মহামারীকালে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সফলতায় যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলেছে এশিয়া
মহামারীতে বিশ্ব যখন লাজেহাল, তার মধ্যেই নতুন বিস্ময় সৃষ্টি করেছে এশিয়া। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সাফল্যের দিক থেকে কিছু দেশ ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশকে। সিঙ্গাপুর আর স্বশাসিত হংকং আছে এদিক থেকে শীর্ষে, যথাক্রমে; ১ম ও ২য় স্থানে। তবে অন্যরাও যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ভালো করেছে।
জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রভাব নিয়ে তৈরি করা চলতি বছরের ব্লুমবার্গ এফিশিয়েন্সি ইনডেক্স শীর্ষক সারণিতে দেখা গেছে এশীয় দেশগুলোর জয়-জয়কার। সেই তুলনায় অনেক পিছিয়ে ৫৫তম অবস্থানে চলে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। ৫৩তম অবস্থানে থাকা রাশিয়ার চাইতেও যা শোচনীয় অবস্থান।
২০১৩ সালে প্রথম সারণি তালিকাটি তৈরি হয়। তারপর থেকে প্রতিবছর শেষে এটি নানা দেশের জনস্বাস্থ্য খাতের সাফল্য ও ব্যর্থতা তুলে ধরতে প্রকাশ করা হচ্ছে। তালিকা তৈরিতে কোনো দেশের গড় আয়ু ও চিকিৎসা খাতে সরকারি ব্যয়ের মতো দিকগুলো সূচক হিসাবে ব্যবহার করে এসবের ভিত্তিতে একটি দেশের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা কতটুকু সফলতা অর্জন করছে তা নির্ধারণ করা হয়।
চলতি বছরের তালিকায় অন্যতম নির্দেশক হিসেবে স্থান পেয়েছে বিশ্বের ৫৭টি বৃহৎ অর্থনীতির দেশে কোভিড-১৯ এর কারণে মৃত্যুহার এবং পণ্য ও সেবা উৎপাদনে তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব।
এসব হিসাবেই ভালো করেছে এশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতিগুলো। ফলে তালিকায় তারা আগের যে স্থানে ছিল সেখান থেকে তাদের বেশ উন্নতি হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মুখে আগ্রাসী তৎপরতার মধ্য দিয়ে মৃত্যুহার কম রাখতে পারা এবং অর্থনীতিকে তুলনামূলক সচল রাখতে পারাটাই ছিল সাফল্যের মূল কারণ। অন্যদিকে, দুদিক থেকেই ব্যর্থ হয়ে তালিকায় শেষদিকে ব্রাজিল ও রাশিয়ার সঙ্গে ঠাঁই হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। অর্থনীতির দুর্বল পূর্বাভাসও বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির জন্য অপমানজনক এই অবস্থান তৈরি করে।
ব্যাংককে অবস্থিত চুলাংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিনের অধ্যাপক পিসোন্থি চংত্রাকূল বলেন, 'প্রাকৃতিক সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে সাধারণত এমন দেশগুলোতেই সবচেয়ে কার্যকর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দেখা যায়। কারণ এসব দেশে কৌশলী নীতি প্রণয়নে গুরুত্ব দিয়ে উদ্ভাবনী পদ্ধতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।'
'তবে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় যেসব দেশ জনস্বাস্থ্য বিশারদদের পরামর্শ শুনে সরকারি নীতি বাস্তবায়ন করেছে, তারাই বেশি সফলতা পেয়েছে। এক কথায় বলা যায়, সরকারি সংস্থা আর মাঠ পর্যায়ের সমন্বয় যাদের ভালো, তারাই এগিয়ে গেছে। এই ব্যবস্থায় জনগণও একটি স্বচ্ছ বার্তা পেয়েছে। ফলে তারা পান আরও বেশি সতর্ক থাকার সুযোগ,' তিনি যোগ করেন।
র্যাংকিং নির্ধারণে ২০২০ সালের সারণিতে প্রধানত দুইটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। এজন্য অক্টোবর নাগাদ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের দেওয়া জিডিপি ভিত্তিক অর্থনৈতিক পূর্বাভাসকে যোগ করা হয়। তার সঙ্গে মহামারী প্রতিটি দেশের কী পরিমাণ প্রাণহানি ঘটিয়েছে সেটাও মানদণ্ড হিসাবে গণনা করা হয়েছে।
যেমন; কোন দেশের অর্থনীতি যদি চলতি বছর ৬ শতাংশ সংকোচনে পড়ে তাহলে দেশটি ৬ পয়েন্ট কম পাবে। কিন্তু, ১ লাখ মৃত্যু বা সমান সংখ্যায় নতুন সংক্রমণের ভিত্তিতে স্কোর কমবে ১১.৫ পয়েন্ট। যুক্তরাষ্ট্র এখানে এসেই তার অবস্থান হারায়।
- সূত্র: ব্লুমবার্গ