যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যে টিকাদানে উৎসাহিত করতে দেওয়া হচ্ছে ১০০ ডলার, পিজ্জা ও ট্যাক্সি রাইড
জনসাধারণকে সময়মতো ভ্যাকসিন নিতে উৎসাহিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোতে ১০০ ডলার করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে বিনামূল্যে পিজ্জার বিতরণ ও ট্যাক্সি রাইডের মাধ্যমে ভ্যাকসিন নিতে উৎসাহী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে দুটি দেশেই ভ্যাকসিন গ্রহণকারীর হার কমতে শুরু করেছে। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ভাইরাসজনিত মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২ হাজার। গত ৩ মাসে দেশটিতে নতুন সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিন প্রায় ৬০ হাজার মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে।
অপরদিকে যুক্তরাজ্যে গত ৭ দিনে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫৪৮ জন নতুনভাবে করোনা আক্রান্ত হয়েছে। যদিও নতুন আক্রান্তের হার আগের সপ্তাহের চেয়ে ৩০ শতাংশ কমেছে, তবে মৃত্যুহার বেড়েছে ১৬.৭ শতাংশ। গত ২৮ দিনে দেশটিতে ৫২৫ জন মৃত্যুবরণ করেন। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনের নেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজ সিদ্ধান্তে দুটি দেশেই ভ্যাকসিনে গ্রহণকারীদের হার বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ১০০ ডলারের প্রণোদনা
ভ্যাকসিন নেওয়ার হার বাড়াতে গত শুক্রবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রদেশগুলোকে প্রণোদনা দেওয়ার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুনভাবে ভ্যাকসিন নেয়া যেকোনো নাগরিককেই ১০০ ডলার প্রদান করা হবে।
এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ২০ লাখ ফেডারেল কর্মীদের জন্যেও প্রেসিডেন্ট বাইডেন কড়াকড়ি নিয়ম জারি করেন। বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, কর্মচারীদের জন্য ভ্যাকসিন গ্রহণের প্রমাণ দেখানো, অথবা ভাইরাস পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেকেরও কম মানুষ পূর্ণ ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। এদিকে হোয়াইট হাউজ থেকে প্রকাশিত বক্তব্যে জো বাইডেন বলেন, করোনা ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণেই নতুনভাবে এই দুরবস্থা দেখা দিয়েছে।
১০০ ডলারের এই প্রণোদনা আগেই যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাদের জন্য অন্যায় মনে হতে পারে অনেকের কাছে, এমনটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "যদি বেশি মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা যায় তাহলে আমরা সকলেই লাভবান হবো"
'আমেরিকান রেস্কিউ প্ল্যান লেজিসলেশন' থেকে ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলার নিয়ে প্রণোদনার জন্যে এই তহবিল গঠন করা হবে।
এছাড়াও বাইডেনের ঘোষণা অনুযায়ী, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসায়ীদের ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য বেতনসহ ছুটি দেওয়া হবে। অপরদিকে ভ্যাকসিন নিতে না চাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদেরকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না, তবে হোয়াইট হাউজের এই উদ্যোগ অন্যান্য কর্মচারীদের জন্যে উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
গত মাসের একটি প্রতিবেদন উল্লেখ করা হপ্য, করোনাভাইরাসে মৃত্যু হওয়া ৯৯ শতাংশ মানুষই ভ্যাকসিন নেননি।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৭০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ টিকার অন্তত একটি ডোজ নিয়েছেন। তবে এই হার পুরো যুক্তরাষ্ট্র জুরে একই রকম নয়। দক্ষিণ ও পশ্চিমের অঞ্চলগুলোতে বর্তমানে করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে।
নিউ মেক্সিকোর ১৪-১৭ জুনের মধ্যে ভ্যাকসিন প্রাপ্ত সবাইকে ১০০ ডলার করে দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের এই দুঃসময়ে এমন একটি সিদ্ধান্ত আদতেই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য লাভজনক হচ্ছে এমনটাই দেখা যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ এই সময়ের মধ্যে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা বা অন্যান্য ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন।
খাবার কেনায় মূল্যছাড় ও বিনামূল্যে ট্যাক্সি রাইডের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের প্রণোদনা
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বক্তব্য, কম বয়সীদের ভ্যাকসিন নিতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উবার, বোল্ট, ডেলিভারু, এবং পিজ্জা পিলগ্রিমের মত প্রতিষ্ঠানগুলোও সরকারের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্ম হয়েছে।
এর আগেও উবার এবং বোল্ট এধরনের উদ্যোগ নিয়েছিল, তবে বর্তমানে তরুণদের মধ্যে ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রবণতা নতুন করে বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে।
এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি টিকা প্রদানকারী দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে ইংল্যান্ড। এর জের ধরে গত ১৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রী বোরিস জনসন কোভিডের বিধি-নিষেধ শিথিল করেন। একই সময়, নাইটক্লাবে যাওয়ার জন্য আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ ডোজ টিকা নিতে হবে এমন নিয়মও জারি করেন তিনি।
বোরিস জনসন তার এক বক্তব্যে বলেন, তরুণদের মধ্যে ভ্যাকসিন নেওয়ার আগ্রহ যদিও বেশি, আমরা চাই তাদের সংখ্যা আরও বাড়ুক। নিজের পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের জন্যই সবার ভ্যাকসিন নেওয়া প্রয়োজন।"
গত বছরের ডিসেম্বরে দেশটিতে ৮০ বছরের বেশি বয়সী মানুষদের প্রথমে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। এরপর থেকেই টিকা কেন্দ্রগুলো তরুণদের ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্যে কাজ করছে।
এ বছরের জুনে ৩০ বছরের কম বয়সীদেরও ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য নির্বাচিত করা হয়। সরকারি হিসাব মতে, এখন পর্যন্ত ১৮ থেকে ২৯ বয়সীদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ মানুষ প্রথমবার ভ্যাকসিন নিয়েছেন।
এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ভ্যাকসিনের ৮.৪৭ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। দেশটির মোট জনসংখ্যার ৮৮.৪ শতাংশ (৪.৬৭ কোটি) প্রথম ডোজ নিয়েছেন, এবং ৭১.৮ শতাংশ (৩.৭৯ কোটি) দুটি ডোজ নিয়েছেন।
ভ্যাকসিনের হার বাড়ানোর জন্যে দেশটির সরকার বেশ কিছু অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করেছে। লন্ডনের টেট মডার্ন গ্যালারি এবং ব্রিস্টলের প্রাইমার্ক ক্লোদিং স্টোরের মত স্থানে বসানো এসব কেন্দ্রে গত সপ্তাহে ৬ লাখেরও বেশি মানুষ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন বলে জানা যায় সিএনএনের এক প্রতিবেদন থেকে।