যেভাবে সময় কাটছে দুই দেশসেরার
নিজ নিজ আঙিনায় দুজনই দেশসেরা। একজন গলফার, আরেকজন তীরন্দাজ (আর্চার)। সিদ্দিকুর রহমান ও রোমান সানা; এই দুই খেলোয়াড়ই বাংলাদেশকে বিভিন্ন সময় গর্ব করার উপলক্ষ এনে দিয়েছেন। তাদের স্বপ্ন আকাশছোঁয়া। সেই স্বপ্নেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সিদ্দিকুর-সানা।
তাদের স্বপ্নের পথে হঠাৎ-ই বাধা পড়েছে। করোনাভাইরাসের প্রকোপে আর সবার মতো থমকে গেছে তাদের জীবনও। স্বভাবতই ঘরবন্দি হয়ে আছেন দেশসেরা এই দুই খেলোয়াড়। অনুশীলন চালিয়ে নেবেন, সেটারও সুযোগ নেই।
পুরোটা সময় পরিবারকে দিচ্ছেন সরাসরি অলিম্পিকে জায়গা করে নেওয়া দেশসেরা আর্চার রোমান সানা। টুকটাক ফিটনেসের কাজ করার পাশাপাশি সানা নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন অসুস্থ মায়ের সেবায়। বাকিটা সময় মুভি দেখে ও ভাগ্নে-ভাতিজাদের সঙ্গে খেলে কাটিয়ে দিচ্ছেন তিনি। তেমন আগ্রহ না থাকলেও মাঝেমধ্যে লুডুও খেলছেন এশিয়া কাপ বিশ্ব র্যাঙ্কিং টুর্নামেন্টে রিকার্ভে স্বর্ণপদক জেতা সানা।
সিদ্দিকুরের আবার ঘরোয়া খেলায় মন নেই। গলফের সবুজ গালিচাই কেবল তার মনে ধরে। বাসায় বন্দি অবস্থায় তাই বেশিরভাগ সময় মুভি আর গলফের পুরনো খেলা দেখে কাটাচ্ছেন দেশসেরা এই গলফার। ফিটনেস ও মানসিক কিছু অনুশীলনও চালু রেখেছেন। তবে খাওয়া-দাওয়ার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন সিদ্দিকুর। নিয়ন্ত্রণ না থাকায় শুধু স্বাস্থ্যসম্মত খাবারই খাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।
প্রায় মাস খানেক ধরে ঘরবন্দি অবস্থায় কীভাবে সময় কাটছে, ফিটনেসের কাজ কীভাবে চালু রেখেছেন, কোন ধরনের মুভি পছন্দ, কেমন দাঁড়িয়েছে নতুন রুটিন; এসব নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন সিদ্দিকুর রহমান ও রোমান সানা।
সিদ্দিকুর রহমান
এখন আসলে রুটিনের ঠিক নেই। এখন আউটডোরে গিয়ে ওইরকম কিছু করার সুযোগ নেই। সেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তো ইনডোরেই যতটুকু সম্ভব, করছি। বিশেষ করে কীভাবে ফিটনেস ধরে রাখা যায়, সেটায় বেশি নজর দিচ্ছি। এটাই এখন মূল কাজ। ফিটনেস নিয়েই মূলত বেশি কাজ করছি।
টেকনিক নিয়েও ঘরে কাজ করা যায়। এসবও করছি। মানসিক কিছু কাজ থাকে আমাদের, যেটা আমি সাধারণত বাসাতেই করি। এটাই এখন চালিয়ে যাচ্ছি। সব মিলিয়ে ইনডোরেই সব অনুশীলন চলছে আর কি।
বাসায় তেমন কোনো খেলা হয় না। এই অভ্যাসটা নেই বললেই চলে। তবে প্রচুর মুভি দেখা হচ্ছে। অনুপ্রেরণামূলক, কমিডি মুভি দেখি। সত্যিকার কাহিনী অবলম্বনে যেসব মুভি নির্মিত হয়, এ সব বেশি দেখা হয়। এ ছাড়া অনুপ্রেরণা মেলে এমন সব মুভি দেখি। আমাদের দেশের কমিডি নাটকও দেখা হয়। গলফের বাইরে তেমন কোনো খেলা হয় না।
খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণে নেই সত্যি বলতে। তবে স্বাস্থ্যসম্মত খাওয়ার চেষ্টা করছি। এটাই বেশি খাওয়া হয়। কিন্তু পরিমাণটা আসলে বেশি হয়ে যাচ্ছে।
আগে খেলা দেখার সময়ই পেতাম না। নিজের খেলা নিয়েই বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হতো। তো এখন খেলা দেখতে পারছি। গলফের প্রচুর খেলা দেখি। মেজর টুর্নামেন্টগুলো দেখছি। এসব ইউটিউবে পাচ্ছি, সব দেখে নিচ্ছি। বড় বড় উইনিং মোমেন্টগুলো দেখি। এসব দেখতে ভালো লাগে।
রোমান সানা
সময়টা পরিবারের সঙ্গে কাটছে। পুরোটা সময় পরিবারকেই দিচ্ছি। আম্মু প্রায় সময়ই অসুস্থ থাকেন। এই সময়টায় আম্মুর খেদমত করতে পারছি। তো এটা আমার জন্যই ভালোই। আমার মনে হয় দীর্ঘ আট বছর পর পরিবারকে লম্বা সময় দিতে পারছি। ভাগ্নে, ভাতিজা, ভাই, ভাবী, আপু, নানু, সবাই আমরা এক সাথে আছি। তো আমার সময়টা অনেক ভালোই কাটছে। কারণ আমি সব সময় বাসার বাইরে থাকি। যারা সব সময় বাসায় থাকেন, তাদের জন্য সময়টা বিরক্তির হতে পারে। আমার প্রতিটা দিনই ভালো কাটছে।
পরিবারকে সময় দেওয়ার পাশাপাশি ফিটনেসের দিকে নজর রাখছি। ফিটনেস নিয়ে কোচের দেওয়া নির্দেশনা আমরা সবাই অনুসরণ করে যাচ্ছি। আমাদের একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে, সেখানে আমাদের সব ধরনের আপডেট পাঠানো হয়। কে কোথায় কী করছি, কীভাবে চলছি, স্যাররা প্রতিনিয়ত ফোন দিয়ে খবর নিচ্ছেন। তো সব মিলিয়ে সময়টা ভালোই কাটছে।
বাসায় তেমন কিছু খেলা হয় না। বড় ভাই খুব খেলেন, লুডু খেলেন। মাঝেমধ্যে অবশ্য আমিও খেলি। তবে সেটা নিয়মিত না। বাচ্চাদের নিয়েই আমার সময় কাটে। ওদের সাথেই খেলি সব সময়, মজা করি। সন্ধ্যার পর সবাই আসে। আমাদের বাসা পাশাপাশি। এ জন্য সমস্যা হয় না। অনেক মুভি দেখা হচ্ছে। তামিল মুভি আমার খুব পছন্দ।