সোমবার থেকে সকল প্রকার ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে যুক্তরাজ্য
কোভিডের অজ্ঞাত ধরন (স্ট্রেইন) হতে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আসন্ন সোমবার থেকে যুক্তরাজ্য সকল ধরণের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চলেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
দেশের বাইরে থেকে যারাই আসবেন প্রত্যককে করোনা নেগেটিভ সনদ দেখাতে হবে।
ব্রাজিলে করোনাভাইরাসের নয়া ধরন শনাক্তের পরপরই শুক্রবারে দক্ষিণ আমেরিকা ও পর্তুগালের নাগরিকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানান, নতুন এই নীতি ১৫ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
গত ২৮ দিনে দেশটিতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১,২৮০ জনের। করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৮৭ হাজার ২৯১।
শুক্রবার সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানা যায়; নতুন করে ৫৫ হাজার ৭৬১ জনের দেহে ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, আগেরদিনও এ সংখ্যা ছিল ৪৮ হাজার৬৮২ জন।
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি জানিয়েছে, মহামারী শুরুর পর বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত ২০ লাখের বেশি মানুষ মারা গেছে।
ডাউনিং স্ট্রিটের এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "এসময়ে অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ । জনগণকে রক্ষা করার জন্যই দিনের পর দিন আমরা এমন সব পদক্ষেপ নিচ্ছি।"
"করোনাভাইরাসের টিকার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী এবং একই সঙ্গে নতুন যে স্ট্রেইন দেশের বাইরে থেকে আসছে সেটা বন্ধ করার জন্য আমাদের অবশ্যই এই অতিরিক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।"
সোমবার স্থানীয় সময় ভোর চারটা থেকে সকল ধরনের ভ্রমণের পথ বন্ধ থাকবে।
এরপর যারা যুক্তরাজ্যে আসবেন, পাঁচ দিন পর পরীক্ষায় তাদের করোনাভাইরাস রেজাল্ট 'নেগেটিভ' না আসলে তাদের ১০ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
যেসব দেশে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সেখানকার মানুষের ওপর যুক্তরাজ্য ভ্রমণের পর কোয়ারেন্টিনে না থাকার ধারনাকে কেন্দ্র করে গ্রীষ্মে 'ট্রাভেল করিডর' ধারণার উদ্ভব হয়।
এ সপ্তাহের শুরুতেই হাসপাতালে সর্বাধিক সংখ্যক রোগী ভর্তি হবার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এনএইচএস (ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস) এখন 'অস্বাভাবিক চাপের' মুখে আছে।
ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি যারা সবচেয়ে গুরুতর অবস্থায় আছেন, তাদের টিকাগ্রহণ সম্পন্ন হলেই বিধিনিষেধ শিথিল করার ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেয়া যায় সে নিয়ে ভাববেন বলে জানিয়েছেন বরিস জনসন।
ইংল্যান্ডে বর্তমানে দেশজুড়ে লকডাউন জারি করা হয়েছে।
ঘরে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে; খাবার কেনা, ব্যায়াম অথবা এমন কোন কাজ যেটা ঘরে বসে থেকে করা সম্ভব না এমন অল্প কিছু কারণেই ঘরের বাইরে যাবার অনুমতি আছে।
স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং নর্দান আয়ারল্যান্ডের কিছু স্থানেও একই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
ইংল্যান্ডের প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা প্রফেসর ক্রিস হুইটি বলেন, এই বিধিনিষেধ ধীরে ধীরে তুলে নেয়ার প্রয়োজন পড়বে। "শুধু দেখতে হবে কোনটি কাজ করছে এবং যদি কাজ করে তাহলে সে অনুযায়ী পরবর্তী ধাপে যেতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে বেশিরভাগ স্থানে মানুষ সর্বোচ্চ সংখ্যায় হাসপাতালে ভর্তি হবে। তবে তারা অনুমান করছেন দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চল এবং লন্ডনে শনাক্তের সর্বোচ্চ মাত্রা 'ইতোমধ্যে পার হয়ে গেছে' ।
পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড জানিয়েছে, ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত জিনগতভাবে নিশ্চিত ৩৫টি নতুন কোভিড স্ট্রেইন এবং সম্ভাব্য ১২ টি স্ট্রেইন শনাক্ত করা হয়েছে।ধারনা করা হচ্ছে এগুলোর উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ আফ্রিকা।
এর আগে আরেকজন প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানী জানিয়েছিলেন, ব্রাজিলে দেখা যাওয়া নতুন দুটি ধরনের একটিকে যুক্তরাজ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তিনি এও উল্লেখ করেন যে, চিন্তিত হবার মত ধরন এটি ছিল না।
সরকারের প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা স্যার প্যাট্রিক ভ্যালেন্স আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, " আমাদের কাছে যে ভ্যাকসিন আছে তা যুক্তরাজ্যে কোভিডের ধরন এবং অন্যান্য ধরন থেকেও আমাদের সুরক্ষা দিতে পারবে।"
"তবে প্রশ্ন হলো কোন মাত্রা পর্যন্ত।"
"তবে টিকা নিয়েছেন বলেই যে আপনি বিপদমুক্ত এবং আপনার কাছ থেকে ভাইরাস ছড়াবে না তা নয়। ভ্যাকসিনের অর্থ হলো মারাত্মক রোগের হাত থেকে আপনি বিপদমুক্ত।" যোগ করেন স্যার প্যাট্রিক।
সূত্রঃ বিবিসি