বাড়তি ভ্যাকসিন বিলিয়ে দিতে ধনী দেশগুলোর প্রতি বিশ্বনেতাদের আহবান
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কিছুটা কমে এলেও, বন্ধ হয়নি মৃত্যুর মিছিল। এমতাবস্থায়, জরুরি ভিত্তিতে উদ্বৃত্ত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে বিতরণের জন্য যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য ধনী রাষ্ট্রের প্রতি আহবান জানিয়েছেন ১৬০ জন সাবেক বিশ্বনেতা।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে যেখানে হাজারো মানুষ অসহায় মৃত্যুবরণ করছে, সেখানে ভ্যাকসিন নষ্ট করা অত্যন্ত অনৈতিক কাজ বলে মন্তব্য করেছেন তারা। তাই অতিসত্ত্বর বাড়তি ভ্যাকসিনগুলো আকাশপথে অপেক্ষাকৃত কম উন্নত দেশে পাঠানোর জোর দাবি জানিয়েছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ।
যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনের উদ্যোগে একটি চিঠিতে এই আহবান জানানো হয়।
আগামী সপ্তাহে ইতালির রোমে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জি-২০ সম্মেলন। তাই ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘিকে উদ্দেশ্য করেই চিঠিটি লেখা হয়েছে।
গর্ডন ব্রাউন বলেন, "উন্নত ও ধনী দেশগুলো অনেক বেশি পরিমাণে ভ্যাকসিন অর্ডার করেছিল এবং মজুত করে রেখেছিল। তারা সেসব ভ্যাকসিন দ্রুত বিতরণও করছে না, তাই ব্যবহারের আগেই ভ্যাকসিনগুলোর মেয়াদ শেষ হয়ে যেতে পারে।"
গর্ডনের লেখা চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন ৩৬ জন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, ৩০ জন সাবেক মন্ত্রী এবং আরও ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। এদের মধ্যে রয়েছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি-মুন, নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক এবং ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফার্নান্দো কারদোসো।
এদিকে সারাবিশ্বে ইতোমধ্যে মোট ৬ বিলিয়ন কোভিড ভ্যাকসিন ডোজ বিতরণের জন্য নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে ৭০ শতাংশ ভ্যাকসিনই হাতেগোনা কয়েকটি দেশের কব্জায়। স্বল্প আয়ের দেশগুলোর মাত্র ২ শতাংশ নাগরিক কোভিড ভ্যাকসিন পেয়েছেন বলে জানা যায়।
চিঠিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডাতে এই মুহূর্তে ২৪০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন অব্যবহৃত রয়ে গেছে। যেসব দেশ এই মুহূর্তে ভ্যাকসিন সংকটে ভুগছে, সেসব দেশে অব্যবহৃত ভ্যাকসিন বিমানে করে দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব। আগামী চার মাসের মধ্যে সব মিলিয়ে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ভ্যাকসিন ডোজ স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে পৌঁছানো উচিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তারা।
আগামী বছরের বসন্তের মধ্যেই বিশ্বের ৭০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাড়তি ভ্যাকসিন বিতরণ কার্যক্রম যদি সঠিকভাবে পরিচালনা করা হয়, তাহলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব বলে উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
আরও বলা হয়, "বিস্তারিত পরিকল্পনা না থাকলে, চলতি বছরের শেষ দিকেই ১০০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন ডোজের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাবে। আমরা যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেই, তাহলে ২০২২ সালের জানুয়ারির মধ্যে এই সংখ্যাটা ২০০ মিলিয়ন ছাড়াতে পারে।"
আগামী বছরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ১০০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন ডোজ বিতরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। অন্যদিকে, ৫০০ মিলিয়ন ডোজ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সব মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে ৮৭০ মিলিয়ন ভ্যাকসিন ডোজ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জি৭-এর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো।
মূলত জাতিসংঘের কোভ্যাক্স প্রোগ্রামের আওতায় এই ভ্যাকসিনগুলো বিতরণ করা হবে। বিশ্বের প্রতিটি দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তারা।
- সূত্র: বিবিসি