গুরুতর কোভিড আক্রান্তদের মাঝে দীর্ঘকালীন স্বাস্থ্য জটিলতার উচ্চঝুঁকি, বলছে গবেষণা
সুস্থ হয়ে উঠলেও কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের দীর্ঘকালীন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। পাশাপাশি, প্রাথমিকভাবে যারা করোনায় গুরুতর অসুস্থতার সম্মুখীন হন, পরবর্তীতে তাদের দীর্ঘমেয়াদী জটিলতার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বৃহস্পতিবার ন্যাচার সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে আসে।
গবেষণাটিকে আশঙ্কাজনক কোভিড রোগীদের ওপর চিকিৎসা পরবর্তী সময়ে চালানো এযাবতকালের বৃহত্তম গবেষণা ধরা হয়ে থাকে। কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে দীর্ঘকালীন প্রভাব বা 'লং কোভিডে'র ওপর এই গবেষণায় আলোকপাত করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব ভেটেরানস অ্যাফেয়ার্সের (ভিএ) তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে জিয়াদ আল-আলি এবং তার সহকর্মীরা গবেষণাটি পরিচালনা করেন। গবেষকরা, ৭৩ হাজারের অধিক কোভিড আক্রান্তের শারীরিক অবস্থার সাথে ভিএ পরিষেবা গ্রহণকারী প্রায় ৫০ লাখ সুস্থ ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার তুলনামূলক পর্যালোচনা করেন।
ছয় মাস পর, পূর্বে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের মাঝে নতুন করে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উদ্বিগ্নতা এবং হতাশা, মাসকাসক্তি, কিডনির অসুখসহ অন্যান্য সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার উচ্চঝুঁকি দেখা যায়।
ভিএ সেন্ট লুইস হেলথ কেয়ার সিস্টেমের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট শাখার প্রধান আল-আলি বলেন, "আমরা মানুষের ক্লান্তি, দুর্বলতা, স্মৃতিজনিত সমস্যা কিংবা ব্রেইন ফগ বা কুয়াশাচ্ছন্ন মস্তিষ্ক ইত্যাদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানতাম। কিন্তু, আপনি যখন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভারজনিত সমস্যা, স্ট্রোক, ব্রেইন ফগ, দুর্বলতা, রক্তস্বল্পতার সাথে হতাশা এবং উদ্বিগ্নতা সবগুলোকে একত্রিত করেন, তখন তা ভয়াবহ সাংঘর্ষিক রূপ ধারণ করে।"
তবে, শারীরিক ও মানসিক এই জটিলতাগুলোর ঠিক কোনগুলো সরাসরি ভাইরাস সংক্রমণের সাথে জড়িত, আর কোনগুলো পরোক্ষভাবে জটিলতার সৃষ্টি করছে তা নির্ধারণ করা গবেষকদের কাছে এখন নতুন চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।
কিছু জটিলতা সরাসরি ভাইরাসজনিত প্রদাহের কারণে হয়ে থাকলেও, অন্যান্য সমস্যা কোভিডের কারণে জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে বলে গবেষকদের ধারণা।
"কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মানুষ স্বেচ্ছায় আইসোলেশন গ্রহণ করার পাশাপাশি কোয়ারেন্টাইনে ঘরে অবস্থান করে। শারীরিক চলাফেরা ও কার্যক্রম সীমিত হয়ে যাওয়া, পরিবর্তিত খাদ্যাভাস এবং অন্যান্য পরিবর্তন ঘটিত কারণেও কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে," বলেন আল-আলি।
কোভিড-১৯ পরবর্তী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে শ্বসনযন্ত্রের জটিলতা, স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাধি, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, বিপাক এবং কার্ডিওভাসকুলার জটিলতা, অস্থিরতা, অবসন্নতা, হাড় ও পেশী ব্যথা এবং রক্তাস্বল্পতার উপস্থিতি দেখা গেছে।
এছাড়া, গবেষকরা ব্যথার ওষুধসহ অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট এবং অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ওষুধের ব্যবহার বৃদ্ধির প্রবণতাও লক্ষ্য করেছেন।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এমন ১৩ হাজার ৬০০ মানুষের পরবর্তী সময়ে শারীরিক অবস্থার পর্যালোচনা করেছেন গবেষকরা। ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা প্রায় ১৪ হাজার মানুষের শারীরিক অবস্থার সাথে তারা তুলনামূলক পর্যালোচনা করেন।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যায় যে, কোভিড আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা ব্যক্তিদের মাঝে ইনফ্লুয়েঞ্জার আক্রান্তদের চেয়ে পরবর্তীতে ফুসফুসজনিত ও অন্যান্য জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
তবে, কোভিড আক্রান্ত হলেই যে কেউ নিশ্চিতভাবে দীর্ঘকালীন শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হবে এমন কোনো বিষয় নেই বলেও উল্লেখ করেছেন গবেষকরা।