দেয়া হচ্ছে সে প্রশ্ন আমাদের।"
তিনি বলেন, দ্রুত সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধের আদেশ না দিলে ফিডের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে করে রোজায় দুধ, ডিম, মাংস ও মাছ অতিরিক্ত মূল্যে কিনতে হবে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কখনোই তাদের পক্ষে কোন কথা বলে না। কোন একটা কারণে বিভিন্ন সংকটেও চুপচাপ থাকে। এখনো বিষয়টি নিয়ে তাদের কোন উদ্যোগ নেই।
আবার দীর্ঘদিন খামারিদের বিদ্যুৎ ও পানি বিলকে বাণিজ্যিকীকরণের আওতায় আনার দাবি করা হলেও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কোন উদ্যোগ নেয়নি। সংগঠনের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হলে তারা এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।