অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করায় মিয়ানমারে ১,২৫,০০০ শিক্ষক বরখাস্ত
ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া চলমান সামরিক অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করে নাগরিক আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য মিয়ানমারে এক লাখ ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে। মিয়ানমার শিক্ষক ফেডারেশনের একজন কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন।
মিয়ানমারে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর মাত্র কয়েক দিন আগে এ খবর এলো। কিছু শিক্ষক এবং অভিভাবক তাদের প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে এ শিক্ষাবর্ষ শুরুর কর্মসূচীকে বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষক ফেডারেশনের সে কর্মকর্তা জানান, শনিবার পর্যন্ত মোট এক লাখ ২৫ হাজার ৯০০ শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।অভ্যুত্থান বিরোধী প্রচারণার অভিযোগে ইতিমধ্যে তার নামও সামরিক জান্তার তালিকায় রয়েছে।
দুই বছর আগের এক পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে মোট ৪ লাখ ৩০ হাজার স্কুল শিক্ষক রয়েছেন।
পেশায় শিক্ষক, ফেডারেশনের সে কর্মকর্তা বলেন, "মানুষকে কাজে ফিরিয়ে আনতে এগুলো শুধুই তাদের হুমকি হিসেবে কাজ করছে। তারা যদি সত্যি সত্যি এত বেশি সংখ্যক লোককে চাকরিচ্যুত করে, তবে তো পুরো ব্যবস্থাই ভেঙে পড়বে"। তিনি আরও জানান যে, কাজে যোগ দিলে তার ওপর থেকে সমস্ত অভিযোগ সরিয়ে নেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করলেও জান্তা মুখপাত্র বা মিয়ানমারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারো কাছে পৌঁছতে পারে নি রয়টার্স। মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত পত্রিকা 'গ্লোবাল নিউ লাইট' শিক্ষাব্যবস্থা পুনরায় চালু করতে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছে।
অভ্যুত্থান শুরুর পর থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে স্বাস্থ্য ও বাণিজ্য খাতে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গত কয়েক মাসে শিক্ষা ব্যবস্থাও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শিক্ষকদের সংগঠনটি জানায়, অভ্যুত্থানের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ১৯ হাজার কর্মচারীকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।
সন্তানদের বাড়িতেই রাখছেন অভিভাবকেরা
জুনে শুরু হতে যাওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষের জন্য আগামী সপ্তাহে নিবন্ধন শুরু হবে দেশটিতে। তবে অনেক অভিভাবকই জানিয়েছেন যে তারা বাচ্চাদের স্কুলে যেতে দেবেন না।
মাইন্ট (৪২) নামক একজন অভিভাবক বলেন, "আমি আমার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করতে চাচ্ছি না কারণ আমি চাই না সে সামরিক একনায়কতন্ত্রের অধীনে পড়াশোনা করুক। তার নিরাপত্তা নিয়েও আমি উদ্বিগ্ন"। মাইন্টের ১৪ বছর বয়সী এক মেয়ে রয়েছে।
এদিকে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক শতাধিক মানুষ নিহতের প্রতিবাদে বিক্ষোভে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের একাংশও জানিয়েছে যে, তারা ক্লাস বর্জনের পরিকল্পনা করেছে।
অষ্টাদশী লুইন বলেন, "আমি তখনই স্কুলে যাব, যখন আমরা গণতন্ত্র ফিরে পাব"।
মিয়ানমারের শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থান এই অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে নিম্নে। গতবছর ৯৩টি দেশের ওপর করা এক বৈশ্বিক জরিপে মিয়ানমারের অবস্থান ছিল ৯২ এ।
- সূত্র-রয়টার্স