কেন এগোয়নি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট?
মিনিট, ঘণ্টা, দিন, মাস; এরপর বছর। দশক বা যুগের হিসাব কষারও সুযোগ আছে। সংখ্যায় ২০, প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে আরও দুই বছর। ২৬ জুন, টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ২০ বছর পূর্ণ হয়েছে বাংলাদেশের। ২০০০ সালের আজকের এই দিনে ক্রিকেটের রাজকীয় ফরম্যাটে খেলার সনদ পায় বাংলাদেশ।
১৮ পেরিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটেরও প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার কথা! কিন্তু হয়েছি কী? এই প্রশ্নের উত্তরটি অবধারিতভাবেই হতাশায় মোড়ানো। ২০ বছরে বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছে ১১৯টি। জয় এসেছে মাত্র ১৪টি ম্যাচে। বিপরীতে হার ৮৯টি ম্যাচে। ড্র ১৬টিতে, যার পেছনে বেশিরভাগ অবদান বৈরি আবহাওয়ার।
দুই দশকের পথচলায় অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে জয়ের সুখস্মৃতি থাকলেও ক্রিকেটের নবীনতম দেশ আফগানিস্তানের বিপক্ষে হেরেছে বাংলাদেশ। তাহলে কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট? সাদা পোশাকে কেন মেলেনি প্রত্যাশিত সাফল্য? টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ২০ বছর পূর্তিতে এসব নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের সাবেক পাঁচ অধিনায়ক।
আমিনুল ইসলাম বুলবুল: এই সফরটা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে। বিভিন্ন অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছে। একেক সময় একেক নাম ধারণ করেছে বাংলাদেশ। একেবারে নতুন দল, কখনও হারতো। তখন আমরা ইনিংস ব্যবধানে হারতাম। তখন বলা হতো আমরা তো নতুন দল। এক পর্যায়ে কথা উঠলো বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা দেওয়া ঠিক হয়েছিল কিনা। প্রথম টেস্টেই ৪০০ রান করে ধাক্কা দিয়েছিলাম, পরের টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ভালো খেলেছিলাম।
এরপর আমরা প্রতিদিন প্রতিকূল অবস্থায় সংগ্রাম করেছি। কখনই আমরা স্থির বা প্রতিষ্ঠিত টেস্ট দল হইনি। ২০ বছরেও আমরা প্রতিষ্ঠিত টেস্ট দল হতে পারিনি। এটা আমাদের জন্য চিন্তার বিষয়। আবার কিছু কিছু ম্যাচ, যেমন মুলতান টেস্ট, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফতুল্লা টেস্ট, প্রথম টেস্ট, আবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিতলাম; বেশ ভালো কিছু ম্যাচ খেলেছি। কিন্তু বেশিরভাগ ম্যাচেই আমরা দাঁড়াতে পারিনি। টেস্ট ম্যাচের মেজাজটাই এখনও রপ্ত করতে পারিনি।
২০ বছর পরে বলতে হচ্ছে আমাদের কোনো লক্ষ্য ছিল না। আমরা ২০ বছর পরে কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে চাই, সেই লক্ষ্য আমাদের ছিল না। সেটার ফলশ্রুতিতে আমরা এখনও কোথাও দাঁড়াতে পারিনি। এখনও আমরা কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আফগানিস্তানের বিপক্ষেও হারলাম। ভারত ও পাকিস্তানে গিয়ে হারলাম। একটা হারের বৃত্তের মধ্যেই আমরা আছি।
কয়েকটা ম্যাচ বাদে বেশিরভাগ ম্যাচেই আমরা ভালো খেলিনি। র্যাঙ্কিং, জয়-পরাজয়ের হিসাব; সবকিছু মিলিয়ে আমরা সফল হইনি টেস্ট ক্রিকেটে। প্রত্যাশিত জায়গায় আমরা যেতে পারিনি। আমাদের যে সামর্থ্য ছিল, আমাদের যে পর্যায়ের ক্রিকেটার ছিল, আমরা সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারিনি।
আমরা এখনও সন্দিহান আমাদের তিন ফরম্যাট নিয়ে। প্রায় একটা দলকেই আমরা তিন ফরম্যাটে খেলাই। তারপরও বলব আমরা ভালো কিছু ম্যাচ খেলেছি। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে জিতেছি। এমন ভালো কিছু জিনিস আছে। কিন্তু সব মিলিয়ে দেখলে র্যাঙ্কিংই বলে দেবে আমরা কেমন করেছি।
উন্নতি না করার পেছনে ঘরোয়া ক্রিকেটের দুর্বল অবকাঠামো প্রধান অন্তরায়। এখন ঘরোয়া ক্রিকেট দেখতে কোনো দর্শকই যায় না। আমরা বরিশালের দল গঠন করে দিই মিরপুর থেকেই। আবার চট্টগ্রামের দলও এভাবে গড়ি। এখনও অঞ্চলভিত্তিক ক্রিকেট সেন্টারগুলো গড়ে ওঠেনি। এগুলো হচ্ছে বহুমূখী প্রভাব।
যেহেতু অঞ্চলভিত্তিক দলগুলো আসে না, একটা নির্বাচিত দল দিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট চালাই, এভাবে কী হয়? তিনটা ভাগে বলব। প্রথম ভাগে ইতিবাচকভাবে বলতে চাই, যতগুলো ম্যাচ খেলেছি, বেশ কিছুবার আমরা ভালো দল হওয়ার লক্ষণ দেখিয়েছিলাম। আমরা ভালো কিছু টেস্ট ম্যাচ জিতেছি। র্যাঙ্কিং বলে আমরা কোথায় আছি।
দ্বিতীয়ত, ঘরোয়া ক্রিকেট অঞ্চলভিত্তিক দায়িত্ব নিয়ে যেভাবে দল গড়ার কথা ছিল, সেটা হয়নি। আর এ কারণে কোনো প্রতিযোগিতা নেই। তৃতীয়ত, টেস্ট ম্যাচ খেলার জন্য যে টেস্ট খেলোয়াড় তৈরি করতে হয়, আমরা সেই জায়গাতে কাজ করতে পারিনি।
নাঈমুর রহমান দুর্জয়: অবশ্যই অগ্রগতি। আমরা টেস্টে মোটামুটি ভালো করেছি। তবে আরও ভালো করা উচিত ছিল, এটা আমরা সবাই জানি। আরও ভালো করলে আরও ভালো লাগতো। এই ২০ বছরে আমাদের কিছু খেলোয়াড় বা তাদের ব্যক্তিগত কিছু পারফরম্যান্স আছে, সারা বিশ্বে চোখের পড়ার মতো। তবে র্যাঙ্কিংয়ে আরেকটু উপরে দেখতে পারলে আমার ভালো লাগতো।
প্রত্যাশিত জায়গাতে অবশ্যই আমরা পৌঁছাতে পারিনি। একটু পিছিয়ে আছি। আমরা মূলত ওয়ানডেকেন্দ্রীক দল। সবারই টেস্টের দিকে আরও মনোযোগী হতে হবে। খেলোয়াড়দের আগ্রহ বাড়াতে হবে ঘরোয়া লঙ্গার ভার্সনের দিকে। তেমনি অর্গানাইজারদেরও সহনশীলতার জায়গায় যেতে হবে।
বড় সমস্যা ছিল উইকেট নিয়ে। সবাই শুধু ফ্ল্যাট ব্যাটিং উইকেট চাই আমরা। কিন্তু লঙ্গার ভার্সনে স্পোর্টিং উইকেট লাগবে। সম্প্রতি স্পোর্টিং উইকেট চালু করা হয়েছে। ঘাসের একটা পরিমাণ ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। এসব চালু হয়েছে। তবে আরও আগে থেকে সবার আন্তরিকতা থাকলে হয়তো আরও উপরে যেতে পারতাম কাঠামোগত দিক থেকে।
অনেক সময়ই দেখা যায় আমরা জাতীয় দলের সেরা খেলোয়াড়দের পাই না লঙ্গার ভার্সনে। তাদেরও আন্তরিকতা বাড়াতে হবে। বাধ্যতামূলক করা থাকলেও সেটা হচ্ছে না। অনেকেরই ব্যক্তিগত এন্ডোর্সমেন্ট বা প্রয়োজনীয় সময় হিসেবে ঘরোয়া ক্রিকেটের এ সময়টাকে ব্যবহার করতে চায়। এটা একটা বড় প্রতিবন্ধকতা।
হাবিবুল বাশার: আমরা শুরু করেছিলাম শূন্য হাতে। প্রত্যাশিত ছিল আমরা প্রথম দিকে কঠিন অবস্থা পার করব। এ কথা সবাই জানি, বলাও হয়েছে অনেকবার। বাকি টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলো অনেক আগে থেকে টেস্ট খেলেছে। ১০০ বছর আগেও খেলেছে। আমাদের জন্য সব সময়ই কঠিন ছিল। শুরুতে আমরা কঠিন সময় পার করেছি, আবার আমরা নিজেদের আস্তে আস্তে গুছিয়েছিও অনেক।
এখন আমরা অনেক প্রতিযোগিতা করি। তবে এখনও আমরা টেস্ট ক্রিকেটে ধারাবাহিক হতে পারছি না। যেটা আসলে সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়। আমরা এখন ভালো টেস্ট দল, টেস্ট ম্যাচ জিতছি। বড় দলকেও হারিয়েছি। র্যাঙ্কিংয়ের উপরের দলকেও হারিয়েছি। একই সময়ে নিচের র্যাঙ্কিংয়ের দলের কাছেও হেরে গেছি।
২০ বছর পরও আমরা টেস্ট ক্রিকেটে ধারাবাহিক হতে পারছি না। এটাই সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়। ২০ বছর পরে আমাদের যতটুকু উন্নতি করা দরকার ছিল, আরও করতে পারতাম, সেটা হয়নি। তবে আমরা এখন ভালো টেস্ট দল। কিন্তু আবারও বলব আমরা ধারাবাহিক না।
প্রত্যাশার জায়গাতে একেবারেই যেতে পারিনি সেটা বলব না। এখন আমাদের টেস্টে বড় বড় সেঞ্চুরি হয়। সব সময়ই হয়। টেস্ট দল হিসেবে অবশ্যই আমরা এগিয়েছি। কিন্তু টেস্ট দল হিসেবে যে ধারাবাহিকতা দরকার, সেটা আসেনি। টেস্টে আমাদের পারফরম্যান্সের গ্রাফটা এখনও অনেক ওঠা-নামা করে। উন্নতির তো আসলে শেষ নেই। আরও উন্নতি করতে পারতাম আমরা।
আমাদের প্রত্যাশা কী ছিল, সেটাও বড় প্রশ্ন। কারণ আমরা ২০ বছরে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড বা ভারতের মতো টেস্ট দল হয়ে যাব, এটা ভাবা বোকামি। তারা অনেক আগে থেকে খেলছে। যারা ১০০ বছর খেলে এসেছে, ২০ বছরে আমরা তাদের কাছে চলে যাব, এটা আশা করা একটু বেশি। তবে কোনো সন্দেহ নেই যে আমাদের আরও উন্নতি করা উচিত ছিল। আমরা যেভাবে এগোচ্ছি, তাতে আমাদের আরও ধারাবাহিক হওয়া উচিত ছিল।
ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার ব্যাপারটি নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভর করে। যেকোনো দেশের টেস্ট খেলোয়াড় যারা জাতীয়ে দলে খেলে, তারা সারা বছর ব্যস্ত থাকে বলে প্রথম শ্রেণি খেলার সুযোগ পায় না। এটা সত্যি। এখন তো খেলাও অনেক বেশি। যারা টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি নিয়মিত খেলে, তাদের জন্য প্রথম বেশি খেলা খুব কঠিন।
তবে কেউ যদি তার উন্নতি করতে চায়, সে ব্যাটসসম্যান বা বোলার যেই হোক, তার প্রথম শ্রেণি খেলা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি খেলে টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতি করা সম্ভব নয়। ক্রিকেটকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিতে চাইলে প্রথম শ্রেণি বা লঙ্গার ভার্সন খেলতেই হবে।
খালেদ মাসুদ পাইলট: টেস্টে আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে আছি। অনেকেই বলে ২০ বছর যথেষ্ট সময় না, আরও সময় লাগবে। তবে তখনকার সময়ের সাথে এখনকার সময়ের অনেক পার্থক্য। ২০ বছরে তিনটা প্রজন্ম চলে গেছে। আকরাম ভাইদের প্রজন্ম ছিল, এরপর আমাদের প্রজন্ম। আমি, রফিক, বাশার এরা ছিলাম। মাঝে একটা প্রজন্ম ছিল মাশরাফিরা।
মাশরাফির তো শেষের দিকে, বাকি যারা আছে, সবকিছু মিলিয়ে আমি বলব আমরা উন্নতি করিনি। আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। টেস্টের দিকে আমাদের মনোযোগ খুবই কম। এটার জন্য শুধু খেলোয়োড়দের দোষ দিবো না। তারা অনেক পরিশ্রম করে। তবে আমরা অবকাঠামোগত দিক থেকে অনেক পিছিয়ে। যে কারণে আমরা টেস্টে ভালো করতে পারছি না।
টেস্টে আমরা ভালো জায়গায় নেই। হয়তো আমরা দেশে ভালো খেলেছি, কখনও কখনও বিদেশে ভালো খেলেছি। কিন্তু এটা ভালো অবস্থান নয়। ২০ বছরে আরও ভালো জায়গায় অবস্থান করা উচিত ছিল। ব্যক্তিগত ভালো স্কোর আছে, ভালো ভালো অর্জন আছে। ঘরের মাটিতে ধারাবাহিক কিছু জয় আছে। কিন্তু বিদেশে গিয়ে ওই রকম কিছু নেই।
বিদেশি দলগুলোর বিপক্ষে কৌশল করে স্পিন খেলাই। আবার ভাগ্যের ওপর নির্ভর করতে হয়, টসের ওপর নির্ভর করতে হয়। হয় মরব না হয় মারব, এমন ব্যাপার। স্পিন দিয়ে খেলাবেন, টস জিতে আগে ব্যাটিং করলে ভালো করবেন; এতে বোঝা যায় না আপনি কতটা ভালো খেলেন। সত্যিকারের উইকেটে খেলার জন্য আমরা কতটা প্রস্তুত হয়েছি, সেটা দেখলে বোঝা যাবে আমরা কোথায় গেছি। এটায় আমরা অনেক পিছিয়ে।
অবকাঠামোগত উন্নতি না হওয়ায় আমরা পিছিয়ে আছি। এ কারণেই আমরা টেস্টে উন্নতি করতে পারছি না। ক্রিকেটারদের দোষ দেখি না। পারিশ্রমিক তেমন থাকলে ক্রিকেটাররা অবশ্যই ঘরোয়া লঙ্গার ভার্সন খেলতো। খেললেই অনেক টাকা, এটা ভাবনায় কাজ করতো।
যেকোনো খেলোয়াড়ই এখন টি-টোয়েন্টি খেলতে চাইবে। কেউ টেস্ট খেলতে চাইবে না। কারণ অল্প খেলেই বেশি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু টেস্ট তো মর্যাদার খেলা, রাজার খেলা, সম্মানের খেলা। মুমিনুল যদি শুধু টেস্ট খেলে, টি-টোয়েন্টি থেকে যদি সরিয়ে রাখেন বা বিপিএল না খেলে, তাহলে ও ১০-১২ বছর বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করেও তেমন টাকা পাবে না। যেটা একটা ছেলে এক বছর টি-টোয়েন্টি খেলেই আয় করতে পারবে। তাহলে মুমিনুল কেন টেস্ট খেলোয়াড় হতে চাইবে।
টি-টোয়েন্টি খেলা বিনোদনের। কিন্তু আপনাকে বেশিরভাগ অর্থ ব্যয় করতে হবে সাদা পোশাকের পেছনে। ঘরোয়া ক্রিকেটের পারিশ্রমিকের বিষয়টি নিয়ে ভাবতেই হবে। আপনি যদি বিসিএল বা এনসিলের চারটি ম্যাচ খেলেন এক মাস ধরে, ৫০ হাজার টাকা করে মোট ২ লাখ টাকা পাবেন। সারা বছর কোটি কোটি টাকা আয় করা ক্রিকেটার এক মাসে কেন ২ লাখ টাকা আয় করবে। তখন কিন্তু খেলোয়াড়রা বিশ্রাম নেয়। এসব কারণেই আমরা টেস্ট ক্রিকেটে পিছিয়ে আছি। ঘরোয়া লঙ্গার ভার্সনের পারিশ্রমিক বাড়াতে হবে।
মোহাম্মদ আশরাফুল: টেস্টে আমরা এগোতে পারিনি। ওয়ানডেতে আমরা একটা পর্যায়ে চলে গেছি। টেস্টে ওইভাবে যেতে পারিনি সত্যি বলতে। প্রত্যাশিত জায়গায় আমরা যেতে পারিনি। র্যাঙ্কিংয়ে আমরা যদি এখন ছয়ে থাকতাম, তাহলে বলতাম একটা পর্যায়ে গিয়েছি। এখনও আমরা ৯ নম্বরে। এখনও আমরা নতুন টেস্ট খেলুড়ে দেশ আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারি। একটা খেলেছি, একটাই হেরেছি। টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের কিছুই হয়নি। আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে।
উন্নতি না করার পেছনে আমাদের অবকাঠামো অবশ্যই একটা বড় ব্যাপার। এর বাইরে আরও অনেক বিষয়ই আছে। আমরা ২০ বছরের মধ্যে প্রায় ৪ বছর কোনো টেস্টই খেলিনি। একবার ১৬ মাস, একবার ১৪ মাস, একবার ১১ মাস, একবার ৯ মাস আমরা টেস্ট ক্রিকেট খেলিনি।
২০ বছরে চার বছর আপনি টেস্ট ক্রিকেটই খেলেননি। এমন হলে আবারও শূন্য থেকে শুরু করতে হয়। একবার আমরা বিশ্বকাপের চিন্তা করে ১৪ মাস টেস্ট ক্রিকেট খেলিনি। সব মিলিয়ে পরিকল্পনার কারণেই টেস্টে আমাদের সেভাবে উন্নতি হয়নি।
আবার ২০ বছরে আমাদের টেস্ট খেলোয়াড় হয়ে গেছে ৯৬জন। ২০ বছরে এত খেলোয়াড়কে খেলোনোর ব্যাপারটা আমি ধাক্কা হিসেবে দেখি। দুটি-একটি টেস্ট খেলিয়ে অনেককে আর সুযোগ দেওয়া হয়নি। এর অর্থ হচ্ছে ভুল নির্বাচন ছিল।
ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো আমাদের ছিল না, এখন হচ্ছে। শেষ তিন-চার বছর উইকেট ভালো হচ্ছে। তবে প্রথম শ্রেণিতে টাকা-পয়সা বাড়ানো উচিত। পারিশ্রমিক বাড়ালে খেলার মান বাড়বে। যে টাকা দেওয়া হয়, তা দিয়ে চারদিনের ম্যাচ খেলা খুব কঠিন। এতে উন্নতি কম হয়। যেকোনো সেক্টরে পারিশ্রমিক উন্নত হলে উন্নতিটা ভালো হয়।
ঘরোয়ার এসব ব্যাপার উন্নতি করতে হবে। জাতীয় দলের টেস্ট ম্যাচের পারিশ্রমিক থেকে যদি প্রথম শ্রেণির ম্যাচের পারিশ্রমিকের তফাৎ বেশি থাকে, তাহলে বড় যে খেলোয়াড়রা, তারা খেলতে চাইবে না প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। তারা ভাববে কী দরকার আমার এটা খেলার। পারিশ্রমিক কাছাকাছি থাকলে তখন ওরা চিন্তা করবে, সময় থাকলে একটা প্রথম শেণির ম্যাচ খেলি।
আর সে একটা প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেললে তার খেলার উন্নতি হবে। সাথে যারা খেলবে, তাদের খেলাও উন্নতি হবে। এটা জায়গাটা নিয়ে সেভাবে ভাবা হয়নি। টেস্টে উন্নতি না করতে পারার পেছনে এটা একটা বড় কারণ।