জুতোর বাজার: কার কদর বেশি? স্নিকার?
চীন, ভারত, ব্রাজিল, ইতালি, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, থাইল্যান্ড, তুরস্ক ও স্পেন হলো বিশ্বব্যাপী জুতোর বৃহত্তম উৎপাদক দেশ। অপর দিকে বিশ্বব্যাপী জুতোর বৃহত্তম ভোক্তা দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইতালি। বৈশ্বিক জুতো উৎপাদন ব্যবস্থায় একসময় কোরিয়া ও তাইওয়ানের বেশ আধিপত্য থাকলেও এখন তাদের অবস্থা অনেকটাই ম্রিয়মাণ।
চলমান করোনাভাইরাস অতিমারির মধ্যেও ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী জুতোর বাজারের মূল্যমান ছিল ৩৮৪ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এখানে সামগ্রিকভাবে জুতো বলতে বোঝানো হচ্ছে শু, স্নিকার, অ্যাথলেটিক ফুটওয়্যার, লাক্সারি ও ডিজাইনার ফুটওয়্যার, স্যান্ডেল, স্লিপারসহ সবকিছুকেই। আশা করা যাচ্ছে, ২০২৬ সাল নাগাদ ২ দশমিক ৩ শতাংশ কমপাউন্ড অ্যানুয়াল গ্রোথ রেটের ফলে বৈশ্বিক জুতোর বাজারের আকৃতি বেড়ে দাঁড়াবে ৪৪০ বিলিয়ন ডলারে।
তাহলে বুঝতেই পারছেন, বৈশ্বিক জুতোর বাজারটা ঠিক কতটা বড় এবং বিশ্বব্যাপী মানুষের মাথার সংখ্যা যত বাড়বে, প্রত্যেকের দুই পায়ে গলানোর জন্য জুতোর চাহিদাও যে ক্রমে বাড়বে, তা তো বলাই বাহুল্য।
বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি জুতো উৎপাদক কোম্পানি
কোম্পানি হেডকোয়ার্টার: বার্ষিক বিক্রি
অ্যাডিডাস [জার্মানি]: ২৪ বিলিয়ন ডলার
কেরিং [ফ্রান্স]: ১৫.২৫ বিলিয়ন ডলার
আসিকস [জাপান]: ৩.৫৮ বিলিয়ন ডলার
বারবেরি গ্রুপ [যুক্তরাজ্য]: ৩.১৩ বিলিয়ন ডলার
এবিসি মার্ট [জাপান] :২ বিলিয়ন ডলার
এ ছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের সর্বাধিক পরিচিত সুইজারল্যান্ডভিত্তিক জুতোর ব্র্যান্ড বাটা করপোরেশনের রয়েছে বিশ্বের ৭০টির বেশি দেশে ৫,৩০০-এর অধিক দোকান। তাদের বার্ষিক বিক্রিও ২ বিলিয়ন ডলার।
চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক, বিশ্বের সবচেয়ে দামি পাঁচটি জুতো কোনগুলো। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, শীর্ষ পাঁচটি জুতোই তৈরি হয়েছে নারীদের জন্য। বিরলপ্রায় হিরে, প্লাটিনাম ও সোনা দিয়ে তৈরি এসব জুতো, যা নিজেদের সংগ্রহে রাখার সামর্থ্য বিশ্বজুড়ে খুব বেশি মানুষের নেই!
মুন স্টার শুজ (আন্তোনিও ভিয়েত্রি)
২০১৯ সালে উন্মোচিত বিশ্বের সবচেয়ে দামি এই একজোড়া হিলের দাম ১৯.৯ মিলিয়ন ডলার। কেন এত দাম এর? কারণ, এটি নির্মাণে খাঁটি সোনা, ৩০ ক্যারেট হিরে তো ব্যবহৃত হয়েছেই, সেই সঙ্গে এর উপাদানের তালিকায় রয়েছে ১৫৭৬ সালে আর্জেন্টিনায় আবিষ্কৃত একটি উল্কাপিণ্ডের ছোট টুকরোও! জানিয়ে রাখা ভালো, এই জুতোর নির্মাতা আন্তোনিও ভিয়েত্রিই ২০১৭ সালে ডিজাইন করেছিলেন বিশ্বের প্রথম ২৪ ক্যারেট সোনার জুতো, যার দাম রাখা হয়েছিল ৩২ হাজার ডলার এবং ক্রেতাদের ডেলিভারি দেওয়া হয়েছিল হেলিকপ্টারে করে!
ডায়মন্ড শুজ (জাদা দুবাই ও প্যাশন জুয়েলার্স)
জাদা দুবাই ও প্যাশন জুয়েলার্সের মিলিত প্রয়াসে নির্মিত এই এক জোড়া পেনসিল হিলের দাম ১৭ মিলিয়ন ডলার। এতে রয়েছে ১৫ ক্যারেট ডি গ্রেড ডায়মন্ড। এ ছাড়া আরও ২৩৮টি ছোট ছোট হিরের টুকরো ব্যবহৃত হয়েছে ট্রিম সাজাতে।
ডেবি উইংহ্যাম হাই হিলস
ডেবি উইংহ্যামের ডিজাইন করা এই জুতো জোড়া বানানো হয়েছিল জন্মদিনের উপহার হিসেবে, যার দাম রাখা হয়েছে ১৫.১ মিলিয়ন ডলার। এটি নির্মাণে ব্যয়িত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বিরল ও দামি কিছু রত্নপাথর, যেমন নীল ও গোলাপি হিরে। জুতোটির শরীর নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে প্ল্যাটিনাম এবং প্লাকটি পুরোপুরি খাঁটি সোনার। জুতোর বাকি অংশে লেদার ছাড়াও রয়েছে ২৪ ক্যারেট সোনার পেইন্ট এবং জুতো জোড়া সেলাই করা হয়েছে ১৮ ক্যারেট সোনার সুতো দিয়ে।
হ্যারি উইনস্টন রুবি স্লিপার
জুয়েলারি ডিজাইনার হ্যারি উইনস্টনের ছেলে, রন উইনস্টন চেয়েছিলেন হলিউড ক্লাসিক দ্য উইজার্ড অব ওজ-এর ৫০ বছর পূর্তিকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে। তাই তিনি ঠিক করেছিলেন, ডরোথির পরা রুবি স্লিপারের রেপ্লিকা বানাবেন। এ জন্য ব্যবহৃত হয়েছে ১,৩৫০ ক্যারেটের ৪,৬০০টি রুবি। এ ছাড়া এই অনিন্দ্য সুন্দর জুতো জোড়ায় রয়েছে ৫০ ক্যারেটের ডায়মন্ড। নিঃসন্দেহে বলা যায়, ৩ মিলিয়ন ডলার মূল্যের এই জুতো জোড়া অনেক বেশি দামি ডরোথির পরা মূল রুবি স্লিপারের চেয়েও, যেটি বানাতে ব্যবহৃত হয়েছিল নিছকই লাল রঙের সিকোয়েন।
স্টুয়ার্ট ওয়াইটজম্যান রিটা হেওয়ার্থ হিলস
হলিউডের প্রখ্যাত অভিনেত্রী রিটা হেওয়ার্থের পরা এক জোড়া কানের দুল দিয়ে স্টুয়ার্ট ওয়াইটজম্যান তৈরি করেছিলেন এই বিশেষ জুতো। দুলগুলো জুতোর ঠিক মাঝখানে অবস্থান করলেও এটি নির্মাণে আরও ব্যবহৃত হয়েছে সিয়েনা সাটিনের শেড এবং হিরে, নীলা, রুবিসহ বিভিন্ন ধরনের রত্ন। ৩ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের জুতো জোড়া বিক্রির জন্য নয়। এটির স্বত্বাধিকারী হেওয়ার্থের কন্যা প্রিন্সেস ইয়াসমিন আগা খান।
জুতো তো হলো, এবার চলুন জানা যাক, বিশ্বের এযাবৎকালের সবচেয়ে দামি পাঁচটি স্নিকার সম্পর্কে।
সলিড গোল্ড ওভিও- এয়ার জর্ডান
আমেরিকান শিল্পী ম্যাথিউ সেনার তৈরি করা এই স্নিকারের প্রতিটির ওজন ৫০ পাউন্ড। আর দাম? ২ মিলিয়ন ডলার। কারণ, এতে রয়েছে পুরো ২৪ ক্যারেট সোনার প্রলেপ।
মাইকেল জর্ডানের পরা কনভার্স ফাস্টব্রেকস
১৯৮৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জেতে যুক্তরাষ্ট্র দল। এর এক দশক পর মাইকেল জর্ডানের স্বাক্ষর করা এবং তাঁর নিজের পরা এক জোড়া কনভার্স ফাস্টব্রেকস তোলা হয় নিলামে। প্রাথমিকভাবে ১,০০,০০০ ডলার আশা করা হলেও শেষমেশ সেগুলো বিক্রি হয় ১,৯০,০০০ ডলারে।
বুশেমি ১০০ এমএম ডায়মন্ড
১১.৫ ক্যারেট হিরে ও ১৮ ক্যারেট সোনা দিয়ে তৈরি এই ধবধবে সাদা স্নিকার জোড়ার দাম ১,৩২,০০০ ডলার।
এয়ার জর্ডান ১২ (ফ্লু গেম)
কুখ্যাত 'ফ্লু গেম'-এ (শিকাগো বনাম ইউটাহ, এনবিএ ফাইনাল ম্যাচ, ১৯৯৭) ফ্লু নিয়ে এই স্নিকার জোড়া পরে খেলেছিলেন মাইকেল জর্ডান। সে জন্যই এর এত দাম। পুরো ১,০৪,০০০ ডলার!
এয়ার জর্ডান ১২ ওভিও (ড্রেইক এডিশন)
জর্ডান ব্র্যান্ড এবং র্যাপার ড্রেইকের ব্র্যান্ড ওভিও (অক্টোবর'স ভেরি ওন)-এর কোলাবরেশনে তৈরি এই স্নিকার জোড়াকে প্রথম দর্শনে আহামরি কিছু মনে হবে না। এটির প্রকৃত দামও ২০০ ডলারের কিছু বেশি। কিন্তু এক টরন্টো র্যাপটর্স গেম চলাকালীন ড্রেইক এই স্নিকার জোড়া উপহার দিয়েছিলেন এক ভাগ্যবান ভক্তকে, যে পরবর্তী সময়ে ইবেতে এগুলো বিক্রি করতে সক্ষম হয় ১,০০,০০০ ডলারে।