বিশ্বকাপের আগে মাশরাফির ‘ক্লাস করে’ আশাবাদী তাসকিন
গতিতে তিনি দেশসেরা। ২২ গজে গতির ঝড় তুলতে বাংলাদেশ দলের সবার চেয়ে এগিয়ে তিনি। ফিটনেসে অবিশ্বাস্য পরিবর্তন আনাসহ লাইন-লেংন্থ মিলিয়ে আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে তার। এরপরও ঘরের মাঠেই উপেক্ষিত তাসকিন আহমেদ। পিছিয়ে কোথায় ডানহাতি এই পেসার? বাকি সবার মতো তাসকিনেরও তা জানা; স্লোয়ার বা কাটারে পারদর্শী নন তিনি।
ব্যাপারটি দীর্ঘদিন ধরেই ভাবাচ্ছিল বাংলাদেশ পেসারকে। উপায় খুঁজছিলেন বৈচিত্র্যময় বোলার হয়ে ওঠার। এই পথে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে প্রদর্শক মনে হয়েছে তাসকিনের। অনেকদিন ধরেই ওয়ানডের সাবেক অধিনায়কের কাছ থেকে কৌশল বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন তিনি। অবশেষ সেই দিন এলো। বৃহস্পতিবার মিরপুর স্টেডিয়ামে সোয়া এক ঘণ্টার মতো মাশরাফির 'ক্লাসে' সময় কাটালেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য শেষ সময়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকা তাসকিন।
গত বছরের মার্চের পর বাংলাদেশের হয়ে খেলা হয়নি মাশরাফির। অনুশীলন বা অন্য কোনো কাজে তাকে মাঠে আসতেই দেখা যায় না। এদিন মাশরাফিকে মিরপুরে দেখে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, তার মাঠে আসার কারণ কী! অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের মাঠে আসার কারণ জানতে বেশি দেরি হয়নি। কিছু সময় পরই তাসকিন জানান, স্লোয়ার ও কাটার ডেলিভারিতে তাকে বল ধরার কৌশল (গ্রিপ) শেখাতে মাঠে এসেছিলেন মাশরাফি।
এদিন মিরপুরের সেন্টার উইকেটে বোলিংয়ের খুঁটিনাটি নিয়ে তাসকিনের সঙ্গে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কাজ করেন মাশরাফি। কীভাবে অফ কাটার ডেলিভারি দিতে হবে, দৌড়ে এসে নিজেই সেটা করে দেখান মাশরাফি। এরপর বোলিং শুরু করেন তাসকিন। ব্যাটসম্যান ছিলেন নুরুল হাসান সোহান। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানকে বলে বলে কাটার করছিলেন তাসকিন।
স্টাম্পের সামনে ক্যাপ রেখে তাসকিনকে স্পট বোলিংয়ের অনুশীলন করার পরামর্শ দেন মাশরাফি। সাবেক অধিনায়কের কথা মতো বোলিং করতে থাকেন ডানহাতি এই পেসার। এই পরীক্ষায় ভালোভাবেই উতড়ে যান তাসকিন। উইকেটের সামনে রাখা ক্যাপের পাশ ঘেঁষে বল করতেই পারায় মাশরাফির বাহবাও মেলে তার। পাশেই দাঁড়িয়ে তাতে তালি দিতে থাকেন মাশরাফি।
অনুশীলন শেষে মাশরাফির সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে তাসকিন বলেন, 'ভাইয়াকে বলছিলাম একদিন সময় দেওয়ার জন্য। কারণ আমার পেস, সুইংয়ে উন্নতি হচ্ছে কিন্তু আমি স্লোয়ারের দিক থেকে একটু পেছানো। স্লোয়ার বল উন্নতি করতে চাই। ভাইয়াকে বলতাম, ভাই এসে কিছু গ্রিপ দেখালেন যে "একেক জনের একেক রকক অ্যাকশন হয়। এইগুলো একটু চেষ্টা করে দেখতে পার।" আমার কাছে ভালো লাগলো, কিছু কাটারের গ্রিপ দেখিয়েছেন। আশা করি এইগুলা প্রয়োগ করলে ফল পাব।'
'মূলত দুই-তিনটা গ্রিপ দেখিয়েছেন। আর বলেছেন, একসঙ্গে এত কিছু নিয়ে ত কাজ করা যাবে না। যেহেতু সামনেই অনেক খেলা। আপাতত কাটার চেষ্টা করতে বলেছেন। তো ওইটাই দেখালেন। বললেন "যদি ভাল লাগে এটা চালিয়ে যেতে পার। এটা আয়ত্তে এলে আরেকটা"।' যোগ করেন তাসকিন।
বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানকে বলা হয় কাটার মাস্টার। এই কাটার দিয়ে বিগত কয়েক বছরে সাফল্য পেয়েছেন মাশরাফিও। হাঁটুতে বারবার অস্ত্রোপচার হওয়ায় গতি কমিয়ে কাটারকেই প্রধান অস্ত্র বানিয়েছিলেন বাংলাদেশের সফলতম এই পেসার। তাসকিনকে এই ব্যাপারটিই আকৃষ্ট করেছে, তাই মাশরাফির দ্বারস্থ হন তিনি।
তাসকিন বলেন, 'মুস্তাফিজের মতো কাটার আমি পারব না। আমার পেস, সুইংয়ের সঙ্গে আগের থেকে ভালো কাটার যদি করতে পারি, তাহলে একটা অপশন বাড়বে। এটা আমার ভালো অস্ত্র হতে পারে। আমি কাটার আগেও করতাম। আমারটা একটু সোজা যেত, কম ঘুরত। স্লোয়ারটা একই অ্যাকশনে একটু পেস কমে গ্রিপ করা। সেটাই চেষ্টা করছি।'
ব্যস্ততার মাঝেও সময় দেওয়ায় মাশরাফিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাসকিন বলেন, 'ব্যস্ততার মাঝে মাশরাফি ভাই আমাকে সময় দিয়েছেন, এটা অনেক। আমার স্লোয়ার অন্যদের থেকে একটু দুর্বল। আজ উনি যে গ্রিপ দেখিয়েছেন এইগুলো আগের থেকে ভিন্ন। আমার শক্তি পেস, বাউন্স; এটার সঙ্গে স্লোয়ার যোগ হলে আরেকটা বিকল্প হতে পারে। মাশরাফি ভাই বলেছেন, "যদি ভাল লাগে তাহলে চেষ্টা করবে।" হয়তো একটু সময় লাগবে। যদি শিখতে পারি, আমার মনে হয় ভাল হবে।'