‘মানসিক রোগী হয়ে থাকলে আর্চারির জন্যই হয়েছি’
তার গায়ে ছিল দেশসেরার সিল। আর্চারিতে বিশ্ব পর্যায়ে বাংলাদেশের পরিচিতি তার হাত ধরেই। ২০১৯ সালের বিশ্ব আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ পদক জিতে তারকা বনে যান রোমান সানা। বাংলাদেশের প্রথম আর্চার হিসেবে অলিম্পিকে সরাসরি কোয়ালিফাই করাসহ নানা পদক জিতে নিজের খ্যাতি বাড়িয়ে নেন আরও কয়েক গুণ। সেই রোমানই মাত্র ২৮ বছর বয়সে তীর-ধনুক তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চিঠি পাঠিয়ে আর্চারি ফেডারেশনকে জানিয়ে দিয়েছেন জাতীয় দল থেকে নিজের অবসরের সিদ্ধান্তের কথা।
তার অবসরের ঘোষণায় ক্রীড়াঙ্গনে ওঠে সমালোচনার ঝড়। প্রশ্ন ওঠে, হঠাৎ কেন রোমানের এই সিদ্ধান্ত? তার কাছ থেকে উত্তর জেনেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। তারকা এই আর্চার জানিয়েছেন হঠাৎ নয়, বিভিন্ন ঘটনার জেরে অনেক ভেবেচিন্তেই অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রধানতম কারণ সুযোগ-সুবিধা না থাকা, যেখানে আর্থিক ব্যাপারটাই সবচেয়ে বড় করে উপস্থাপন করেন তিনি। ফেডারেশনের দেওয়া পাঁচ হাজার আর আনসারের চাকরি থেকে পাওয়া ২৫ হাজার টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। এ ছাড়াও তার মনে আছে অনেক না পাওয়ার বেদনা, বঞ্চিত হওয়ার আক্ষেপ-হতাশা।
সম্প্রতি রোমানকে মানসিক রোগী বলে মন্তব্য করেছেন আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রাজিবউদ্দিন আহমেদ চপল, যা তার হতাশা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। টিবিএসকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে অবসরের কারণ, সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সম্ভাবনা, হঠাৎ জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া, আর্থিক বিষয়ে ফেডারেশন সম্পাদকের বলা 'মিথ্যা' বক্তব্য, ফেডারেশন থেকে পাওয়া সামান্য অর্থ, ব্ল্যাকমেইলের শিকার হওয়া, খেলার কারণে লেখাপড়া শেষ করতে না পারা, নিজের অনিয়ন্ত্রিত মেজাজসহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন রোমান।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড: শুরু থেকে শুনতে চাই। কী কারণে অবসরের সিদ্ধান্ত, প্রধানতম কারণ কোনটা?
রোমান সানা: চিঠিতে লিখেছিলাম, আমার ইনজুরি আছে, আগের মতো স্ট্রেস নিতে পারি না; এসব কারণ উল্লেখ করা আছে। কিন্তু মূল কারণ হচ্ছে সুযোগ-সুবিধা না থাকা। যা উল্লেখ করা হয়নি। কারণ দেখিয়ে এসে মন খুলে সব বলতে চেয়েছি। কারণ ওখানে থাকলে অনেক কথা বলা যায় না। যেকোনো ফেডারেশনে তত্ত্বাবধানে থাকলে ধরাবাধা নিয়ম থাকে। জাতীয় দলে কোনো বেতন নাই, এটা চিন্তা করা যায়। ক্রিকেট, ফুটবলের পর এতো অল্প সময়ে সাফল্যের কারণে আমরা পরিচিত পেয়েছি, অনেক পদক অর্জন করেছি। যেটা আসলে সামান্য কিছু নয়।
টিবিএস: অবসরের সিদ্ধান্তটা কি তাৎক্ষণিক নাকি ভেবেচিন্তে? বিভিন্ন ঘটনার ফল কিনা এই সিদ্ধান্ত?
রোমান: বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নিই। অনেক আগে থেকেই চিন্তা-ভাবনা করেছি। নিষিদ্ধ হই, ফিরে আবার খেলি; এরপর যখন বিবাহিত জীবনে ঢুকলাম, আসল বাস্তবতা সামনে আসতে শুরু করল। আগে সিঙ্গেল লাইফ ছিল, একভাবে চালিয়ে নেওয়া যেত। এখন পরিবার হয়েছে, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে হবে। আমার স্ত্রীর পুরো দায়িত্ব তো আমার। একজন পুরুষ হয়ে যদি স্ত্রীর পুরো দায়িত্ব বহন না করতে পারি, আমার বাবা-মাকেও দেখতে হবে; সব মিলিয়ে আমি হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। তো সব মিলিয়েই ভেবেচিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিই। আর্চারিতে আমার পারফরম্যান্সের কারণে এদিক-সেদিক থেকে আমি টাকা-পয়সা পেয়েছি। কিন্তু সেটা তো খরচ হয়ে গেছে। কেউ তো জমিয়ে রাখতে পারে না। মায়ের চিকিৎসার জন্য ভারতে গেছি কয়েকবার। জায়গা কিনেছি, ছোট একটা বাড়ি করেছি। আমরা এখন ঢাকাতে থাকি, আমার স্ত্রী লেখাপড়া করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।
টিবিএস: আলোচনা আছে, দল থেকে বাদ পড়ার কারণে আপনার এমন সিদ্ধান্ত..
রোমান: কোচ মার্টিন ইরাকে যাওয়ার দলটি নির্বাচন করে দিয়ে যান। নভেম্বরের ছুটি কাটিয়ে ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ যোগ দিই। জানুয়ারিতে চূড়ান্ত নির্বাচন হয়, মার্টিন তখন দল নির্বাচন করে জার্মানিতে ছুটিতে যান। দলে ছিলাম আমি, রুবেল, রামকৃষ্ণ আর সাগর। এই চারজন ছেলে আর মেয়েদের দল। কিন্তু হঠাৎ শুনলাম এই দল যাবে না, আমি বাদ। বিকেএসপি থেকে দল যাবে জাতীয় দলের হয়ে। জাতীয় দল ও বিকেএসপি মিলিয়ে, যারা বৃত্তিতে আছে আলিফ, রুবেল, দিয়ারা যাবে। যখন মেয়েদের দল হচ্ছে না, একজনকে নিয়ে গেল, সীমা আক্তার। সে কিন্তু বৃত্তিতে ছিল না, বিকেএসপির ছাত্রীও না। তাকে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমাকে নিতে পারলো না। এটায় আমার কষ্ট লাগে। এই ব্যাপারটা আমার অবসরের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে। কারণ দল নিয়ে কোচের সাথে অনেক কথা হয়েছিল। কোচ জানান, আমাদের দলের অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করার সুযোগ আছে। কোচ বলেন তুমি দলটাকে নেতৃত্ব দেবে। পারফরম্যান্সের কারণে দলে নেই বলতে তারা কী বোঝায়। র্যাঙ্কিংয়ে কম করেছি, নাকি কম কোথায়, একটা জায়গায় দেখিয়ে দিক। তারা বলছে আমি র্যাঙ্কিংটা দেই নাই। এটা দল চূড়ান্ত হওয়ার পরে এই র্যাঙ্কিং হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। দল কোথাও গেলে এক মাস আগে চূড়ান্ত হয়ে যায়। কে যাচ্ছে, তার ভিসা, ভিওসহ অনেক কিছু করতে হয়। যখন আমি এক মাস আগে জেনে গেছি কারা যাবে, তখন আর কী করার থাকে। এরপর অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে চলে আসি।
টিবিএস: কতোদিন আগে অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে ফেডারেশনকে চিঠি পাঠান? এরপর ফেডারেশন বা ফেডারেশন সংশ্লিষ্ট কারও সঙ্গে কথা হওয়া, কেউ ফেরার অনুরোধ বা পরামর্শ দেন?
রোমান: ফেব্রুয়ারির ৫-৬ তারিখের দিকে অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে ফেডারেশনকে চিঠি দিই। ব্যক্তিভাবে ডেকে যে মিটিং হবে, সেটা হয়নি। গেম নাকি ট্রায়াল হচ্ছিল, সেখানে যাওয়ার পর চপল স্যার বললেন, 'কীরে কী অবস্থা, মাথায় ভূত চেপেছে নাকি?' দেখা করতে বলেছিলেন, এতোটুকুই। ব্যক্তিভাবে কথা বলা বা ফোন দেওয়া, এমন কিছু ছিল না।
টিবিএস: কদিন আগে ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আপনার ২ ঘণ্টাব্যাপী মিটিং হয়। কী আলোচনা হলো, কোনো ফল এসেছে? সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসতে পারে?
রোমান: তারা সব সময় বলেছে নিয়ম মেনে ট্রায়াল দিয়ে গেলে সব সময়ই আমাকে দলে নেবে, সমস্যা নেই। কিন্তু আমার যে সমস্যা, যে সুযোগ সুবিধার কথা বলেছি, সেটা না পেলে আমি জাতীয় দলে খেলব না। এটা আমার সাফ কথা। আমি সাত-আট ঘণ্টা অনুশীলন করব, খেলব, সেটার জন্য আমার একটা টাকা বেতন নেই, কোনো সুযোগ সুবিধা নেই, এভাবে তো হয় না। এভাবে আমি আমার জীবন ধারণ করতে চাই না। আমি যে কথা বলেছি, এতে তো ফেডারেশনের কখনই খুশি হওয়ার কথা নয়। ফেডারেশন চায়, খেলোয়াড়রা সব সময় চুপ থাকবে, তাদের কথা মতো চলবে, তাদের কথা মতো উঠবে-বসবে, তাদের হাতের পুতুল হয়ে থাকবে। যেমন ইচ্ছা, সেভাবে করবে, এভাতে তো হয় না। আমরা অনেকে ডিফেন্সে বা অন্য কোথাও চাকরি করি। অনেকের চাকরি হারানোর ভয় থাকে, কিছু বলতে পারে না। আমি যা বলেছি, সত্য কথা। সবাই যাচাই-বাছাই করতে পারে।
টিবিএস: ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, আপনি মানুসিকভাবে সুস্থ নন। অন্যভাবে বললে আপনাকে মানসিক রোগী বলেছেন। আপনাকে মনোবিদ দেখাতে চান তিনি। এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?
রোমান: আপনার সঙ্গে কথা বলছি, কোনোভাবে কি আপনার মনে হয় আমি পাগল? তাহলে তো আমার পাগলা গারদে থাকা উচিত। আমাদের মনোবিদ রাখা হয়, অনেক খেলার দলেই থাকে। তাহলে সব খেলার খেলোয়াড়ই পাগল। কারও যদি বিশেষ চিকিৎসা লাগে, সে ব্যক্তিগতভাবে নেয়। তাই বলে তাকে মানসি রোগী বলবেন? যেমন আমার রাগটা বেশি। আমাকে নিষিদ্ধ করার পর আমার রাগ হয়, কারণ আমার রাগ বেশি। এটা স্বীকার করছি। স্যাররা তখন বললেন এটা করতে হবে, বিশ্ব আর্চারিতে জমা দিতে হবে, তোর সার্টিফিকেট দরকার; তাদের কথা মতো চলেছি আমি, মনোবিদ দেখিয়েছি। উনারা না বললে আমি কখনই দেখাতাম না। আমার সার্টিফিকেট দরকার, খেলা দরকার, ক্যারিয়ার ভালো করা দরকার; এ কারণে আমার মনোবিদের ক্লাস করতে হয়েছে। কিন্তু ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদকের এমন মন্তব্য খুবই অসম্মানজনক, এটা খুবই কষ্টদায়ক। একজন সুস্থ মানুষকে যদি তারা বলে মানসিক রোগী, তাহলে আমি কী বলবো, বুঝে উঠতে পারি না। আমি যে ডাক্তারের ক্লাস করেছি, তিনিও তো কখনও বলতে পারেনি আমি মানসিক রোগী। সমস্যা থাকলে সমাধান নিতে হবে। তাই বলে সবাই মানসিক রোগী? তাহলে যেসব কার্যক্রম হচ্ছে, সবাই তো সেই কাতারে পড়ে। আমার রাগ বেশি বলে 'অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট' নিয়ে কাজ করেছি। আমার উন্নতির জন্য এটা করেছি। এসব ক্লাস মানসিকভাবে শক্ত করে। আর্চারি মাইন্ড গেম, যতো শক্তি হবে, ততো ভালো করবেন। এই জন্য করেছি। উনাদের নির্দেশনাতেই করেছি। কিন্তু যখন নিষিদ্ধ করে, কারণ জানতে চাইলে উনারা বলেন, ওর রাগ কমানোর জন্য ওকে একজন ভালো চিকিৎসক দেখাতে হবে। ক্লাস করার পরে যখন উন্নতি হবে, মনোবিদ বলবেন, তখন ওর নিষেদাজ্ঞা আস্তে আস্তে তুলে দেওয়া হবে। সুন্দরভাবেই উনারা বলেছেন। কিন্তু আমার ফেডারেশনরই সাধারণ সম্পাদক বলেন আমি মানসিক রোগী।
টিবিএস: সাধারণ সম্পাদকের দাবি, তিনি আপনাকে ছেলের মতো দেখেন। কিন্তু অবসরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তার সঙ্গে কথা বলেননি আপনি। তার সঙ্গে আপনার ব্যক্তিগত কোনো দ্বন্দ্ব আছে?
রোমান: ছেলের মতো দেখলে এমন বলতে পারেন? উনার ছেলেকে পাগল বলতে পারবেন? সুযোগ-সুবিধা নিয়ে উনার সঙ্গে অনেক আগেই কথা হয়েছে আমার, এটা প্রকাশ হয়েছে পরে। আমি এসব নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বলে এসেছি, পত্রিকায় লেখা হয়েছে। ২০১৮-১৯ থেকে এসব নিয়ে বলে আসছি। এটা নিয়ে আম রা কজন খেলোয়াড় ক্যাম্পে বিদ্রোহও করেছি। এই সুযোগ-সুবিধার কারণেই আমার এমন সিদ্ধান্ত। এসব আজকের না, এই যুদ্ধ পাঁচ বছর ধরে চলছে, অনেক আগের দাবি। আমরা তিন হাজার টাকা পাই ভাতা, বেতন নেই আমাদের। এটা চালু করেছে ২০২৩ সালে, এর আগে পেতাম ১৫০০ টাকা করে। প্রতিদিন ৫০ টাকা। ২০২১ সালে আমরা বললাম, লেখালেখি হলো, এরপর ১৫০০ টাকা বাড়িয়ে তিন হাজার টাকা করা হয়। হুট করে কথা বলছি, বিদ্রোহ করছি; এমন নয়। আর উনার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোনো দ্বন্দ্ব নেই, কারও সঙ্গেই নেই।
টিবিএস: তার দাবি আপনাকে ইন্ধন দিয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলাচ্ছেন…
রোমান: এসব সম্পূর্ণ ধারণা করে বলা। আমি কথা বলছি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে। উনি আসলে আশেপাশের মানুষের কথা বেশি বিশ্বাস করেন। স্যারের আশেপাশের মানুষ উনার কান ভারি করেন, সবার সম্পর্কে জানানো হয় উনাকে। ইতিহাস সাক্ষী, ভালো খেলোয়াড়ে বিরুদ্ধে মানুষজন লেগেই থাকে। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোদের সমালোচনা করার মানুষেরও কিন্তু অভাব নেই। এতো কিছু করার পর তাদের সমালোচনা হচ্ছে। আমাকে দিয়ে কেউ কথা বলাচ্ছেন না, আমি আমার হয়েই আমার কথা বলছি। মানুষ বলবে আর আমি সেটা করব, সেটা হবে কেন। আমার কি বুদ্ধি, বিবেচনাবোধ নেই!
টিবিএস: উনার বক্তব্য অনুযায়ী উনি আপনার জন্য অনেক করেছেন। আনসারের ল্যান্স নায়েক পদটি নাকি উনিই পাইয়ে দিয়েছেন…
রোমান: কী বলবো… আসলে ২০১৯ সালে সাউথ এশিয়ান গেমস খেলতে যাই। আমাদের আনসারের ডিজি মহোদয় উপস্থিত ছিলেন। যখন আমি স্বর্ণপদক পেলাম, উনি খেলা দেখছিলেন। উনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, তুমি যদি পদক পাও, তোমার পদোন্নতি দেওয়া হবে। আমি স্বর্ণপদক পাওয়ার পর উনি ঘোষণা দেন যে আমার পদোন্নতি দেওয়া হবে।
টিবিএস: আপনার বিকল্প তৈরির প্রসঙ্গে সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, আপনি কাউকে উঠতে দিতেন না। মানসিক অত্যাচার করতেন…
রোমান: এমন কথা শুনলে খুবই খারাপ লাগে, খুবই রাগ হয়। একজন ভালো খেলোয়াড় কখনও এমন করতে পারে না। কোন জ্ঞান নিয়ে এমন কথা বলতে পারেন একজন মানুষ, কল্পনাও করতে পারি না। আমি কখনও ভাবিনি কখনও এমন কথার সম্মুখীন হতে হবে আমাকে। আমার এমন কোনো ইনস্ট্রুমেন্ট নেই যে এমন কোনো আর্চার ব্যবহার করেনি। দেশের একমাত্র স্পন্সরড আর্চারি আমিই। আলিফ, রুবেল, দিয়া; এমন কোনো ইন্সট্রুমেন্ট নেই যে ব্যবহার করেনি। বলেছে, সাথে সাথে এনে দিয়েছি। কোচ মার্টিন আমাকে কেন এতো ভালোবাসে! উনার কথা বাদ দিয়ে কোচের সঙ্গে কথা বলেন। উনারা তো মাঠে থাকেন না, মাসেও একবার আসেন কিনা সন্দেহ। উনাদের কান ভারী করা হয়। যখন গেম হয়, তখন আসেন। মানুষ যেভাবে আমার সম্পর্কে উনার কাছে বলেন, উনি সেভাবে জানছেন। আমার বিষয়ে আমার কোচ জানবে, তাহলে সেই কোচের এতো প্রিয় হলাম কীভাবে! আমি যদি কোনো খেলোয়াড়কে অত্যাচার করি, সে কখনও কোনো কোচের প্রিয় হতে পারে? পরিবারে ভুলত্রুটি হয়, আবার মিটে যায়। কিন্তু সেটাকে এভাবে দাঁড় করাবেন! এসব বোকামি। এ সমস্ত কথাবার্তা দেখলে প্রশ্ন জাগে, মানসিক রোগী কি আমি? তাহলে তো উনিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যান।
টিবিএস: সতীর্থের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ ছিল আপনার বিরুদ্ধে, যে কারণে আপনাকে নিষিদ্ধ করা হয়। এ ছাড়াও আপনাকে মদমেজাজী বলা হয়। করোনার আগে নারী আর্চার আপনার কারণে ক্যাম্প ছেড়ে যায়, এমন অভিযোগও আছে। ফেডারেশনের সঙ্গে দূরত্ব বা পারফরম্যান্সে ভাটা পড়ার পেছনে এসবকে কারণ হিসেবে মনে হয়?
রোমান: আমার দাবি এখন ভিন্ন। আমি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কথা বলছি। এই বিষয়টা চাপা দেওয়ার জন্য আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলোকে ইস্যু বানাচ্ছেন তারা। এটা খুবই অন্যায়, এটা খুবই খারাপ। যেটা চলে গেছে, সেটা ফিরে আসে কীভাবে। যেটার জন্য আমাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, শাস্তি দেওয়া হয়েছে, সেটা কেন আবার ফিরিয়ে আনবে! যেটর শাস্তি পেয়েছি, সেটা নিয়ে কীভাবে কথা হয়। এসব ফিরিয়ে আনলে আমি তাদের বিরুদ্ধে আপিল করব যে, এই জিনিসগুলো কেন বারবার তারা ফিরিয়ে আনছেন। আমি একটা ভুল করেছি, সেটার জন্য আমাকে শাস্তি দিয়েছেন। তাহলে এসব আলোচনা কেন! আমি আপিল করতে পারি যে, আমাকে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে। যেসব বললেন, এসব আমার ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলেনি। বরং আমি আমার ক্যারিয়ারে বেশি মনোযোগ দিয়েছিল বলেই এসব হয়েছে। আমার কাছে সবকিছুর উর্ধ্বে আমার পারফরম্যান্স। যে মেয়েদের কথা বলা হচ্ছে, তাদের কারণে আমার পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়ায় আমি আমার জীবন থেকে তাদের সরিয়েছি। দেখেছি এরা বলে এক কথা, করে আরেকটা। তখন কেউ জানতে চায়নি রোমান কেন এমন করছে। সে চলে যাওয়ার পরে আমি অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করেছি, এশিয়া কাপে স্বর্ণ জিতেছি, এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে পদক পেয়েছি। এটা নিয়ে তো তারা কথা বলে না! তারা এখন নানা ইস্যু নিয়ে আসছে, যা ব্যক্তিগত ব্যাপার। লজ্জা পাওয়া উচিত তাদের, আর কিছু পাচ্ছেন না বলে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আসছেন কেন? আমি আর্চারি থেকে সম্মান কামিয়েছি, আবার আর্চাররির জন্যই সব খুইয়েছি। আমি তাকে বলেছি যে স্যার, আমি মানসিক রোগী হলে এই আর্চারির জন্যই হয়েছি। জীবন এমনি চলে যেত, এতোকিছু নিয়ে চিন্তা করা লাগতো না।
টিবিএস: মাসে তিন হাজার টাকা পান ফেডারেশন থেকে, বিবাহিত হলে বাড়তি দুই হাজার। আর্চারি থেকে আয় এই পাঁচ হাজারই? টুর্নামেন্ট জিতলে বা পদক পেলে আর্থিক যোগ ছিল?
রোমান: সীমিত পুরস্কার ছিল। এশিয়া কাপে ব্যক্তিগত ইভেন্টে স্বর্ণ জেতায় ৩০ হাজার টাকা পাই। এটা চালু হয়েছে ২০১৯ সালে, শুধু এই বছরই পেয়েছি। এর আগে কিন্তু কিছুই ছিল না। আমরা বলার পরে র্যাঙ্কিং রীতি করলেন কোচ। এক ও দুই যারা হবে, তাদের সাত ও পাঁচ হাজার টাকা করে বোনাস দেওয়া হবে। এবং বিভিন্ন টুর্নামেন্টে পদক পেলে ক্যাটাগরি অনুযায়ী পুরস্কার দেওয়া হবে। বিশ্বকাপে স্বর্ণ পেলে এক লাখ টাকা। বিশ্বকাপে জিতলেও সামান্য এক লাখ, চিন্তা করা যায়! যেখানে বিশ্বকাপে আমরা কখনও পদকই পাই না। স্বর্ণ পদকে যদি ২০-৩০ হাজার টাকা যদি দেয়, তাহলে কীভাবে। তাও তো এটা আগে পেতামই না। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বর্ণ পেলাম, অলিম্পিকে রৌপ্য পদকজয়ীকে হারিয়ে, ২২টি দেশ অংশ নেয় ওই টুর্নামেন্টে। এরপরও ফেডারেশন বা অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন থেকে কোনো টাকা পাইনি। চপল স্যার বলেন, আমাকে নাকি এক হাজার ইউরো আমাকে দিয়েছেন। আজও যা পাইনি। শুধু ওই ছবিতেই এক হাজার ইউরো তার ফোনে আছে, আমারও ফোনে আছে। ওভাবেই আছে, কিন্তু কোনোদিন হাতে পাইনি।
টিবিএস: সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, তিন হাজার টাকা পাওয়ার ব্যাপারটি সত্য নয়। উনার কাছ থেকেই আপনি লাখ টাকা নিয়েছেন। স্বর্ণ জিতলে দেওয়া এক হাজার ইউরো দিতেন। এসবের প্রমাণ আছে উনার কাছে…
রোমান: আমাদের খেলোয়াড়রা আছেন, আমার সতীর্থরা আছে, তাদের কাছ থেকে শুনুন। তার কথা না শুনে এদের কাছ থেকে শুনুন। আমি যদি প্রতিটা কথার প্রমাণ না দিতে পারি, আমি রোমান সানাকে যে শাস্তি দেবে, মাথা পেতে নিবো। আমি তো একা খেলতে যাই না, আমার সাথে তখন সজিব ছিল, মিলন ভাই ছিলেন, জিয়া ভাই ছিলেন। তো এসব কথা সত্য নয়। উনি যতোগুলো কথা বলেছেন, একটা সত্যি কথা বললেও হতো। আমাকে তিনি একবার ২০ হাজার ও আরেকবার ১০ টাকা দিয়েছিলেন। আম্মার চিকিৎসার জন্য লাগতো, তখন আমি নিয়েছিলাম। আমার মনে না থাকতে পারে, হয়তো ৫০-৬০ হাজার দিয়ে থাকতে পারেন। ধরলাম লাখ টাকাই দিয়েছেন, কিন্তু সেটা আমার ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে।
টিবিএস: তাহলে ফেডারেশন থেকে পাঁচ হাজার আর আনসারের বেতন ২৫ হাজার টাকা, এটা দিয়ে কতোটা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-যাপন সম্ভব…
রোমান: সম্ভব না বলেই এমন বলছি। এই জন্যই আমি জাতীয় দল ছেড়ে এসেছি। তারা তাদের মতো করবে, কারও কোনো অভিযোগ থাকতে পারবে না। যারা তিন বেলা খেতে পারে না, তাদের ধরে নিয়ে আসবে, প্রশিক্ষণ দেবে, তিন বেলা খাওয়া দেবে, তাদের কোনো চাহিদা থাকবে না। এমন খেলোয়াড় নিয়ে আর্চারি। আর্চারিকে এতো ভালোবেসেছি, লেখাপড়াটাও শেষ করিনি। আমার জিদ ছিল অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করব, অলিম্পিকে খেলতে যাবো, সেরা দশ আর্চারের একজন হবো; এভাবে আমি লক্ষ্য নিয়ে আমি এগিয়েছি। এর অনেক কিছু আমি অর্জন করেছি।
টিবিএস: ফেডারেশনের টাকা থাকার পরও দেয় না, নাকি অবস্থার কারণে দিতে পারে না?
রোমান: আগে তো আমাদের পর্যাপ্ত স্পন্সর ছিল না। দিতে পারতো না, খেলতে যেতে পারতাম না। কিন্তু তীর আসার পরে আমার তো মনে হয় না এমন হওয়ার কথা। তীর অনেক বড় কোম্পানি, যথেষ্ট পরিমান টাকা দেয়। সেখান থেকে ১০-২০ শতাংশও যদি আমরা খেলোয়াড়ের পেছনে না খরচ করতে পারি, তাহলে কীভাবে। আপনি খাওয়া, যাতায়াতের খরচ দেখালেই তো হবে না। তাদের আর্থিক যে সহায়তা দরকার, সেটা তো তাকে দিতে হবে। খেলে যদি আর্থিক সাপোর্ট না পাই, তাহলে কী হবে খেলে?
টিবিএস: ক্রিকেট, ফুটবলের মতো নয় আর্ডারি ফেডারেশন। এই ফেডারেশনের আয় কেমন এবং তা কোথায় ব্যয় করা হয়?
রোমান: আমাদের সঙ্গে তীর আসে, আসার পর কিছুটা সুযোগ-সুবিধা পেয়েছিলাম। ২০১৮ সালে তারা আসে, পরের বছর আমরা বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা পাই। এটা যদি চলমান হতো, তাহলে কিন্তু আমাদের এই আবদারের কথা আমরা কখনই বলতাম না। করোনা আসার পর সব বন্ধ হয়ে গেল। ২০২১ সাল গেল, ২০২২ সালে এসে আমাদের তিন হাজার টাকা করা হলো। আমি তীরের শুভেচ্ছাদূত ছিলাম এক বছর, ২০১৯ সালে। আমাকে পাঁচ লাখ টাকা দেয়। তারপর আমাকে বাদ দিয়ে দিল। আমি বুঝলাম না কেন। ফল করে যাচ্ছিলাম, তারপরও বাদ দেওয়া হয়। প্রতিনিয়ত আমার সঙ্গে এমন করা হয়েছে, আমি অবাক হয়ে গেছি। আমি ফল দেওয়ার পরও কেন সবকিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছি, এটা আমি বুঝে উঠতে পারিনি।
টিবিএস: ক্রিকেটার, ফুটবলাররা স্পন্সর পান, আপনি দেশসেরা আর্চার হয়েও তেমন কোনো স্পন্সর পাননি। এটার কী কারণ মনে করেন? কিংবা আপনাকে কেন স্পন্সর করবে, আপনার ব্যাখ্যা কী?
রোমান: আমি মনে করি অনেকের এগিয়ে আসা উচিত। জানি না কেন আসে না। আমাদের গেমটা ক্রিকেট ফুটবলের মতো অতোটা জনপ্রিয় নয়, এ জন্য হয়তো আসতে চায় না কেউ। তারপরও আমরা একটা জাপানের কোম্পানি পেয়েছিলাম, আমাকে স্পন্সর করার জন্য রাজি হয়েছিল। নিষেধাজ্ঞার কারণে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। ওটা আমার বিরাট ক্ষতি। ওই কোম্পানি পেছনে মার্টিন এবং আমি এক বছর দৌড়াই। মুক্তিযোদ্ধার জাপানিস একজন ফুটবলার আমাকে এটা ম্যানেজ করে দেয়। আমি এবয় কোচ দিলে তাদের গুলশানের অফিস ঘুরে আসি, ২১ তারিখে আমার চুক্তি স্বাক্ষর ছিল। ১৫ তারিখে আমাকে নিষিদ্ধ করা হলো, এরপর আর সেটা হয়নি। অন্যান্য স্পন্সর চলে যায়, আমার সব শেষ হয়ে যায়।
টিবিএস: আপনার ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন কোনটি। পাশাপাশি অন্যান্য সাফল্য মিলিয়ে আপনাকে ঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে?
রোমান: আমার প্রথম আন্তর্জাতিক স্বর্ণ পদক, যেটা ২০১৪ সালে এশিয়া কাপে ব্যক্তিগত ইভেন্টে পেয়েছিলাম, ওটা আমার সেরা অর্জন। ওটাই আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। ওখান থেকে আমার গতি বেড়েছে এবং আমি লক্ষ্য ঠিক করি আমি অলিম্পিক খেলতে যাবো। এরপর অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করি বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম ক্রীড়াবিদ হিসেবে। এ ছাড়া সাউথ এশিয়ান গেমসে তিনটি স্বর্ণ, আমাদের দলের ১০টা স্বর্ণ, এশিয়া কাপে স্বর্ণ; সব মিলিয়ে আমার ২৬টি আন্তির্জাতিক পদক আছে। ১৪টা বছর খেললাম, কিন্তু এখনও খুবই সামান্য সম্মানী পাই। আমাদের ফেডারেশন যদি মনে করে, খেলোয়াড়রা দাবি করছে, তাদের দেওয়া উচিত। আমাদের এমন একটা লক্ষ্য যে, পাঁচ বছরে পদক নিয়ে আসব, এতো টাকা ব্যয় হবে, আমাদের এতো টাকা দেন। প্রধানমন্ত্রী হয়তো দেবেন, তিনি ক্রীড়া বান্ধব। কারণ উনি যেভাবে ক্রীড়া ভালোবাসেন, অন্য কেউ এভাবে ভালোবেসেছেন কেউ আগে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমি দেখা করে এসেছি। সেখানে আমি সম্মানজনক কোনো আর্থিক পুরস্কার পাইনি। আম্মার চিকিৎসার জন্য ৫ লক্ষ্য পেয়েছিলাম শুধু। আমি ভেবেছিলাম হয়তো অনেক কিছু হয়তো পাব। আমি কথা বলতে গিয়েও পারিনি। আমাকে সবকিছু থেকে আটকানো হয়েছিল। আগে থেকেই আমাকে বলা হয়, 'কথা বলবি না, চুপ করে থাকবি, মানুষের মতো কাঁদবি না।' তখন ভয় পেতাম। কিন্তু এসব কথা শুনতে শুনতে আমার ধৈর্য শেষ। বাধ্য হয়ে এখন আমাকে বলতেই হয়। এখন কিছু পেতে হলে আমাকে চেয়ে নিতে হবে। না হলে আমাকে কেউ তো দেবে না। যেমন রাসের স্যার, আমাদের সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, 'ও তো কিছু চায় না, বলে না।' আমার যতটুুকু চাওয়ার বলেছি। অন্য খেলোয়াড়রা উনার অফিসে যেতেন, বারবার দেখা করেছেন; কিন্তু এসব করতে আমাকে বারবার নিষেধ করা হতো। ধৈর্য ধরতে বলা হয়েছে আমাকে। ধৈর্য ধরতে ধরতে ধৈর্যহারা হয়ে গেছি, এই এখন আমি চাচ্ছি যে, আমাকে দেন। আজ যদি আমি ভারত বা অন্য দেশের হতাম, আমার কোনো কিছুর অভাব থাকতো না। আমার কাছে সব কিছু চলে আসতো। অন্য কথা, ফল করলে সব তোমার কাছে চলে আসবে। চাকরি, স্পন্সর, টাকা-পয়সার চিন্তা করতে হয় না। ফল করো, সব চলে আসবে। কিন্তু আমরা ফল আনার পরও আমাদের কাছে আসে না। আমরা হাতে-পায়ে ধরেও পাচ্ছি না।
টিবিএস: সরকার থেকে জমি, ফ্ল্যাট পাননি। আপনার চেয়ে কম সাফল্য পেয়েও অন্য অ্যাথলেট পেয়েছেন। দুর্ভাগা মনেহয়?
রোমান: না, কিছু পাইনি। অনেক বেশি দুর্ভাগা মনে হয় যে, পেলাম না বা আমাকে দিল না। এই যে চপল স্যার সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমি কোটি টাকা আয় করেছি, বাড়ি করেছি। আমি বলি, স্যার আপনি কি কোটি দিয়েছিলেন আমাকে!
টিবিএস: এটা নিয়ে সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, আর্চারি থেকে কিছু না পেলে ৫০-৫৫ লাখ টাকা খরচ করে কিভাবে খুলনায় ৫ তলা বাড়ি করেছেন।
রোমান: আমি সবাইকেই বলি, আপনারা আমার বাড়িতে গিয়ে দেখে আসেন। আমি চাই ওখানে গিয়ে দেখে অন্যরাই স্যারের সব কথার জবাব দিয়ে দিক, আমি আমার খুলনার বাড়ি ঠিকানা দিবো সবাইকে। গিয়ে দেখে আসেন আমার পাঁচতলা বাড়ি নাকি এক তলা। বাড়ি এখনও অর্ধেকই হয়নি। টাকা নেই, চার বছর ধরে ওভাবেই পড়ে আছে। আমার বাবা, মা, ভাইয়ের অ্যাকাউন্টও দেব, সবাই দেখেন আমার কতো টাকা জমা আছে। এর বাইরেও বাকি সব দেখাব, এরপর সবাই বিবেচনা করবে। তাহলেই সবাই বুঝে যাবে, উনি মিথ্যা নাকি সত্য বলেন।
টিবিএস: এখন কী করার পরিকল্পনা? ফেডারেশন থেকে জানানো হয়েছে, আপনি ব্যবসা করার কথা জানিয়েছেন তাদের।
রোমান: চাকরি করছি, করব। ঘরোয়া টুর্নামেন্ট খেলে যাব। আনসারের চাকরিতে যেহেতু আছি, আমাকে জাতীয় চ্যাম্পিয়শিপ খেলতেই হবে। পাশাপাশি দেখি অন্য কোনো কিছু করা যায় কিনা। এখনও ঠিক করি, তবে কিছু করার ইচ্ছা আছে। ব্যবসা করার কথা না শুধু, রিকশা চালানোর কথাও বলেছি। ব্যবসা করার পরিকল্পনা আছে। কিছু তো একটা করতেই হবে। জাতীয় দলে আমাকে সাত-আট ঘণ্টা অনুশীলন করতে হতো, আনসারে এখানে আমি আমার ইচ্ছা মতো করি। নিয়মের মধ্যে থাকার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ইচ্ছা মতো অনুশীলন করতে পারি, স্যাররা আছেন, সবাই সমর্থন দেন।