সেনা অভ্যুত্থানের ফলে মিয়ানমারের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে
মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের প্রভাবে দেশটির অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে ধারণা করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ইতোমধ্যেই বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই মিয়ানমারের ওপর অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তেমন প্রভাব পড়বে না এমন সম্ভাবনাও আছে। মিয়ানমারের বেশিরভাগ বিনিয়োগই আসে এশিয়ান দেশগুলো থেকে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত বছর মিয়ানমারে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে সিঙ্গাপুর, দেশটির অনুমোদিত বিনিয়োগের ৩৪ শতাংশই করেছে সিঙ্গাপুর। ২৬ শতাংশ বিনিয়োগের মাধ্যমে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে হংকং।
গত সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া ২০২০ অর্থবছরে মিয়ানমার ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) প্রতিশ্রুতি পায়। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এবছর এ সংখ্যা এমনিতেই কমে যাবে এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চীন লাভবান হতে যাচ্ছে?
মিয়ানমারে ৩-৪ বিলিয়ন বিদেশি বিনিয়োগ তদারকি করছে সরকারি সংস্থা ভ্রিয়েনস অ্যান্ড পার্টনারস। এগুলো মূলত অবকাঠামো খাত, শক্তি খাত ও টেলিযোগাযোগ খাতের বিনিয়োগ।
সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা সহযোগী হানস ভ্রিয়েনস জানিয়েছেন, "এসব বিনিয়োগই এখন হুমকির মুখে আছে। ইতোমধ্যেই কোভিড-১৯ মহামারির আঘাতে দেশ বিপর্যস্ত। তার ওপর এ অবস্থা।"
বিদেশি বিনিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞার উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়তে পারে, বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলো ও জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলো মিয়ানমারে বিনিয়োগের ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্থ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে এসব ক্ষেত্রে চীন সুযোগ পেতে পারে বলে জা্নিয়েছেন হানস ভ্রিয়েন। "এটিই একমাত্র দেশ যার দ্বারস্থ হতে পারে প্রতিষ্ঠানগুলো।" বলেন তিনি।
নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইয়াঙ্গুন ভিত্তিক একজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত অভ্যুত্থান মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হওয়ায় তিনি স্বস্তি বোধ করছেন। "এখন পর্যন্ত অবস্থা শান্তিপূর্ণ আছে, নেই কোনো প্রতিবাদ-আন্দোলন। তবে নিশ্চিত ভাবেই জনগণ মর্মাহত।" এর প্রভাব অর্থনীতির ওপর পড়বে বলেও মনে করছেন তিনি।
নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কম হতে পারে, কারণ বেশিরভাগ বিনিয়োগই আসে এশিয়ার দেশগুলো থেকে। "এর মনোস্তাত্ত্বিক প্রভাবও পড়বে, তবে আমাদের অর্থনীতির দিকে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় আমরা পশ্চিমা বিনিয়োগের ওপর নির্ভরশীল নই," বলেন তিনি। তিনি জানান নিষেধাজ্ঞার চেয়ে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করে আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া উত্তম পন্থা।
মার্কিন অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি স্টিফেন লামার জানান, মিয়ানমারে ব্যবসা করেছে এমন অনেক ট্রেড গ্রুপই সেনা অভ্যুত্থানের খবরে চিন্তিত হয়ে পড়েছে।
"মিয়ানমারের জনগণের জন্য আমরা সমব্যথী, এ সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক সমাধান যার মাধ্যমে দেশটির সাধারণ জনগণের কষ্টে অর্জিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হবে না, এমন সমাধানই কাম্য।"
এইচ অ্যান্ড এমের এখন মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটি বর্তমান পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখছে, তবে খুব শীঘ্রই পরিকল্পনা বদলের সম্ভাবনা নেই। "আমরা নিবিড়ভাবে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি। তবে ভবিষ্যতে কী হতে পারে এব্যাপারে এখনই ধারণা করতে চাইনা," বলেন ওই কর্মকর্তা।
বাণিজ্য বাধা
ইতোমধ্যেই সেনা অভ্যুত্থানের প্রভাব পড়েছে একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর। মিয়ানমার ভিত্তিক ইয়োমা স্ট্র্যাটেজিক হোল্ডিংস সিঙ্গাপুরে সাময়িকভাবে বাণিজ্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি রিয়েল এস্টেট, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, অটোমেটিভ ও অর্থনৈতিক পরিষেবা নিয়ে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেলভিন পান জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে সাময়িক ভাবে বাণিজ্য বন্ধ রাখা জরুরি ছিল।
"কী হচ্ছে সেখানে তা বোঝাই কঠিন। ইয়াঙ্গুন বা এর বাহিরেই টেলীফোন সংযোগ পাওয়া যাচ্ছিল না," বলেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ান তেল ও গ্যাস প্রতিষ্ঠান উডসাইড এনার্জি জানিয়েছে তাদের প্রথম অগ্রাধিকার নিজেদের কর্মকর্তা ও চুক্তিকারীদের নিরাপত্তা। "আমাদের ২০২১ সালের ড্রিলিং ক্যাম্পেইনের পরিকল্পনায় বর্তমান পরিস্থিতির কিরূপ প্রভাব পড়তে পারে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হবে তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা চলছে," বলেন প্রতিষ্ঠানটির একজন মুখপাত্র।
ধীর গতিতে প্রবৃদ্ধি
বিশ্বব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, এ অর্থবছরে দেশটির অর্থনীতির ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। দারিদ্র্য হার ২২ দশমিক ৪ থেকে বেড়ে ২৭ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।
ফিন্যান্সিয়াল ডেটা ফার্ম ফিচ সলিউশনসের আনিতা বসু জানিয়েছেন, সেনা অভ্যুত্থানের আগে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারণা করা হচ্ছিল। তবে এখন প্রতিষ্ঠানটি প্রবৃদ্ধির হার অর্ধেক কমে যাবে এমনটাই ধারণা করছে। বিদেশি বিনিয়োগের ওপর অভ্যুত্থানের কিরূপ প্রভাব পড়তে পারে এব্যাপারে এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছেনা, বলেন তিনি।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলছে এমন দেশগুলোতে বিনিয়োগে চীন ও দ্বিধা করতে পারে বলে জানান তিনি।
- সূত্র: বিবিসি