মিরপুরের সবই নতুন লাগছে মুমিনুলের
মিরপুরের সঙ্গে সখ্য দুই এক বছরের নয়। ২০১২ সালে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যাত্রা শুরু করা মুমিনুল হকের আরও আগে থেকেই এই আঙিনায় পদচারণা। সব মিলিয়ে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্রিকেটের এই পাড়ার পরিচিত মুখ মুমিনুল। কিন্তু মিরপুরে এসেই কিনা সবকিছু নতুন নতুন লাগছে বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়কের।
গত ১৯ জুলাই থেকে দেশের চারটি ভেন্যুতে শুরু হয় ক্রিকেটারদের একক অনুশীলন। ১০ জন ক্রিকেটার শুরু করলেও পরে সংখ্যাটা বাড়ে। ঈদের ছুটির পর শনিবার থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় দফার ব্যক্তিগত অনুশীলনে নাম লিখিয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার।
আগের সাতজনের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাদমান ইসলাম, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, তাইজুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম বিল্পব, আল আমিন হোসেনরা। মিরপুরে অনুশীলন শুরু করেছেন মুমিনুল হকও। শুরুতে ঝুঁকি দেখলেও দ্বিতীয় দফার ব্যক্তিগত অনুশীলনে অংশ নিতে আপত্তি জানাননি তিনি।
সর্বশেষ ১৬ মার্চ মিরপুরে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলেছেন মুমিনুল। এরপর আর মিরপুরে আসা হয়নি বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের। প্রায় ৫ মাস পর চেনা ভুবনে ফিরে স্বস্তির নিশ্বাসই ফেলছেন তিনি। সঙ্গে সবকিছু নতুন নতুনও মনে হচ্ছে মুমিনুলের কাছে।
শনিবার মিরপুরে এসে প্রথমে ইনডোরে ব্যাটিং করেন মুমিনুল। এরপর ঘণ্টা খানেকের মতো রানিং ও জিম করেন বাংলাদেশের এই ক্রিকেটার। অনুশীলন শেষে তিনি বলেন, 'অনেকদিন পর ক্রিকেটে ফিরতে পারছি, আলহামদুলিল্লাহ। খুব ভালো লাগছে। প্রথম দিকে আমার কাছে সব নতুন নতুন লাগছে।'
এ কারণেই মানিয়ে নিতে সময় লাগবে বলে মনে করেন মুমিনুল। বাঁহাতি টপ অর্ডার এই ব্যাটসম্যান বলেন, 'মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবে, হয়তো দুই-তিন দিন বা চার-পাঁচ দিন লেগে যাবে। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারব। অবশ্যই ভালো লাগছে শুরু করতে পেরেছি বলে।'
লকডাউনে বাইরে অনুশীলনের সুযোগ ছিল না। সবাই নিজের মতো করে বাসায় ফিটনেসের কাজ চালিয়ে গেছেন। এ ছাড়া নিজেদের মধ্যে নিয়মিত আলোচনা হয়েছে ক্রিকেটারদের। অনলাইনে বিসিবির বৈঠকেও অংশ নিয়েছেন ক্রিকেটাররা। এসব ইতিবাচক আলোচনা ভবিষ্যতে কাজে দেবে বলে বিশ্বাস মুমিনুলের।
বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক বলেন, 'লকডাউনের সময়ে ক্রিকেট নিয়ে অনেক বেশি চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ ছিল। সবাই ফিটনেস নিয়ে কাজ করছে। কেউ মানসিক ব্যাপার, কেউ কোচদের সাথে বাস্তবিক, কৌশলগত জিনিস নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছে। কীভাবে খেলায় উন্নতি করা যায়, কীভাবে দলগত ও ব্যক্তিগত উন্নতি করা যায়, এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব ইতিবাচক আলোচনা কাজে লাগাতে পারব বলে মনে করি।'
খেলার মধ্যে থাকলে এভাবে বিস্তর আলোচনার সুযোগ থাকে না। সেদিক থেকে সময়টা কাছে লেগেছে বলে মনে করেন মুমিনুল, 'যখন খেলার ভেতরে থাকি, এসব নিয়ে আলাপ আলোচনা করা যায় না, কঠিন হয়ে যায়। সুতরাং সময়টা আমাদের কাজে লেগেছে। ফিটনেস, মানসিক দিক স্কিল বা মাঠের বাইরে থেকে খেলা উন্নতি করার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।'
লকডাউনের সময় কাজে লাগলেও দীর্ঘদিন ক্রিকেট খেলতে না পেরে বাকিদের মতো অস্বস্তি কাজ করেছে মুমিনুলেরও। ক্রিকেটকে মিস করে জানিয়ে তিনি বলেন, 'চার-পাঁচ মাস বাইরে ছিলাম, অবশ্যই মিস করেছি ক্রিকেট। ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে ফিরেছে। দেখে অবশ্যই খারাপ লাগে, মিস করি। আমরাও আস্তে আস্তে ক্রিকেটে ফেরার চেষ্টা করছি। সামনে হয়তো আমাদের টেস্ট ম্যাচ আছে। এ কারণে আমরা খুব ভালো একটা প্রস্তুতি নিব। ভালো শুরু করতে পারব বলে আশা করি।'
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার আগে প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময়-সুযোগ পাচ্ছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এটাকে কাজে লাগাতে চান মুমিনুলরা, 'আমার কাছে মনে হয় যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার আগে পর্যাপ্ত প্রস্তুতির সুযোগ পাব। অনুশীলন, প্রস্তুতি ম্যাচ মিলিয়ে খুব ভালো একটা প্রস্তুতি হবে আশা করি। ওই প্রস্তুতি নিয়েই খুব ভালো একটা টেস্ট ম্যাচ শুরু করতে পারব।'
আগামী অক্টোবরে শ্রীলঙ্কা সফরে যেতে পারে বাংলাদেশ। বিসিবি ও শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের মধ্যে আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। সফর নিশ্চিত হলে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শ্রীলঙ্কা যাবে বাংলাদেশ। ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষে দুই সপ্তাহ অনুশীলনের পর লঙ্কানদের সঙ্গে ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এই সফরে তিনটি টেস্ট ও তিনটি টোয়েন্টি খেলার কথা রয়েছে দুই দলের।