প্রাক্তন ফাইজার বিজ্ঞানীর ভ্যাকসিন বিরোধী নায়ক হওয়ার কাহিনি
গত বছরের শেষ দিকের কথা। জনৈক আধা-অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ বিজ্ঞানী অংশ নেন ইউরোপের ঔষধ নিয়ন্ত্রকদের কাছে পেশ করা একটি পিটিশন রচনায়। সেই পিটিশনে তোলা হয় একটি জোরালো দাবি : বন্ধ করতে হবে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের সকল ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল।
এরূপ দাবির নেপথ্যের যুক্তিটি ছিল আরো জোরালো। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যদিও কোনো প্রমাণ ছাড়াই, যে ভ্যাকসিনের ফলে বন্ধ্যাত্বের শিকার হতে পারে নারীরা।
১ ডিসেম্বর একটি জার্মান ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয় নথিটি। বিজ্ঞানীরা ভৎসর্না করেন এমন ধারণার। ঔষধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তাব্যক্তিরাও প্রভাবিত হন না। বরং সপ্তাহখানেক পরই, ফাইজার ইঙ্ক আবিষ্কৃত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রথম কোভিড-১৯ শটটি পেয়ে যায় ইউরোপীয় ঔষধ সংস্থার অনুমোদন। কিন্তু ততদিনে ক্ষতি যা হবার হয়ে গেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে এক অতিরঞ্জিত তথ্য যে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ফলে নারীদের বন্ধ্যাত্ব ঘটে। এবং রয়্যাল কলেজ অভ অবস্টেট্রিশিয়ান্স অ্যান্ড গাইনোকলিজস্টস সূত্রে জানা যায়, এর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই, ব্রিটেনের চিকিৎসক ও নার্সরা রিপোর্ট দিতে শুরু করেন যে অসংখ্য নারী নাকি তাদের কাছে জানতে চাইছেন, বন্ধ্যাত্বের খবরটি সঠিক কি না। জানুয়ারিতে, কাইজার ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন নামক একটি অলাভজনক সংস্থার জরিপে উঠে আসে, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিন গ্রহণ করেনি এমন ১৩ শতাংশ মানুষই শুনেছে, "কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ফলে বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি হচ্ছে"।
এ অপ্রমাণিত একটি আশঙ্কার গ্রহণযোগ্যতা লাভের পেছনে দায় কিংবা কৃতিত্ব যে মানুষটির, তিনি হলেন পিটিশনে অংশগ্রহণকারী সেই জনৈক বিজ্ঞানী। তবে মাইকেল ইডন নিছকই একজন বিজ্ঞানী নন। ৬০ বছর বয়সী এই মানুষটি ফাইজারের প্রাক্তন সহ-সভাপতিও বটে। ১৬ বছর তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে কাটিয়েছেন অ্যালার্জি ও শ্বাসযন্ত্র বিষয়ক গবেষণায়। পরবর্তীতে তিনি যুক্ত ছিলেন একটি বায়োটেক ফার্ম প্রতিষ্ঠায়ও, যেটি সুইস ঔষধ উৎপাদক প্রতিষ্ঠান নোভার্টিস কিনে নিয়েছে অন্তত ৩২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, ইডন আবির্ভূত হয়েছেন তথাকথিত অ্যান্টি-ভ্যাক্সার বা ভ্যাকসিন বিরোধীদের অভাবনীয় নায়কে। এই ভ্যাকসিন বিরোধীরা প্রতিনিয়ত প্রশ্ন তুলে থাকে বিভিন্ন ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা প্রসঙ্গে, এবং তাদের কবল থেকে মুক্তি পায়নি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনও। এই ভ্যাকসিন বিরোধীদের প্রচারণার ফলেই ইডনের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন এবং পরীক্ষা, সরকার নির্দেশিত বাধ্যতামূলক লকডাউন ও চলমান অতিমারির প্রকটতা বিষয়ক সন্দিগ্ধ দৃষ্টিভঙ্গির পালে আরো হাওয়া লেগেছে।
ইডন বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে সব ধরনের ভ্যাকসিন ব্যবহারের বিরোধী নন। কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সরকারি কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ইডনের অভিমত ভ্যাকসিনের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের সন্দেহ-দ্বিধা-আপত্তিকে আরো ত্বরান্বিত করছে। আর এর ফলে, চলমান অতিমারির মেয়াদকাল আরো প্রলম্বিত হতে পারে। ইতোমধ্যেই কোভিড-১৯ কেড়ে নিয়েছে ৩.৩২ মিলিয়নের অধিক মানুষের প্রাণ।
"এ ধরনের দাবি ভুয়া, সাংঘাতিক এবং একদমই দায়িত্বজ্ঞানহীন," ইডনের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে নিজের অভিমত ব্যক্ত করেন ব্রিটেনের স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ বিভাগের এক মুখপাত্র। "কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনই হলো মানুষকে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা এবং হাজার হাজার প্রাণ বাঁচানোর শ্রেষ্ঠ উপায়।"
এদিকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের মধ্যে অল্প কয়েকজনের রক্ত জমাট বাঁধা এবং অস্বাভাবিক রক্তপাতের ফলে এই শটের নিরাপত্তা নিয়েও অনেকের মনে সন্দেহের উদ্রেক ঘটেছে, যার ফলস্বরূপ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ এটির ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। এ ধরনের ঘটনা যত ঘটবে, ভ্যাকসিনের ব্যাপারে জনমনে দ্বিধাও আরো বৃদ্ধি পেতে থাকবে। অথচ অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের সাথে ভুক্তভোগী রোগীদের অবস্থার কোনো কার্যকারণ সম্পর্ক কিন্তু খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এই প্রতিবেদনের জন্য মতামত চাওয়া হলেও, ইডন সেই অনুরোধে কোনো সাড়া দেননি। প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য রয়টার্স তার বিগত দুই বছরের সহস্রাধিক টুইট খতিয়ে দেখেছে। সেই সঙ্গে দেখেছে তার অন্যান্য রচনা ও বক্তব্যও। এছাড়াও সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে এমন পাঁচজন ব্যক্তির, যারা তাকে চেনেন। তাদের মধ্যে চারজনই ছিলেন ফাইজারে তার সহকর্মী।
ফাইজারের একজন মুখপাত্র ইডন কিংবা কোম্পানিতে ইডনের অতীত ভূমিকা সম্পর্কে মতামত জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে জার্মান অংশীদার বায়োএনটেকের সাথে জুটি বেঁধে তারা যে ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছেন, সেটি নারীদের বন্ধ্যাত্বের জন্য দায়ী এমন কোনো বাস্তব প্রমাণ মেলেনি।
আমেরিকান রাজনৈতিক রাজবংশের উত্তরাধিকারী, রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র একজন প্রভাবশালী ভ্যাকসিন বিরোধী। সম্প্রতি তিনি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বিষয়ক পোস্টের কারণে ইনস্টাগ্রাম থেকে নিষিদ্ধ হয়েছেন। তিনি ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে যে গোষ্ঠীটির জন্ম দিয়েছেন, সেটির ওয়েবসাইটেও রয়েছে ইডনের পিটিশনের রেফারেন্স।
সিন্ডিকেটেড লেখক এবং ভ্যাকসিন-সন্দিগ্ধ মিশেল মালকিন এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বন্ধ্যাত্ব বিষয়ে ইডনের আশঙ্কার কথা তার কলামে তুলে ধরেছেন। কলামটির শিরোনাম ছিল : "গর্ভবতী নারীরা, কোভিড-১৯ শটের ব্যাপারে সাবধান হোন"। এছাড়া "ফাইজার গবেষণার প্রধান : কোভিড ভ্যাকসিন হলো নারীদের বন্ধ্যাকরণ" শীর্ষক একটি ব্লগও ফেসবুকে কয়েক হাজারবার শেয়ার হয়েছে।
ইডনের ছবি ও তার মতামত সমৃদ্ধ পোস্ট বিভিন্ন ভাষায় ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেসব ভাষার মধ্যে রয়েছে জার্মান, পর্তুগিজ, ড্যানিশ ও চেক। এবং সেগুলোতে ইডনকে চিহ্নিত করা হচ্ছে "ফাইজারের প্রাক্তন সহ-সভাপতি" হিসেবে। ফেসবুকে রয়েছে ইডনের নভেম্বরের একটি ভিডিও, যেখানে তিনি দাবি করছেন অতিমারি "মৌলিকভাবে" শেষ হয়ে গেছে। সেটির ভিউ ছাড়িয়ে গেছে এক মিলিয়ন।
অক্টোবরে ইডন যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইল সংবাদপত্রে একটি কলাম লেখেন। কলামটি প্রকাশিত হয় মেইল অনলাইনেও, যেটি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংবাদ ওয়েবসাইটগুলোর একটি। সেই কলামে তিনি ঘোষণা করেন যে ব্রিটেনে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ শীঘ্রই "দম হারাবে", এবং সরকারের উচিত "অতিসত্ত্বর ব্রিটনদের সাধারণ জীবনযাপনের সুযোগ করে দেয়া"। কলামটি যখন প্রকাশিত হয়, তখন ব্রিটেনে কোভিড-১৯ এর ফলে মৃতের সংখ্যা ছিল ৪৫,০০০। এরপর থেকে গত কয়েক মাসে সেখানে মৃত্যু ঘটেছে আরো প্রায় ৮৩ হাজার মানুষের।
ইডনই একমাত্র সম্মানিত ও সমাদৃত বিজ্ঞানী নন, যিনি কোভিড-১৯ এর ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক মতবাদকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে বিতর্কিত বক্তব্য রেখেছেন।
রসায়নে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মাইকেল লেভিট গত গ্রীষ্মে স্ট্যানফোর্ড ডেইলিকে বলেন যে তিনি আশা করছেন ২০২০ সালের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে অতিমারির সমাপ্তি ঘটবে, এবং ১ লক্ষ ৭৫ হাজারের (বর্তমান মৃতের এক-তৃতীয়াংশেরও কম) বেশি মানুষের মৃত্যু হবে না। তিনি আরও বলেন, "সবকিছু শেষ হয়ে এলে যখন আমরা পেছন ফিরে তাকাব, তখন বলব, এটা তো খুব ভয়াবহ কোনো রোগ ছিল না।"
আরেক নোবেলজয়ী লুচ মন্তানিয়ের গত বছর বলেন, তার বিশ্বাস করোনাভাইরাস তৈরি করা হয়েছে একটি চীনা ল্যাবরেটরিতে। অনেক বিশেষজ্ঞই এমন সন্দেহ প্রকাশ করে থাকেন বটে, কিন্তু এখন পর্যন্ত এই তত্ত্বকে স্বীকার বা অস্বীকারের মতো কোনো অকাট্য যুক্তি-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
লেভিট রয়টার্সকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অতিমারি সম্পর্কে তিনি যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তা ভুল ছিল। কিন্তু তিনি এখনো বিশ্বাস করেন, শেষ পর্যন্ত কোভিড-১৯'কে কোনো "ভয়াবহ রোগ" হিসেবে দেখা হবে না, বরং "লকডাউনের ফলে বিপুল পরিমাণে কোল্যাটারাল ড্যামেজ ঘটেছে, এবং এমন লকডাউনের আদতে কোনো প্রয়োজন ছিল না।" মন্তানিয়ের কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সেন্টার ফর কাউন্টারিং ডিজিটাল হেটের প্রধান নির্বাহী ইমরান আহমেদ বলেন, ইডন যে ইতঃপূর্বে ফাইজারে কাজ করতেন, এই বিষয়টিই তার মতামতকে এত বেশি গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছে। "ইডনের অতীতই তার ভয়ানক ও ক্ষতিকর বার্তাগুলোকে একটি ভুয়া গ্রহণযোগ্যতা পাইয়ে দিয়েছে।"
গত শরতে ব্রিটেনের হাউজ অভ কমনসে অতিমারির ব্যাপারে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ বিষয়ক ডিবেটে সংসদ সদস্য রিচার্ড ড্রাক্স ইডনকে একজন "বিশিষ্ট" বিজ্ঞানী হিসেবে অভিহিত করেন, এবং তার কথা থেকে ধার করে বলেন, "ভাইরাসটি দমনযোগ্য তো বটেই, একই সঙ্গে এটি রয়েছে শেষের পথে।" ড্রাক্স এই প্রতিবেদনে মতামতের জন্য সাড়া দেননি।
আরও সম্প্রতি, লন্ডন অ্যাসেম্বলির সদস্য ডেভিড কার্টেন টুইট করেন যে কোভিড-১৯ এর একটি "সত্যিকারের ঝুঁকি" রয়েছে, তা হলো, এটি নারীদেরকে বন্ধ্যা করে দিতে পারে। তিনি আরও লেখেন, "অবশ্যই রোগের চেয়ে তার প্রতিষেধক অধিক ক্ষতিকর হওয়া উচিত নয়।" তবে তিনিও কোনো মতামতের জন্য আমাদের অনুরোধে সাড়া দেননি।
কীভাবে ইডন একজন মূলধারার বিজ্ঞানী থেকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ব্যাপারে সংশয়াপন্ন হয়ে উঠলেন, তা এখনো একটি রহস্য। অতিমারির শুরু থেকে এখন অবধি হাজারো টুইট ঘেঁটে তার দৃষ্টিভঙ্গির এক নাটকীয় দিক-পরিবর্তনের প্রমাণ পাওয়া যায়। শুরুর দিকে তিনি ভ্যাকসিন কৌশলের সমর্থনই করেছিলেন। কিন্তু কীভাবে তার এমন আমূল ভোলবদল ঘটল, সে ব্যাপারে খুব বেশি সূত্র দেখা যাচ্ছে না।
ফাইজারের কয়েকজন প্রাক্তন সহকর্মী বলেন, এককালে তারা যে মাইক ইডনকে চিনতেন, তার সঙ্গে এই মাইক ইডনের কোনো মিলই তারা দেখেন না। তাদের চেনা মাইক ইডন ছিলেন একজন জ্ঞানসম্পন্ন, বুদ্ধিমান ব্যক্তি, যিনি যেকোনো বিষয়ে প্রমাণ প্রত্যাশা করতেন, এবং স্বভাবতই প্রচারণা এড়িয়ে চলতেন।
ইডনের একজন প্রাক্তন সহকর্মী হলেন স্তেরগিওস এ মসকোস। মলিকুলার বায়োলজি ও ফার্মাসিউটিকসে ডিগ্রিধারী তিনি। ডিসেম্বরে ইডন টুইটারে একটি স্পুফ সাইন পোস্ট করেন, যাতে লেখা ছিল : "মাস্ক ফেলে দিন।" মসকোস সেখানে টুইট ব্যাক করেন, "এসব কী হচ্ছে মাইক?! আপনি কি সক্রিয়ভাবে মানুষ মারতে নেমেছেন? আপনি কি বুঝতে পারছেন আপনার পরামর্শ যদি ভুল হয়, তার ফলে মানুষের মৃত্যু হতে পারে?"
"সব দূর হয়ে যাবে"
২০১৮ সালের অক্টোবরে টুইটারে যোগ দেন ইডন, এবং সহসাই প্ল্যাটফর্মটির একজন নিয়মিত ব্যবহারকারীতে পরিণত হন। তার হাজার হাজার টুইট রিভিউ করে দেখেছে রয়টার্স। টুইটগুলো পেতে সাহায্য করেছে আর্কাইভ ডট অর্গ, যেটি ওয়েব পেজ জমা করে রাখে, এবং ফলোয়ার্স অ্যানালাইসিস, একটি সামাজিক মাধ্যম বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান।
২০২০ সালের মার্চে যখন যুক্তরাজ্যে প্রথম করোনা অতিমারি পাড়ি জমায়, প্রাথমিকভাবে ইডন ভ্যাকসিন উৎপাদনের পক্ষেই মত দিয়েছিলেন।
তিনি টুইট করেন, "কোভিড-১৯ খুব শীঘ্রই চলে যাবে না। যতদিন না আমরা পাচ্ছি একটি ভ্যাকসিন অথবা হার্ড ইমিউনিটি" – ভাইরাসের সাথে পূর্ব সংস্পর্শের সুবাদে গড়ে ওঠা প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা – "আপাতত আমরা কেবল যা করতে পারি তা হলো এর বিস্তারের গতিকে কমিয়ে দেয়া।" এর এক সপ্তাহ বাদে তিনি ফের টুইট করেন, "এই বছরের শেষ নাগাদই হয়তো আমরা একটি ভ্যাকসিন পেয়ে যাব, যদি আমরা সত্যিই ভাগ্যবান হয়ে থাকি।"
যখন অন্য এক টুইটার ব্যবহারকারী বলেন যে ভ্যাকসিনের ফলে অনেক মানুষের ক্ষতি হতে পারে, তখন ইডন তাকে জবাব দেন, "আচ্ছা বেশ, আপনি একে প্রত্যাখ্যান করুন, কিন্তু যারা নিরপেক্ষ বা এটি পেতে আগ্রহী, তাদের কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছানোয় বাধা দেবেন না, ধন্যবাদ।"
জনসন অ্যান্ড জনসনের ফার্মাসিউটিক্যাল বিভাগ জ্যানসেন-এর গবেষণা ও উন্নয়ন বিষয়ক বৈশ্বিক প্রধান মাথাই মাম্মেন গত গ্রীষ্মে লিংকডইনে পোস্ট করেন যে তার কোম্পানি একটি ভ্যাকসিনের জন্য ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করেছে। সেই পোস্টে ইডন লেখেন, "এমন একটি মাইলফলকের সাক্ষী হয়ে ভালো লাগছে, মাথাই!" কিন্তু মাম্মেন এই প্রতিবেদনে মন্তব্য করতে সাড়া দেননি।
কিন্তু এপ্রিল মাস নাগাদই, ইডন তার গোঁড়ামি প্রকাশ করতে শুরু করে দেন।
গত বসন্তে যখন ব্রিটেনে প্রথম লকডাউন চলছে, তিনি ঘোষণা করেন, "কোভিড-১৯ এর বিশেষ কোনো সংক্রামক বা ভীতিপ্রদ ব্যাপার নেই। খুব শীঘ্রই এই সবকিছু দূর হয়ে যাবে... এটি স্রেফ একটি সাধারণ, গার্ডেন ভাইরাস, যেটির ব্যাপারে বিশ্ব অতিপ্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।" এরপরই একটি টুইটে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন, যুক্তরাজ্যে মৃতের সংখ্যা ৪০ হাজার স্পর্শ করা "অসম্ভব"।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই, ইডনের কথাবার্তা টুইটারের বাইরেও অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে শুরু করে। ওই সময়ে ব্রিটেনে লকডাউন এবং করোনা প্রতিরোধে অন্যান্য বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। এমনই এক প্রেক্ষাপটে তিনি লকডাউন স্কেপটিকস নামের একটি ওয়েবসাইটে বিশালায়তন একটি আর্টিকেলের সহ-রচয়িতা । সেই আর্টিকেলে বলা হয়, "যুক্তরাজ্যে কার্যত একটি ঘটনা হিসেবে অতিমারির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে।" এবং, "জীববিজ্ঞানের এমন কোনো নীতি নেই যার ফলে আমাদেরকে একটি দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশা করতে হবে।" এর অল্প সময়ের মধ্যেই, ব্রিটেন প্রবেশ করে এক মারণঘাতি দ্বিতীয় ঢেউ।
১৬ অক্টোবর তিনি ওই একই ওয়েবসাইটে আরেকটি দীর্ঘকায় আর্টিকেল রচনা করেন : "চলমান অতিমারিকে নির্মূল করার জন্য ভ্যাকসিনের একেবারেই কোনো প্রয়োজন নেই। ভ্যাকসিনের ব্যাপারে এ ধরনের নির্বোধের মতো কথা আমি কখনোই শুনিনি। যারা একটি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে নেই, তাদেরকে আপনারা ভ্যাকসিনেট করবেন না।"
নভেম্বরে লকডাউন বিরোধী গ্রুপ আনলকড-এর একটি ৩২ মিনিটের ভিডিওতে হাজির হন ইডন। সেখানে দেখা যায় তিনি বসে আছেন একটি ছাউনিতে, আর তার পেছনে রয়েছে একটি মোটরবাইক। ভিডিওটির একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণও ফেসবুকে চলে আসে, শিরোনাম : "অতিমারি শেষ হয়ে গেছে"।
ইডন সেখানে আহ্বান জানান গণ-পরীক্ষা বন্ধের, এবং দাবি করেন, অতিমারি শুরুর আগে থেকেই মোট জনগোষ্ঠীর ৩০ শতাংশ এ রোগ প্রতিরোধী। ভিডিওটির যখন রেকর্ডিং হচ্ছে, তখন তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে ভাইরাসটির আর সংক্রমণের খুব কম সম্ভাবনাই রয়েছে, কেননা দেশটির বেশিরভাগ মানুষই ইতোমধ্যে সংক্রমিত হয়েছে অথবা রোগ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে।
ইডনের বলা এই কথাগুলো ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুসন্ধানের একেবারে বিপরীত। ডিসেম্বরে – কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবকে অতিমারি ঘোষণার নয় মাস পরে – সংস্থাটি বলে যে পরীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, মোট বৈশ্বিক জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশেরও কম সংক্রমণের উপসর্গ দেখিয়েছে।
ইউরোপীয় ঔষধ সংস্থায় ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বন্ধের জন্য ইডনের পিটিশন আসে ১ ডিসেম্বর। সেই সংস্থাটিও এই প্রতিবেদনের জন্য কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন যে নারীদের বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করতে পারে, ইডনের এ ধরনের দাবির কোনো প্রকৃত প্রভাব পরিমাপ করা অসম্ভব। তবে এ কথা বলা বাহুল্য যে অনেক নারীই তার কথাকে বিশ্বাস করেছে।
ব্রুকলিন, নিউ ইয়র্কের এক ওয়েট্রেস বনি জ্যাকবসন বলেন, বন্ধ্যাত্ব ইস্যুটির ব্যাপারে তিনি কবে প্রথম শুনেছেন তা মনে নেই। কিন্তু তিনি রয়টার্সকে বলেন, কথাটি শোনার পর তিনি ভ্যাকসিন গ্রহণের ব্যাপারে ইতস্তত করছেন। কেননা শীঘ্রই তিনি গর্ভধারণে ইচ্ছুক।
"এটিই আমার প্রধান চিন্তার জায়গা," তিনি বলেন। "দেখা যাক, আরো কিছু গবেষণার ফলাফল আসুক।" ভ্যাকসিন নিতে রাজি না হওয়ায়, যে পানশালায় তিনি কাজ করতেন সেখান থেকে সম্প্রতি তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে জ্যাকবসনের ওই পানশালার মালিক এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।
একজন ভালো বিজ্ঞানী
ইডনের লিংকডইন প্রোফাইল থেকে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে তিনি ফাইজারে যোগ দেন। ওই সময়ে দক্ষিণ ইংল্যান্ডের স্যান্ডউইচে কোম্পানিটির একটি বড় কার্যক্রম চলছিল। এক পর্যায়ে তিনি প্রতিষ্ঠানটির সহ-সভাপতি এবং অ্যালার্জি ও শ্বাসযন্ত্রীয় গবেষণার প্রধান পদে উন্নীত হন।
এখন ইডনের অনেক সহকর্মীই বলছেন, তার এমন আকস্মিক পরিবর্তনে তারা হতভম্ব।
ক্যামব্রিজ, ইংল্যান্ডের তালিসমান থেরাপিউটিকসের চেয়ারম্যান মার্ক ট্রাহার্ন জানান, তিনি দুই বছর ফাইজারে ইডনের সাথে কাজ করেছেন, এবং মাঝেমধ্যে তার সাথে কফিও পান করেছেন। "তাকে সবসময়ই মনে হতো জ্ঞানী, স্পষ্টবক্তা, একজন ভালো বিজ্ঞানী। আমরা দুজনেই ফার্মাকোলজিস্ট হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছি, তাই এক্ষেত্রে আমাদের মাঝে সাদৃশ্য ছিল।"
"আমি অবশ্যই মাইক এবং তার সাম্প্রতিক মতবাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করি," তিনি বলেন। ট্রাহার্নের কোম্পানির বর্তমান গবেষণার বিষয়বস্তু হলো মস্তিষ্ক প্রদাহ, যেটি করোনাভাইরাস দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। "এসব কথাবার্তা শুনে মনে হয় না তিনিই সেই ব্যক্তি, যাকে আমি ২০ বছর আগে চিনতাম।"
মসকোস নামের যে প্রাক্তন-সহকর্মী ইডনের একটি টুইটের বিরোধিতা করেছিলেন, তিনি বলেন ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তারা যখন একসাথে কাজ করতেন, তখন ইডনকে তিনি গুরু মানতেন। সাম্প্রতিককালে মসকোস গবেষণা করে দেখছেন যে নিঃশ্বাসের নমুনার মাধ্যমে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা সম্ভব কি না। তিনি বলেন, ইডনের চিন্তাভাবনা "এক বিশাল হতাশা"।
তিনি গত বছর রেডিওতে ইডনের একটি সাক্ষাৎকার শোনার স্মৃতি স্মরণ করেন। "তার কণ্ঠস্বরে এমন কিছু একটা ছিল, যার সাথে আমি আমার চেনা মাইককে মেলাতে পারছিলাম না। তাকে খুবই রাগান্বিত মনে হচ্ছিল, এবং তিক্ত।"
ফাইজার বৈশ্বিক গবেষণা ও উন্নয়নের প্রাক্তন সভাপতি জন লামাতিনাও চিনতেন ইডনকে। "তার গ্রুপটি ছিল খুবই সফল। তারা বেশ কয়েকটি কম্পাউন্ড আবিষ্কার করেন, যেগুলো গোড়ার দিকের ক্লিনিক্যাল ডেভেলপমেন্টে কাজে লাগে," রয়টার্সের উদ্দেশ্যে লেখা একটি ইমেইলে লামাতিনা বলেন। অবশ্য ইডন এবং তার দলকে ফাইজার ছেড়ে দেয়, যখন কোম্পানিটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেয় তারা থেরাপিউটিকের যে ক্ষেত্রটি নিয়ে কাজ করছিলেন সেটি বন্ধ করে দেয়ার।
লামাতিনা জানান, শেষ কয়েক বছরে ইডনের সাথে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। যে ভিডিওতে ইডন বলছেন অতিমারি শেষ হয়ে গিয়েছে সেটির লিংক এবং কোভিড-১৯ এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বন্ধের পিটিশনটির একটি কপি পাঠানো হলে লামাতিনা বলেন, "এগুলো সবই আমার জন্য নতুন খবর। এবং আমি কিছুটা বিস্মিত। আমি যে মানুষটিকে চিনতাম, তার চরিত্রের সাথে এগুলো একেবারেই মানায় না।"
"হুটসপাহ"
২০১১ সালে ফাইজারে চাকরি হারানোর পর ইডন জায়ার্কো নামের একটি বায়োটেক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। তার সঙ্গে ছিলেন ফাইজারের আরো তিন সহকর্মী। তারা চেয়েছিলেন ফাইজারে অ্যালার্জি ও শ্বাসযন্ত্রীয় রোগের থেরাপির যে গবেষণাটি করছিলেন, সেটি অব্যাহত রাখতে। এই গবেষণার ধারণাগুলো ফাইজারে থাকতেই শুরু হয়েছিল, কিন্তু মাঝপথে স্থগিতের আশঙ্কা দেখা দেয়। ইডন ছিলেন জায়ার্কোর প্রধান নির্বাহী।
পরবর্তীতে ফোর্বসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইডন বলেন, "আমি স্রেফ হুটসপাহ (প্রবল আত্মপ্রত্যয়) দেখাই, এবং ফাইজারে গবেষণা লাইনের সবচেয়ে সিনিয়র ব্যক্তিদের বলি প্রকল্পটিকে সমর্থন করতে। তারা বলেন, 'বেশ, তবে ধরে নিচ্ছি আপনি ব্যক্তিগতভাবে মূলধন জোগাড় করতে পারবেন।'"
২০১২ সালে জায়ার্কো ঘোষণা দেয় যে তারা প্রাথমিকভাবে তহবিল গঠন করেছে কয়েকটি বিনিয়োগকারীর থেকে, যাদের মধ্যে ফাইজারের একটি মূলধন বিনিয়োগকারী অংশও ছিল। অন্যান্য বিনিয়োগকারীরা পরে আসে। যেমন অ্যামজেন ইঙ্ক কর্পোরেট ভেনচার ক্যাপিটাল ফান্ড। অ্যামজেন এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
ইডন ফোর্বসকে বলেন, "ওই প্রকল্পে আমি যে পরিমাণ মনঃসংযোগ করি, তা আমাকে আমার পরিবার এবং অন্যান্য আগ্রহের জায়গা থেকে পাঁচ বছর দূরে সরিয়ে রাখে। এবং একটিমাত্র জীবনই তো আপনি পান।"
টুইটারে ইডন জানিয়েছেন তিনি বিবাহিত এবং তার দুইটি প্রাপ্তবয়স্ক কন্যা রয়েছে। এছাড়া তিনি একটি কঠিন শৈশবের কথাও জানিয়েছেন – তার মা নাকি আত্মহত্যা করেন যখন তার বয়স সবে ১৮ মাস, এবং তার বাবা ছিলেন একজন চিকিৎসক, যিনি ১৬ বছর বয়সে তাকে ছেড়ে চলে যান। তিনি আরো জানান, একজন স্থানীয় সমাজকর্মী তাকে উদ্ধার করেন, এবং তাকে দত্তক নেয় একটি ইহুদি পরিবার, যাদের "উদ্বাহু ভালোবাসায় তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়"।
জায়ার্কোয় থাকাকালীন ইডন বস্টন-ভিত্তিক আরো দুইটি বায়োটেক কোম্পানির পরামর্শদাতা হিসেবেও কাজ করতেন। সেগুলো হলো : অ্যাপেলিস ফার্মাসিউটিক্যালস এবং পালম্যাট্রিক্স ইঙ্ক। দুটি ফার্মই জানিয়েছে ইডন আর তাদের পরামর্শ দেন না। অ্যাপেলিসের একজন মুখপাত্র জানান, "তার (ইডনের) দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অ্যাপেলিসের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটে না।" তবে এ ব্যাপারে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।
জায়ার্কোর পরম নিষ্ঠা কাজে দেয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে নোভার্টিস ৩২৫ মিলিয়ন ডলারের আপফ্রন্ট পেমেন্টে কোম্পানিটি কিনে নেয়। এছাড়াও নোভার্টিসের ২০১৭ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে নির্দিষ্ট কিছু মাইলফলক অর্জিত হলে জায়ার্কোর আগের মালিকদের আরো ৯৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করবে। নোভার্টিস বাজি ধরেছিল জায়ার্কোর জেডপিএল৩৮৯ নামক ওষুধটির উপর, যেটির সম্ভাবনা ছিল "মাঝারি থেকে গুরুতর একজিমার প্রথম শ্রেণির মৌখিক চিকিৎসা" হয়ে ওঠার।
রয়টার্স এ তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি যে নোভার্টিসের জায়ার্কোকে কিনে নেয়া থেকে ইডন ব্যক্তিগতভাবে কত টাকা আয় করেছেন। তবে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে করা একটি টুইটে তিনি লেখেন, "কিছুটা বিস্ময়করই বটে, একটি বায়োটেক কোম্পানিকে জন্ম দিয়ে এবং সেটিকে বড় করে তুলে, অসংখ্য উচ্চ-বেতনের চাকরি সৃষ্টি করে, আমার পিএইচডি এবং বিশ্বব্যাপী বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে, আমি মিলিয়ন ডলার কামিয়েছি।।"
গত জুলাইয়ে, নোভার্টিস জানিয়েছে যে তারা জেডপিএল৩৮৯ এর ক্লিনিক্যাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম বন্ধ করে দিয়েছে, এবং তাদের মূল্যমান ৪৮৫ মিলিয়ন ডলার হ্রাস পেয়েছে। নোভার্টিসের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রাথমিক পর্যায়ে হতাশাজনক কার্যকারিতার তথ্য পাওয়ায় তারা প্রকল্পটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
"আমি খুব শীঘ্রই চলে যাব"
রয়টার্স একটি খসড়া রিভিউ করেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে যে এ বছরের শুরুতে ইডনের প্রাক্তন সহকর্মীরা একটি ব্যক্তিগত চিঠিতে নিজেদের উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন।
"গত কয়েক মাস ধরে কোভিড-১৯ এর ব্যাপারে আপনার মতামতের ব্যাপারে আমরা অবগত হয়েছি... যে একমুখী মানসিকতা, বৈজ্ঞানিক যথাযথতার অভাব, নিম্নমানের তথ্য-উপাত্তের পক্ষপাতদুষ্ট ব্যাখ্যা আপনি দিয়েছেন, সেগুলোর সঙ্গে যে মাইক ইডনকে আমরা এত শ্রদ্ধা করতাম এবং যার সঙ্গে কাজ করাকে উপভোগ করতাম, তার তিলমাত্র সাদৃশ্য নেই।"
"সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিপুল অনুসারী" এবং ''বন্ধ্যাত্ব বিষয়ে তার দাবি গোটা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে", সে কথা উল্লেখ করে দলটি লিখেছে, "আমরা খুবই চিন্তিত যে আপনি সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন।"
তবে ইডন চিঠিটি গ্রহণ করেছেন কি না তা রয়টার্স উদঘাটন করতে পারেনি।
৩ ফেব্রুয়ারি ইডনের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে তার তৎকালীন ৯১,০০০ অনুসারীর জন্য একটি বার্তা ছিল : "আমার আইডি থেকে সম্প্রতি একটি টুইট প্রদর্শিত হয়েছে, যেটি ছিল ভীষণ রকমের আপত্তিজনক। এর ফলে আমার অ্যাকাউন্ট লক হয়ে গিয়েছিল। আমি অবশ্যই সেটি মুছে দিয়েছি। আমি আপনাদের সবাইকে জানাতে চাই যে নিঃসন্দেহে আমি সেটি লিখিনি।" টুইটারের একজন মুখপাত্র অবশ্য এ ব্যাপারে মন্তব্য করে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
ইডন পরিষ্কার করে বলেননি সেই টুইটটি কী নিয়ে ছিল। তবে এর কিছু সময় পরই, কয়েকজন টুইটার ব্যবহারকারী এবং জেলো স্ট্রিট নামের একটি ব্লগ থেকে কিছু স্ক্রিনশট পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায়, এক বছর আগে ইডনের অ্যাকাউন্ট থেকে বেশ কিছু মুসলিম বিরোধী আপত্তিকর টুইট করা হয়েছিল। সেগুলোর মধ্যে কিছু আর্কাইভ ডট অর্গেও জমা রয়েছে।
এর পরদিন, ৪ ফেব্রুয়ারি, ইডন একটি টুইটে রহস্য করে লেখেন, "আমি খুব শীঘ্রই চলে যাব।"
দুইদিন বাদে তিনি টুইটার ছেড়ে চলে যান। তার অনুসণকারীদের অভ্যর্থনা জানানো হয় এই বার্তার মাধ্যমে : "এই অ্যাকাউন্টের কোনো অস্তিত্ব নেই।" তার লিংকডইন প্রোফাইলও সহসাই পালটে যায়। সেখানে এখন লেখা রয়েছে, তিনি "পরিপূর্ণ অবসরপ্রাপ্ত"।
টুইটারে ইডন যে ব্যবহার পেয়েছেন – অনেকে তার মতবাদকে ছাইপাঁশ ও বিপদজনক হিসেবে উপহাস করেছে – সেটিকে ক্লেয়ার ক্রেইগ নামক একজন প্যাথলজিস্ট তুলনা করেছেন প্রাচীন সমাজে ভিন্নমতাবলম্বীদের পুড়িয়ে মারার সাথে।
"এটিকে ডাইনি নিধন ছাড়া আর কোনোভাবে দেখা সম্ভব না," বলেন ক্রেইগ। প্রসঙ্গত, তিনিও লকডাউন এবং কোভিড-১৯ পরীক্ষার সমালোচনা করেছেন। "বিজ্ঞান সবসময়ই হলো কিছু ধারাবাহিক প্রশ্নের সমষ্টি, এবং সেসব প্রশ্নের পরীক্ষণ। যখন আমাদের প্রশ্নগুলো করতে দেয়া হয় না, তখন বিজ্ঞান হারিয়ে যায়।"
তিনি জানান, টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়ার পর তিনি ইডনের সাথে কথা বলেছেন। "এখন তিনি ভেবে দেখবেন, কীভাবে ভবিষ্যতের জন্য অবদান রাখা যায়।"
মূল: স্টিভ স্টেকলো, অ্যান্ড্রু ম্যাকাসকিল