ভারতে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোমে’ আগ্রহী কর্মজীবীরা, লাভবান হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোও
কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে বিশ্বব্যাপী চালু হয় লকডাউন আর বাড়ি বসে কাজ। গত ডিসেম্বরে চীনের উহান থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর মোটামুটি ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই লকডাউন আর 'ওয়ার্ক ফ্রম হোম' চলছে। প্রায় ৬ মাস পর ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে তুলে দেওয়া হচ্ছে এই নিয়মও। তবে সম্প্রতি ভারতের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মহামারির আতঙ্কে গণপরিবহণ পরিষেবা ব্যবহার এড়াতে চাইছেন দেশটির অধিকাংশ অফিসযাত্রী। পরিবর্তে তারা বাড়ি থেকে অফিসের কাজ সারতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন। আর কর্মীরা বাড়ি বসে কাজ করায় লাভবান হয়েছে সংস্থাও। এর ফলে অফিসে জন্য সম্পত্তি ভাড়া বাবদ অর্থ বাঁচছে, যা কর্মীদের সুবিধায়, প্রশিক্ষণে ও গবেষণা খাতে ব্যয় করা যাচ্ছে। তা ছাড়া দেশের যে কোনও অংশ থেকে কর্মী নিয়োগ করতেও অসুবিধা হচ্ছে না।
ভারতের অ্যাসোসিয়েটেড চেম্বার্স অফ কামার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (অ্যাসোচ্যাম) এবং প্রাইমাস পার্টনার্স সংস্থার যৌথ সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, চাকুরিজীবীদের এক-চতুর্থাংশ বাড়ি থেকে অফিসের কাজ করতে আগ্রহী অথবা নিজ সংস্থার প্রয়োজন অনুযায়ী কাজের সময়ে রদবদল করার নীতি নির্ধারণে বিশ্বাসী।
দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দরাবাদ, কলকাতা, আহমেদাবাদ ও পুনে শহরের বাসিন্দাদের উপরে এই সমীক্ষা করা হয়।
সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে ১৮% চাকরিজীবী পুরোপুরি বাড়ি থেকে কাজ করতে বেশি আগ্রহী, ৫৬% আংশিক ভাবে বাড়ি থেকে অফিসের কাজ করায় আগ্রহী এবং ২৬% অফিসে গিয়ে কাজ করতে চান বলে জানিয়েছেন।
উত্তরদাতাদের মধ্যে লকডাউন পর্বে বাড়ি থেকে অফিসের কাজ করেছেন ৭৯%, ছুটিতে বাড়ি থেকে কাজ করেছেন ১১% এবং অফিসে গিয়ে কাজ করেছেন ১০% কর্মী।
প্রতিবেদন বলছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও লাভবান হয়েছে এতে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে পুনের এক তথ্য প্রযুক্তি সংস্থার কথা। দেখা গিয়েছে, ওই সংস্থা ইতোমধ্যে ইন্দোর, ভোপাল, জবলপুর, বিজয়ওয়াড়া, চণ্ডীগড়, পটনা ও নাসিক থেকে কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে এবং তাদের বাড়ি থেকে পাকাপাকি কাজের সুবিধা দেওয়ায় কোনও সমস্যাও দেখা দেয়নি।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, গণ পরিবহণ পরিষেবা অনেকাংশে চালু হলেও ৭৩% চাকরিজীবী এখনও বাড়ি থেকেই কাজ করতে চান। এর মূল কারণ কোভিড সংক্রমণের ভীতি। এর জেরে দেশের বড় শহরগুলোতে গণপরিবহণ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটতে চলেছে বলেও রিপোর্টে অভিমত প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রাইমাস পার্টনার্স সংস্থার সিইও নিলয় ভার্মার মতে, যাত্রীদের আস্থা ফিরে পেতে বেশ কিছু কড়া স্বাস্থ্য নিয়মাবলী মেনে চলতে হবে গণপরিবহণ সংস্থাগুলোকে। সেই সঙ্গে যুক্ত করতে হবে প্রযুক্তিগত সহায়তা, যা যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি করবে। তবে যাত্রী সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় এবং সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলতে গিয়ে বেসামাল সংস্থাগুলি কী ভাবে ভবিষ্যতে পরিবহণ পরিষেবা সচল রাখতে পারবে, তা এখনও গবেষণার বিষয় বলে জানিয়েছে সমীক্ষা রিপোর্ট।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস