সম্পদ নিয়ে মায়ের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ধনকুবের ললিত মোদি, যা বলছে সুপ্রিম কোর্ট!
পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধে লিপ্ত ললিত মোদি ও তার মা বিনা মোদির মধ্যে মধ্যস্থতার পরামর্শ দিয়েছে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট। প্রয়াত শিল্পপতি কে কে মোদির পারিবারের দীর্ঘদিনের এই বিরোধ সমাধানে উভয় পক্ষকে তাদের পছন্দের মধ্যস্থতাকারীদের নামও দিতে বলা হয়েছে।
ললিত মোদির বিরুদ্ধে তার মায়ের দায়ের করা মামলায় দিল্লি হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ যে রায় দিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে আপিল করেন তিনি। তার আপিলের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট মধ্যস্থতার পরামর্শ দিয়েছে।
সিঙ্গাপুরে ললিত মোদির শুরু করা সালিশি কার্যক্রমকে বাধা দিতেই মামলাটি দায়ের করেছিলেন বিনা মোদি। উভয় পক্ষের আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি যুক্তি শোনার পর, প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনার নেতৃত্বে একটি বেঞ্চ মামলাটির সমাধানে মধ্যস্থতা বা সালিশের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
বিচারপতি সূর্য কান্ত ও হিমা কোহলির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ পরামর্শ দিয়েছেন, "হরিশ সালভে গ্রুপ (ললিত মোদি) সালিশ করতে ইচ্ছুক। আমরা যা মনে করছি, আস্থার অভাবেই পরিবারের সদস্যদরা বিবাদে জড়িয়েছে। দলিলে এমন একটি বিধানও রয়েছে যে, এটি মধ্যস্থতা করা যেতে পারে... এটি কেবল একটি পরামর্শ। আমরা কাউকে একমত হতে বাধ্য করছি না।"
বিনা মোদির পক্ষে উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবী কপিল সিবাল ও মুকুল রোহাতগি বলেন, "এ ব্যাপারে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।"
অন্যদিকে ললিত মোদির প্রতিনিধি জনাব সালভেও এ ব্যাপারে সম্মতি দিয়ে বলেছেন, "আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও বিস্মিত। আমরা এ ব্যাপারে খুবই খুশি।"
আদালত দু'পক্ষের কাছ থেকেই তাদের পছন্দের মধ্যস্থতাকারীদের নাম নিয়েছেন এবং আগামী ১৩ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করছেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বলেছিল, ললিত মোদি কর্তৃক সিঙ্গাপুরে সালিশি কার্যক্রম শুরু করার পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ করে বিনা মোদির আবেদনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে।
ডিভিশন বেঞ্চ হাইকোর্টের একক বিচারকের রায় বাতিল করে দিয়ে বলেছিল, ললিত মোদির মা বিনা, তার বোন চারু ও ভাই সমীরের দায়ের করা সালিশি বিরোধী নিষেধাজ্ঞা মামলার বিচার করার এখতিয়ার নেই এবং তাদের সিঙ্গাপুরের সালিশি ট্রাইব্যুনালে এ ধরনের আবেদন গ্রহণযোগ্য জন্য উন্মুক্ত।
একক বিচারক রায় দিয়েছিলেন, ললিত মোদীর মা বিনা, তার বোন চারু এবং ভাই সমীরের দায়ের করা সালিশি বিরোধী নিষেধাজ্ঞা মামলার বিচার করার এখতিয়ার নেই। তবে ডিভিশন বেঞ্চ হাইকোর্টের একক বিচারকের রায় বাতিল করে দিয়ে বলেছে, তদের সিঙ্গাপুরের সালিশি ট্রাইব্যুনালে এ ধরনের আবেদন করার বৈধতা রয়েছে।
বিনা, চারু এবং সমীর, দুটি পৃথক মামলায় দাবি করেছেন, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একটি ট্রাস্ট ডিড ছিল। সেই ডিড বা চুক্তি মোতাবেক, কে কে মোদি পরিবারের ট্রাস্টের বিষয়গুলো ভারতীয় আইন অনুসারে বিদেশে সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার সুযোগ নেই।
পাশাপাশি তারা ললিত মোদিকে সিঙ্গাপুরে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া ও তাদের বিরুদ্ধে যেকোন ধরণের সালিশি কার্যক্রমের আবেদন করা বা চালিয়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়েছেন।
২০১৯ সালের ২ নভেম্বর কে কে মোদির মৃত্যুর পর পরিবারের ট্রাস্টিদের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়।
ললিত মোদির দাবি, তার বাবার মৃত্যুর পরে সম্পত্তি বিক্রির বিষয়ে ট্রাস্টিদের মধ্যে ঐক্যের অভাবের কারণে, ট্রাস্টের সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি শুরু করা হয়েছে; এবং এর এক বছরের মধ্যেই তা সুবিধাভোগীদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে বলে রায় দিয়েছিল একক বিচারক।
তবে তার মা ও দুই ভাইবোন দাবি করেছেন, ট্রাস্ট ডিড অনুসারে এই ধরনের কোনো বিক্রয় শুরু হয়নি।
সূত্র: এনডিটিভি