কাক গণতন্ত্রী, মানুষের চেয়ে উত্তম প্রাণী
কাক কা কা বন্ধ করতে রাজি নয়
পৃথিবীর লক্ষ জীবজন্তুর মধ্যে কেবলমাত্র কাকের কথাই বলা হয়—কাক কাকের মাংস খায় না। একটি বিপন্ন কাককে ঘিরে কাকসমাজের যে উদ্বেগ, তা প্রতিনিয়ত আমরা দেখছি। কিন্তু একটি বিপন্ন শিশুর জন্য মানুষের তার পরিবারের বাইরে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা কদাচিৎ দেখা যায়।
কাকের মনুষ্য স্বভাবই আছে, খাবারের জন্য কাড়াকাড়ি মানুষের মতোই করে, কিন্তু ক্ষমতা দখলের জন্য কাক অভ্যুত্থান ঘটায় না, প্রতিদ্বন্দ্বীকে হত্যা করে না আবার দলনেতা ও তার পরিবারবর্গের তোষামোদে দিবারাত্রি মুখরও থাকে না।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ব্যাপকভিত্তিক গবেষণা প্রমাণ করেছে, ছোট মাথার প্রাণী (দুর্ভাগ্য কাকের, কেউ কেউ কাককে কুৎসিতও বলে থাকেন) কাক গণতান্ত্রিক চরিত্রের অধিকারী। গবেষকদের তত্ত্বাবধানে কর্নওয়াল এবং নরফোক কাউন্টির ৪০ হাজার কাকের ওপর সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়েছে। গবেষণালব্ধ ফলাফল মে ২০২২ 'কারেন্ট বায়োলজি' জার্নালে মুদ্রিত হয়েছে। বিবিসি জানাচ্ছে, গবেষক দলটি তাদের পর্যবেক্ষণের বিষয় নিশ্চিত হতে একাধিক পরীক্ষা করেছেন। বড় ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে কাকদের মধ্যে ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তারা বিভিন্ন অবস্থানে থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করে এবং সম্মত হলে একই ধরনের শব্দ করে সম্মতি জানায়; ক্রমেই শব্দের মাত্রা বাড়তে থাকে। গবেষকেরা রেকর্ডভুক্ত কাকের ডাকের শব্দ বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, ছয় মিনিটের মাথায় সকল কাক একই ধরনের শব্দ করে একসাথে উড়াল দেয়। নতুন বাসস্থানের সন্ধান কাকদের জন্য একটি বড় সিদ্ধান্ত। সবাই সম্মত হবার পরই কাকেরা তা বাস্তবায়ন করে।
তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় ভিন্ন ধরনের কোনো শব্দ হলে তাদের অভিনিবেশ বিঘ্নিত হয়। গবেষক অ্যালেক্স থর্নটন বললেন, সম্মত হওয়া মাত্রই আকাশ কালো পাখিতে ভরে গেল। অনেকটা কালো তুষারঝড়ের মতো। থর্নটন বলেছেন, শব্দ বিশ্লেষণে এটাই স্পষ্ট হয়েছে, উড়ে যাবার আগে তারা ভোট দিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। মানুষের বেলায় গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি কাকের গণতন্ত্র চেতনার মতো পরিচ্ছন্ন ও অর্থবহ নয়। মানুষ গণতন্ত্রের কথা বলে ভোট বাক্স ও ভোট কেন্দ্র দখল করে এবং ইচ্ছেমতো ফল ঘোষণা করে। মানুষের বেলায় গণতন্ত্র আর স্বৈরতন্ত্রের তফাৎ সামান্যই।
কাকদের মুক্তকণ্ঠে ডাকা, শত শত কাক জমা হওয়া এবং আবারও সজোরে ডাকা আমরাও লক্ষ করেছি। প্রস্তুতি, সম্মতি ও বাস্তবায়ন—কাকের বেলায় গণতান্ত্রিক ধাপগুলো অত্যন্ত স্পষ্ট। কাক এটা স্পষ্ট বোঝে যে দলবদ্ধ হয়ে থাকলে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কম থাকে এবং আক্রান্ত হলে প্রতিরোধ করা যায়। কাকের ছোট মস্তিষ্কে বিশেষ ধরনের নিউরনের আধিক্য তাদের গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন করে তোলে। মানুষের বড় মস্তিষ্কে কী এমন থাকছে, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, প্রতিষ্ঠান এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের মর্যাদাকে ভুলুণ্ঠিত করে!
কাক তার প্রতিবেশী কোনো কাকের মৃত্যুতে শেষকৃত্যে অংশগ্রহণ করে। কাক কতটা ব্যথিত হয়, সে পরিমাপ জানা না থাকলেও কোনো কোনো সমীক্ষায় দেখা গেছে, যদি একটি কাক কোথাও নিহত হয়ে থাকে, নিহত কাকের আশপাশে পর্যাপ্ত খাবার পড়ে থাকলেও অন্য কাক তা উপেক্ষা করে চলে যায়। আর মানুষের মৃত্যুর পর খাবারের ধুম পড়ে যায় আর শুরু হয় তার সম্পদ কুক্ষিগত করার লড়াই।
আনফরচুনেট বার্ড—হতভাগা কাক
পক্ষীকুলে এতটা বদনাম অন্য কোনো পাখি কামাতে পারেনি। চেহারাটা বিচ্ছিরি, পা দুটো নোংরা, গলার স্বর কর্কশ, নোংরা বর্জ্য ঘাটাঘাটি করে, দুর্ভাগ্যের প্রতীক আরও অনেক মন্দকথন কাক নিয়ে। এর জবাব দিলেন হেনরি ওয়ার্ড বিচার। তিনি বললেন, মানুষের যদি ডানা থাকত এবং কালো পালক ধারণ করতে পারত, তাহলে চালাক মানুষদের কিছুসংখ্যক দ্রুত কাক হয়ে যেত।
কাকস্নান মানে যেমন পূর্ণাঙ্গ গোসল নয় তেমনি কাকতথ্য মানেও কাক সম্পর্কে অপূর্ণাঙ্গ তথ্য।
কাক যে দুপেয়ে পাখি, এ তো সবারই জানা। জাতকের গল্পে কাকের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান আছে, কিন্তু সেখানে পা দুটোই। চীন, কোরিয়া ও জাপানের পুরাণ কাহিনিতে তিন পেয়ে কাকের দেখা যায়। জুতো পরা কাক পাওয়া যায় জাদুবাস্তব চিত্রকলায়। ১৯৪১ সালের ডিজনি চলচ্চিত্রও ডাম্বোতে চশমা পরা কাকের দেখা মিলেছে।
শিশু কাক চার সপ্তাহ পরই বাসা ছেড়ে স্বনির্ভর হয়ে যায় আর মানুষের কথা ভাবুন—মানুষ কাক ভূষণ্ডি হলেও (বুড়ো হতে হতে মরার সময় পেরিয়ে গেলেও) সহজে বাসা ছাড়তে চায় না।
কাকদের ডাক ধ্বনিভেদে প্রায় আড়াই শ রকমের। কাক মানুষের মতোই ডাকতে জানে, কিন্তু এমন ডাক ধ্বনিভেদে প্রায় আড়াই শ রকমের। কাক মানুষের মতো এমন হা-ভাতে বুভুক্ষু নয়। খাবার পেলে ঠেসে গলা পর্যন্ত ভরে খেয়ে বাকিটা ফেলে ঢেকুর তুলতে তুলতে কাক বাড়ি আসে না। কাক যতটা প্রয়োজন খেয়ে বাকিটা নিরাপদ স্থানে সঞ্চিত রাখে। খিদের সময় আবার খাবে। তাদের ফ্রিজ-ফ্রিজার, হটপট এসব না থাকলেও রোদ-বৃষ্টি-ঝড় থেকে এবং লুণ্ঠনকারী অন্য সব পাখির গ্রাস থেকে খাবারটা লুকিয়ে রাখতে জানে। পর্যবেক্ষকেরা লক্ষ করেছেন কাক নিজেদের খাবারের সুরক্ষা নিয়ে খুব সচেতন; সে জন্য মাঝে মাঝেই সঞ্চিত খাবারের জায়গা বদল করে। কোথায় রেখেছে, বেশ স্মরণও রাখতে পারে।
কাক যে হাতিয়ারের ব্যবহার জানে, সেই কাহিনি তো ইশপের গল্পেই রয়েছে। কলসির পানি যখন ঠোঁটে নাগাল পাচ্ছে না, তখন কিছুটা দূরে পড়ে থাকা নুড়ি পাথর একটা একটা করে তুলে এনে কলসিতে ফেলল, পানির উচ্চতা বেড়ে কাকের ঠোঁঠের নাগালে চলে এল। কাকের মতো এমন হাতিয়ার বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী মাত্র কটি—ভালুক, হাতি, অটার ইত্যাদি।
আগে উল্লেখ্য করেছি কাক কেবল হাতিয়ার ব্যবহার করতে জানে, তা-ই নয়; হাতিয়ার তৈরিতেও কাকের দক্ষতার পরিচয় মেলে। নিউ ক্যালিডোনিয়ান কাক লাঠি এনে এটাকে ফাঁদের মতো বানিয়ে পোকামাকড়ের দিকে এগিয়ে দেয় এবং লাঠিতে উঠে এলে টেনে শিকারকে সাবাড় করে। মৌলিক হাতিয়ার ব্যবহারে কাকের দক্ষতার একটি উদাহরণ দেওয়া যায়। বাদামের খোলস ভেঙে বাদামটা বের করার জন্য জাপানি কাক গাড়িকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। বাদামটা গাড়ির নিচে পড়লে খোলসটা ভেঙে যায় এবং তীক্ষèদৃষ্টিসম্পন্ন কাক যথারীতি তার লক্ষ্যবস্তু তুলে নেয়।
কাক গানের পাখি!
কাককে গানের পাখি বললে কোকিলভক্তরা চটে যাবেন, কাকের কোন গানটা সুপারহিট, তা-ও জানতে চাইবেন। কিন্তু বাস্তবিকই জীবতাত্ত্বিক গঠন অনুযায়ী কাক গানের পাখি, তবে কণ্ঠ ও স্বর প্রক্ষেপন প্রণালি জটিল; গান ও সুর বলতে আমরা যে ধরনের ধ্বনির সাথে একাত্মতা অনুভব করি, কাকেরটা তেমন নয়। কিন্তু তাই বলে কাককে গানের পাখি বলা যাবে না, এটাও যৌক্তিক নয়। কাক নিজ প্রজাতির আহ্বানে সাড়া দেয়, অন্য প্রজাতির প্রাণীর ডাকেও সাড়া দেয় বলে পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন। ক্ষুধার্ত কাকের স্বর আর সহিংস কাকের স্বর ভিন্ন।
কাকের চরিত্র
বাঙালি সংস্কৃতিতে চরিত্র স্থূল একটি শব্দ, নরনারীর সম্পর্কের বৈধতাবহিভূর্ত অপর কোনো নর কিংবা নারীর প্রতি আসক্তিই চরিত্রহীনতার প্রমাণ। পুরুষের তদ্রুপ চরিত্রহীনতার কথা ঘরে ঘরে, একালে নারীও একই প্রশ্নে খুব পিছিয়ে নেই।
মানুষের তুলনায় পুরুষ কাক রীতিমতো ঋষিপুরুষ। পুরুষ কাক সাধারণত একটি নারী কাক নিয়েই জীবন কাটিয়ে দেয়। কদাচিৎ দু-একটি স্খলনও লক্ষ করা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুই কাক দম্পতির বিচ্ছেদের কারণ। কাক অন্য প্রাণীকে অনুকরণ করতে পারে, এমনকি মানুষেরও অনুকরণ করে থাকে। আমেরিকান কাকের দ্বৈত-জীবনযাপনের নজির রয়েছে।
বুদ্ধিমত্তা, আইকিউ
কাক অত্যন্ত বুদ্ধিমান পাখি। পাখিদের মধ্যে একমাত্র তোতা ছাড়া আর সকলের চেয়ে কাকের ব্রেইন বড়ো। শরীরের সাথে মগজের তুলনা করলে কাক শিম্পাঞ্জির সমপর্যায়ের অর্থাৎ তুলনামূলক বিচারে মানুষ কাকের চেয়ে খুব বেশি এগিয়ে নেই। কোনো মানুষ তার প্রতি সদাচরণ করল আর কে করল আসদাচারণ, সে চেহারা বেশ মনে রাখতে পারে কাক। অসদাচরণকারীর বেলায় কাক প্রতিশোধ নিতেও ভুল করে না। তীব্র ঠোকর সঠিক মানুষকেই দেয়। ভ্যাঙ্কুবারের কাক ডাকপিয়নের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে দল বেঁধে আক্রমণ করে এবং কিছু সময়ের জন্য ডাকব্যবস্থা অচল হয়ে যায়।
কাক নির্ভীক—এমন একটা পরিচিতি কালো পাখিটি সম্পর্কে রয়েছে। কাকের চেয়ে ৯ গুণ বেশি ওজনের ঈগলকেও কাক তাড়া করতে পারে। তবুও কাক-মানুষ সম্পর্কটি সুবিধের নয়। সাধারণত কাকগুলো মানুষের হাতেই সবচেয়ে বেশি মারা পড়ে এবং জখমপ্রাপ্ত হয়।
কাক আবাসিক পাখি
কাক, টিয়া, ময়না কিংবা কবুতরের মতো পোষা পাখি নয় কিন্তু নিজ গুণ ও যোগ্যতায় কাক আবাসিক পাখি। কাক মাইগ্রেটরি বার্ড নয়—দেশান্তরী হবার প্রবণতা নেই। নিজের বাড়ি নিজেই তৈরি করে, সে বাড়ি ভেঙে গেলে কাছাকাছি কোথাও আবার বাড়ি নির্মাণ করে। কাক নিজের এবং নিজের পরবর্তী প্রজন্মের যে প্রজনন ক্ষেত্র, তার বাইরে যেতে আগ্রহী নয়। তবে শহুরে কাকের ব্রিডিং গ্রাউন্ড বা প্রজনন ক্ষেত্র গ্রামের প্রজনন ক্ষেত্রের একাংশ আর বাসা বানাবার যে স্থান তা বড়জোর এক-দশমাংশ। কাক গাছ, খুঁটি থেকে শুরু করে উঁচু মাটি, চাল—যেকোনো জায়গায় ঘর বানাতে পারে। স্ত্রী ও পুরুষ কাক উভয়ে মিলেই ঘর বানায়। সে বাসায় ডিম পাড়ে। প্রকৃতির ঝাড়ুদার হিসেবে পরিচিত কাকের খাবারের ঘাটতি তেমন পড়ে না—অন্তত হাজার পদের খাদ্য কাকের চেনাজানা পরিমণ্ডলে পাওয়া যায়। কাক সর্বভুক।
কাক অত্যন্ত সন্তানবৎসল। কাকের সংসারে অপেক্ষাকৃত বড় শিশুকাক ছোট শিশুকাকের লালনপালনে বাবা-মাকে সাহায্য করে থাকে। মানুষের আক্রমণের সম্ভাবনা আঁচ করলে কাক দ্রুত নিজের বাসস্থান গুটিয়ে দূরে সরে যায়, শিশুদের সাথে নেয়; অন্যান্য কাকের কাছেও সতর্কবার্তা পাঠায়। বুদ্ধিমান পাখি কাক অন্য কাকের মৃত্যুর ঘটনাকে নিজের ও পরিবারের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে গ্রহণ করে থাকে এবং খুব দ্রুত উড়ে চারপাশের বিপদ-সম্ভাবনাসমূহ শনাক্ত করে। তরুণ কাক যখন বাবা-মায়ের বাসা ছেড়ে আসে, শুরুতে কদিন মাটিতেই থাকে। ভালো করে উড়তে পারাটা শেখার পর স্থান পরিবর্তন করে। তবে বাবা-মা ও শিশুকাক একসাথে উড়ে খাবারের সন্ধানে যায়। দূষিত ও বিষাক্ত খাবার থেকে ভালোটা বেছে নেবার বিশেষ দক্ষতা কাকের রয়েছে। কাককে কোনো শিশু নিয়মিত খাবার দিলে সন্তুষ্ট কাক তার জন্যও উপহারসামগ্রী নিয়ে আসে, এর মধ্যে রয়েছে জং ধরা স্ক্রু, বোতাম, পেপার ক্লিপ ইত্যাদি।
কাকের সংখ্যা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে; তবে ইউরোপ ও এশিয়ায় ৪৩ থেকে ২০৪ বিলিয়ন। সংখ্যা বাড়ছেই। হাওয়াইয়ান কাক ও মারিয়ান কাককে বিপন্ন প্রজাতির বলে বিবেচনা করা হয়। একমাত্র অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া পৃথিবীর সব মহাদেশেই কাক আছে। স্টানফোর্ড মার্শমেলো এক্সপেরিমেন্টে কিছু শিশু ও কাককে একই পরীক্ষার আওতায় আনা হয়। শিশুদের একটি করে উপহার এবং কাককে একটি করে খাবার দিয়ে জানানো হয়—পনেরো মিনিট সবুর করতে পারলে দ্বিগুণ উপহার ও খাবার দেওয়া হবে। শিশুদের অনেকেই দ্বিগুণ উপহারের লোভে ধৈর্য ধরতে রাজি হলো, বেশ কটা কাকও ঠিক তাই করল।
কাকের চৌর্যবৃত্তি বিশেষ করে ডিম চুরি সব দেশে সবারই জানা। অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাক অন্যান্য পাখির চলাচল ও বাড়িঘর পর্যবেক্ষণ করে থাকে। ডিম পাড়ামাত্রই প্রথম সুযোগে কাক সেই ডিম চুরি করে নিয়ে আসে। কাককে সুযোগসন্ধানী পাখিও মনে করা হয়। অন্য প্রজাতির বাবা-পাখি বা মা-পাখি যখন তাদের সন্তানদের জন্য খাবার নিয়ে আসে, সুযোগ পেলেই ছো মেরে সেই খাবার এনে নিজের বাচ্চাকে দেয়।
কাকের অসর্তকতা!
কাকের ওড়াউড়ির কারণে ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণ প্রায়ই ঘটে।
কাকের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজনন ভূমি হচ্ছে জাপান। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে ১৪০০ ফাইবার অপটিক কেবল বিচ্ছিন্ন করার দায় কাকের। জাপানের বিভিন্ন শহরে কাকের কারণে ব্ল্যাক আউট হওয়া একসময় নিত্যকার ঘটনা হয়ে ওঠে।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি দল ছাত্রদের হ্যালোইন মুখোশ পরিয়ে কাকের সামনে হাজির করল। দুই ধরনের মুখোশ, এক ধরনের মুখোশে আদি গুহামানব, অন্য ধরনের মুখোশ সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনি। গুহামানবের মুখোশধারীরা কাককে ভয় দেখাল। বেশ কিছু কাল পর দুই ধরনের মুখোশধারী কাকের নজরে পড়লে কাক সম্মিলিতভাবে গুহামানব মুখোশধারীদের ওপর আক্রমণ চালাল, ডিক চেনিদের কেউ কিছু বলল না। পরীক্ষাটি যুগপৎ কাকের চেহারা চেনার স্মৃতিশক্তি এবং প্রতিশোধ স্পৃহা দুই-ই প্রমাণ করেছে।
- পাদটীকা: কাককে ভয় দেখাবার জন্য যে কাকতাড়ুয়া বা স্কেয়ারক্রো শস্যজমিনে স্থাপন করা হয়, তার প্রভাব অল্প সময় থাকে। কাক যখন বুঝে ফেলে এটার নড়াচড়ার শক্তি নেই, তখন থেকে আর কাকতাড়ুয়াতে পাত্তা দেয় না।