তিন মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১,২১৬ কোটি টাকা
২০২২ এর প্রথম ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআইএস) খেলাপি ঋণ ১ হাজার ২১৬ কোটি টাকা বা ৯.৩৪ শতাংশ বেড়ে ১৪ হাজার ২৩২ কোটি টাকা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ১৬ কোটি টাকা।
গত বছরের তুলনায় এবারের খেলাপি ঋণ ৩৭.৪৫ শতাংশ বেশি।
মার্চের শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের ২০.৬৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক আর্থিক স্থিতিশীলতা মূল্যায়ন প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, যাচাই-বাছাই ছাড়া নামে-বেনামে কাগজে প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে দুর্ভোগে পড়েছে ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এছাড়া গত দুই বছর গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধে নানা সুবিধা পেলেও চলতি বছর থেকে সেই সুবিধা না থাকায় আগের ন্যায় ঋণ পরিশোধে অনিহা রয়েছে গ্রাহকদের।
গত মার্চে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। জুনে এসে খেলাপি ঋণ ২৫ কোটি টাকা কমেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, "অনেক গ্রাহককে ঋণ দেওয়ার সময় যাচাই-বাছাই না করে ঋণ দিয়েছে। এর কারণে পুরো আর্থিক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে।"
"আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রায় অর্ধেক প্রতিষ্ঠানের ঋণ খুবই খারাপ অবস্থানে। এর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ পঞ্চাশ থেকে নব্বই শতাংশের মধ্যে।"
তিনি আরো বলেন, "কোভিডের কারণে ব্যাংকের ন্যয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রহকরাও নানা সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু সুবিধা শেষ হওয়ার পর যে ঋণ পরিশোধ করতে হবে সে ধরনের চিন্তাই তাদের নেই। অনেকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি হচ্ছে।"
একই সময়ে, ঋণ পরিশোধের সুবিধা প্রত্যাহারের (মোরেটোরিয়াম) কারণে এই বছরের শুরু থেকে নতুন খেলাপি গ্রাহকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মার্চ মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়ানো ঋণগ্রহীতাদের পুরনো অভ্যাস।
"যদি ঋণ খেলাপিদের বারবার সুবিধা দেওয়া হয়, ঋণের মেয়াদ বাড়ানো হয় এবং এককালীন কিস্তি সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে খেলাপিদের তালিকা বাড়বে," তিনি বলেন।
তিনি আরো বলেন, "ঋণখেলাপিদের হাত থেকে রেহাই পেতে হলে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। তা করতে ব্যর্থ হলে ঋণগ্রহীতারা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বা অন্যান্য কারণে সুবিধা গ্রহণ করবে। ফলে অন্য ঋণগ্রহীতারা ঋণ পরিশোধে আগ্রহী হবে না।"
২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিক জানুয়ারি-মার্চে খেলাপি ছিল ১০ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। তিন মাস পর জুনে এসব প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ২৫ কোটি টাকা কমে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা।
জুলাই-সেপ্টেম্বর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। এছাড়া গত বছরের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১২৫৯ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ১৬ কোটি টাকা। সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ালো ১৪ হাজার ২৩২ কোটি টাকা।
এদিকে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ১ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। খেলাপির হার ছিল ৭.৯৩ শতাংশ।
চলতি বছরের মার্চ শেষে মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ২৯ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮.৫৩ শতাংশ।